
ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তিন চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারা দেশে চেম্বারে রোগী দেখা এবং প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা।
এভাবে ঘোষণা দিয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মানবসেবার ব্রত নিয়েই চিকিৎসকরা এ পেশায় এসেছেন। জানা যায়, প্রাইভেট চেম্বার ও সার্জারি বন্ধের পাশাপাশি গাইনি চিকিৎসকরা রোগী না দেখাসহ প্যাথলজিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট দেখাও বন্ধ রাখেন। এতে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক রোগী চরম বিপাকে পড়েন। দুদিন ধরে চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মসূচিকে অমানবিক বলেছেন ভুক্তভোগীরা। জানা যায়, এ কর্মসূচির কারণে সারা দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে অসুস্থ শিশু, মুমূর্ষু রোগী ও প্রসূতিদের নিয়ে অসহায় সময় পার করেছেন স্বজনরা।
আন্দোলনে থাকা চিকিৎসকদের দাবি, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তারা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কোনো চিকিৎসক বৈরী বাস্তবতার মুখোমুখি হন এটা যেমন কাম্য নয়, তেমনই চিকিৎসকদেরও উচিত তাদের শপথের মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। কারণ সেবার শপথ গ্রহণ করেই চিকিৎসকরা সনদ গ্রহণ করেছেন।
ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় দুই নারী চিকিৎসককে গ্রেফতার বেআইনি দাবি করে কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয় দেশের পেশাজীবী ৩৬টি সংগঠনের চিকিৎসক। দেশের গাইনি চিকিৎসকদের সংগঠন অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) শনিবার কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাদের পাশাপাশি মেডিসিন, সার্জারিসহ ৩৬টি সংগঠনের চিকিৎসকরা এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এ কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। তারা বলেছেন, চিকিৎসকের মূল কাজ মানুষের সেবা করা; মানুষের জীবন রক্ষায় অবদান রাখা; কোনোভাবেই রোগীকে মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া তাদের কাজ হতে পারে না। রোগীদের জিম্মি করে এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানোর সুযোগ র্ছিল সংশ্লিষ্টদের। তা না করে সরাসরি চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করায় রোগীর প্রতি তাদের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি মানুষের জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। চিকিৎসাসেবার মতো সংবেদনশীল পেশায় যারা যুক্ত, তাদের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না যাতে তাদের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যুক্ত কেউ যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন, চিকিৎসক সমাজেরও উচিত সে বিষয়ে সোচ্চার হওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৯:৪০ ৩৪৭ বার পঠিত