২৭ এপ্রিল ছিল বাংলার মহান নেতা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম দিকপাল, বরিশালের কৃতি সন্তান শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী। অথচ অনেকটা নীরবে-নিভৃতে কেটে গেল দিনটি। নামকোআস্তে দায়সারা গোছের দু একটি অনুষ্ঠান ছাড়া এই মহান নেতার স্মরণে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন দৃষ্টিগোচর হয়নি। এমনকি আমাদের গণমাধ্যমসমূহেও তাকে নিয়ে ন্যূনতম আলোচনা আয়োজনের কোন ঘটা দেখা যায়নি। অথচ এই মহান নেতাকে ভুলে যাওয়া আমাদের অস্তিত্বকে ভুলে যাওয়ার সমান।
১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশালের রাজাপুর থানায় মাতুলালয়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জন্ম। বরিশাল জেলা স্কুলে পরবর্তীতে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি এমএ পাস করেন। তিনি ছিলেন বাংলার ষষ্ঠ মুসলিম গ্রাজুয়েট। আইন শাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দিয়ে স্যার আশুতোষ মুখার্জির সঙ্গে শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করেন। পরে বরিশাল আইনজীবী সমিতিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ছিলেন।
তিনি নবাব স্যার সলিমুল্লাহ নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের যুব কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯০৬ সালে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে তিনি নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুর এর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির যুগ্ম স¤পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সম্মেলনে ভারতীয় মুসলমানদের নিজস্ব রাজনৈতিক ‘সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গের পর তিনি পূর্ব পূর্ব বঙ্গের গভর্নরের অনুরোধে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসডিও থাকাকালীন তিনি সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশার সাথে পুনরায় স¤পৃক্ত হোন। ১৯১২ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিম লীগে যোগ দেন।
১৯১৯ সালে তিনি সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উপমহাদেশের এমন একজন নেতা যিনি একাধারে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেসের একই সঙ্গে দুই দলের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪০ সালে তিনি মুসলিম লীগের লাহোর কনফারেন্সে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন ।যার ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য উপমহাদেশে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। তিনি ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মুসলিম চেয়ারম্যান। তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে তিনি ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সরোয়ারদিকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। বিজয়ী হয়ে শেরে বাংলা ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন এবং সবশেষে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। আমাদের জাতিসত্তার ভিত্তি যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের অন্যতম ছিলেন এই মহান নেতা। পূর্ববাংলার দরিদ্র কৃষক সাধারণ মানুষের পক্ষে তিনি আমরণ নিঃস্বার্থ সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি মুসলমানের জাগরণ এবং তাদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার অবদান চিরস্মরণীয়। এই মহান নেতার মৃত্যুদিনে তাঁকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১১:২৩ ৩৬৭ বার পঠিত