ছোটন সাহা ॥
বাক প্রতিবন্ধি আঁখি (১৫)। সব বাধা পেরিয়ে চোঁখে-মুখে অজ¯্র স্বপ্ন ছিলো তার, বোবা বলে সঙ্গীরা খেলায় নিতে চায়না। প্রতিবন্ধী পিতা ইদ্রিস মুন্সি কিভাবে তার মেয়ের বিয়ে দিবেন সে চিন্তায় অস্থির ছিলেন। কিন্তু জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের নিক্ষিপ্ত এসিডে তার মুখ-মন্ডলসহ শরীরের অনেক স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এখন আর ঘর থেকে বের হতে পারে প্রতিবন্ধি শিশুটি।
পরিবারের সবার সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন হাসেম, স্ত্রী রাবেয়া ও কন্যা রহিমা। সন্ত্রাসীদের ছোড়া এসিডে দগ্ধ হন পরিবারের সবাই। মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ে স্বামী-স্ত্রী দুই জন বেঁচে গেলেও দেড় মাসের মাথায় মারা যান কিশোরী রহিমা। মেয়েকে হারনো ব্যাথা আর এসিডের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি ও তার স্ত্রী। কিন্তু সন্ত্রাসীদের এখনও বিচার হয়নি। বিচারের দাবীতে আজো নিরবে কেঁদে যাচ্ছেন তারা।
২০০৮ সালে উল্লেখিত ঘটনায় মামলাটি আদালতে বিচারধীন রয়েছে, ভিকটিমদের দাবী, দোষীদের দৃষ্টান্তমূল শাস্তি হউক। বিচারের প্রতিক্ষায় আছেন তারা।
শুধু বাক প্রতিবন্ধি আঁখি ও মেয়ে হারানো যন্ত্রনা নিয়ে হাসেম নন, এসিডের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন তাদের মত চরফ্যাশন উপজেলার মোশারেফ হোসেনের স্ত্রী সুরমা আক্তার, একই উপজেলার আসমত আলীর স্ত্রী জরিনা খাতুন, খোরশেদের স্ত্রী বকুল বেগম, লালমোহন উপজেলার মৃত ইয়াসিনের স্ত্রী আয়শা বেগম, একই উপজেলার মৃত ছায়েদুল স্ত্রী কতবানু বেগম, চরফ্যাশনের আ: হাসেমের মেয়ে রাবেয়াসহ জেলার শতাধিক নারী পুরুষ।
এদের মধ্যে এডিস দগ্ধ সুরমা আক্তার বিঁচার পেলেও আজো বিচার পায়নি অন্যরা। তাদের অভিযোগ, সন্ত্রাসীরা জামিনে বের হয়ে নানা রকম হুমকি দামকি দিচ্ছে, মামলা উঠিয়ে নেয়ার ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।
সম্প্রতি (৭ মাস আগে নেয়া) এসিড দগ্ধদের স্বাক্ষাতকার নিতে লোমহর্ষক এসব ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা।
লালমোহনের রমাগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত ছায়েদুলের স্ত্রী কতবানু বলেন, জমির বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষ হাফিজসহ অন্যরা এসিডে ঝলসে দেয় তাকে। কিন্তু আসামীদের বিচার হয়নি। বিচারের প্রতিক্ষায় আছেন তিনি।
চরফ্যাশনের রসুলপুর গ্রামের খোরশেদ স্ত্রী বকুল বেগম বলেন, জমির বিরোধে সন্ত্রাসীদের নিক্ষিপ্ত এসিডে তিনি মারাতœক দগ্ধ হন। ২০০১ সালে দিকে প্রতিপক্ষ আলীসহ তার সহযোগীরা এসিডে ঝলসে দিলেও তাদের বিচার হয়নি বলে অভিযোগ তার। শশীভূষনের জরিনা খাতুন ১৯৯৯ সালে এসিডে দগ্ধ হন। বিচার পাননি তিনিও।
লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়নের মৃত ইয়াছিলেন স্ত্রী আয়শা (৪৫) বলেন, ২০০৫ সালে চার সন্ত্রাসী তার উপর এসিড সন্ত্রাস চালায়, আসামীরা জামিনে রয়েছে, তবে এখন বিচার পাননি তিনি।
ভোলায় দিন দিন বেড়েই চলছে, এসিড নিক্ষেপের ঘটনায়। প্রেম ঘটিত কারন ছাড়াও জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এসব এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তবে মাঝে মধ্যে দু’একটি ঘটনা সাজানো হলেও বেশীরভাগ মামলার আসামীরা জামিতে মুক্ত রয়েছেন। বিচার পাচ্ছেন না এসিড দগ্ধরা। জুয়েলারী দোকানগুলো অবাধে এসিড ব্যবহার করার ফলে ও সরকারী নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই এসিড বহন করার ফলে এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সুশিল সমাজের মানুষ।
এসিড আক্রান্তদের নিজ খরচে মামলা চালানোর মত সামর্থ নেই। তবুও তারা দোষীদের শাস্তি চান। তাদের আইনী সহযোগীতায় এগিয়ে আসছে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। কিন্তু ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে শতাধিক নারী পুরুষ এসিডে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিশহ দিন কাটিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে ভোলা আদালতে এডিশনাল পিপি এ্যাড. কিরন তালুকদার বলেন, ভোলায় এসিড সন্ত্রাসের মামলা খুবই কম। তবে এডিস মামলার ক্ষেত্রে মামলাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ধীরগতি। কারন মামলার সাক্ষীরা নিয়মিত কোর্টে আসেনা। এছাড়াও এসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চিকিৎসক বদলিজনিত কারনে চলে যান, তারাও ঠিকমত উপস্থিত হচ্ছে। তবুও সেশন কোর্টে এসিড মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করার চেষ্টা করছি।
এদিকে, জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রন কাউন্সিল ভোলা শাখার পক্ষ ভোলায় এসিড সন্ত্রাসের শিকার এসিড দগ্ধ নারী ও পুরুষকে সরকারীভাবে প্রতিবছরই সহায়তা প্রদান করা আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৬:৩৬ ৩৫৭ বার পঠিত