আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রসঙ্গে

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রসঙ্গে
বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১



---

জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষের আইনগত অধিকার পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আইনি সহায়তা কেন্দ্র সমূহের কথা উল্লেখ করে বলেন বিচারপ্রার্থী মানুষ যাতে সঠিক বিচার পায় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও তিনি দেশের মানুষের মধ্যে যাতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা থাকে সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ন্যায় বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে বলে তার বক্তব্যে নাগরিকদের মধ্যে কোনভাবে বৈষম্য সৃষ্টি না করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আইন ও বিচার সেবা প্রদানের বিষয়টি ও তার বাণীতে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন, এটাই তো হওয়া উচিত এবং এটা সকল মানুষের কাম্য। আমাদের সংবিধানে এই কথাগুলোর স্বীকৃতি রয়েছে। আধুনিক বিশ্বে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রথমেই ধরা হয় সে রাষ্ট্রে আইনের শাসন কতটা সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে কিনা এবং মানবাধিকার বাস্তবায়ন আছে কিনা। এসব সূচকের উপর ভিত্তি করে একটি আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্র কিনা তা বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সামনে ইউরোপ-আমেরিকার কিছু রাষ্ট্র জলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। যেখানে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এই কথাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাগজে ভাষণে প্রতিনিয়ত ব্যবহার হলেও বাস্তবে কতটা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন এসে যায়। বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্রকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার কারণ হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশেসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক আসলেই এই সব কথাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নেই। কোন কোন দেশে কাগজে-কলমে আছে, বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যে আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। আবার কোন কোন দেশে বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেও নেই। অর্থাৎ তারা এসব এর ধারধারে না। রাজনীতি নির্ভর সমাজব্যবস্থায় সিভিল সোসাইটি, সামাজিক ব্যক্তিত্বদের কার্যক্রম এমনিতেই সীমিত হয়ে। গেছে সব কিছুর উপরে যেখানে রাজনীতি প্রাধান্য পায়, ক্ষমতায় থাকা না থাকা প্রাধান্য পায়, সেখানে এটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এসব আদর্শের ভিত্তিতে। সেদিন আমাদের বীর সন্তানরা জীবনপণ করে রক্ত দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিল ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, আইনের শাসন তথা শোষনহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে। আমাদের স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল এগুলো। কিন্তু স্বাধীনতার বিগত ৫০ বছরে আমরা বারবার এসব বিষয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং অন্তরায় দেখতে পেয়েছি। আমরা এ দেশের সামগ্রিক অবস্থার দিকে তাকালে দেখি ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি দেশের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এসব যখন সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে তখন সেখানে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, নীতি-নৈতিকতা কতটা থাকে তা বলাই বাহুল্য। ঘুষ দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের কবলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ আক্রান্ত হয়েছে। তাই উপরোক্ত বিষয়গুলো কতটুকু বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে দেশে একটি সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে আইনের শাসন থাকবে। যেখানে দুর্বৃত্তায়নের প্রতিরোধ থাকবে। যেখানে নীতি-নৈতিকতার বাস্তবায়ন থাকবে। যেখানে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকবে যেখানে ন্যায় ভিত্তিক বিচার করতে পারবে। যেখানে সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। অমানবিকতা নির্যাতন নিপিরণের অবসান হবে। সেরকম একটি সমাজ ব্যবস্থা আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যাশা। আমরা আশা করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার তো হারানোর কোন ভয় নাই কাজেই এই বিষয়গুলো সর্বক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে তিনি একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১২:০৩   ৩৬৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ