৮৫ বছর বয়সেও ঝালমুড়ি বিক্রি করে জোগান জীবিকা

প্রচ্ছদ » লালমোহন » ৮৫ বছর বয়সেও ঝালমুড়ি বিক্রি করে জোগান জীবিকা
সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪



---

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

৮৫ বছরের বৃদ্ধ মো. আব্দুর রশিদ। জীবিকার তাগিদে তিনি বিক্রি করছেন ঝালমুড়ি। গত পাঁচ মাস ধরে প্রতিদিন সকালে বের হয়ে স্থানীয় স্কুল-মাদরাসা প্রাঙ্গনে গিয়ে আব্দুর রশিদ বিক্রি করেন ঝালমুড়ি।

তেমন পুঁজি নেই তার। তাই একটি টুকরিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভর্তি করে মাথায় নিয়ে হেঁটে হেঁটেই ছুটে চলেন বিক্রির উদ্দেশ্যে গন্তব্যে। বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চরছকিনা এলাকার মতিয়ার বাপের বাড়ির বাসিন্দা।

ঝালমুড়ি বিক্রেতা বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ বলেন, গত পাঁচ মাস ধরে এই ঝালমুড়ি বিক্রি করছি। এর আগে ৩০ বছরের মতো মাছের পোনার ব্যবসা করেছি। এখন অনেক বয়স হয়েছে। যার জন্য শরীর ঠিকমতো চলছে না। তাই যতটুকু সম্ভব সাধ্যের মধ্যে নিজ এলাকাতে হেঁটে হেঁটেই বিক্রি করি ঝালমুড়ি। স্থানীয় স্কুল-মাদরাসা প্রাঙ্গণে গিয়ে বিক্রি করি এ মুড়ি। প্রতিদিন সকাল ১০ টায় বের হয়ে দুপুরের পর বাড়ি ফিরি। এতে করে দৈনিক চারশ থেকে পাঁচশ টাকা বিক্রি হয়। যেখান থেকে খরচ বাদে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা আয় হয়। এই আয়েই চলে সংসার।

তিনি আরো বলেন, দুই ছেলে, এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে আমার সংসার ছিল। তবে আমার দুই ছেলেই মারা গেছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। সে এখন শ্বশুর বাড়ি থাকে। বর্তমানে বাড়িতে আমি আর আমার স্ত্রী থাকি। স্ত্রীরও বয়স হয়েছে। তার আর আমার নিত্য অসুখ লেগেই থাকে। প্রতি মাসে দুইজনের ওষুধের পেছনেই ব্যয় হয় দুই হাজার টাকার মতো। সরকারিভাবে একটি বয়স্কভাতা পাই। ওই ভাতার টাকা আর এই ঝালমুড়ি বিক্রির আয়েই স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে রয়েছি। এখন সরকারিভাবে যদি চালের ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে অনেকটা ভালো হতো। কারণ এই সামান্য আয়ের থেকে আবার বাজার থেকে চালও কিনতে হয়।

ওই বৃদ্ধের প্রতিবেশী মো. মুশফিক জানান, তার বয়সে অনেকে শারীরিক জটিলতার উছিলা দিয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ান। অথচ বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ এখনো নিজের কাজ নিজেই করছেন। তার কাজটি ছোট হলেও তিনি মানুষের কাছে হাত পাতেন না। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। শুনেছি তিনি বয়স্ক ভাতা পান। এর পাশাপাশি সরকারিভাবে অসহায়দের জন্য যে চাল বরাদ্দ রয়েছে তা যদি বৃদ্ধ আব্দুর রশিদকে নিয়মিত দেওয়া হয় তাহলে তার কষ্ট অনেকটা হলেও কমবে বলে মনে করছি।

লালমোহন উপজেলার কালমা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আকতার হোসেন বলেন, ওই ব্যক্তি বৃদ্ধ ও অসহায় হওয়ায় তাকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো সহযোগিতার দরকার হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে অসহায়দের জন্য নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ওই বৃদ্ধ ঝালমুড়ি বিক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১:৩৪:০২   ৬৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

লালমোহন’র আরও খবর


দাদনের ফাঁদে বন্দি জীবন, মৃত্যুতেও মেলে না মুক্তি
অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসাইন ভোলায় মাদরাসা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত
লালমোহনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘর উত্তোলনের অভিযোগ
লালমোহনে ১২৬ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে প্রার্থীদের হুমকি ধামকি ॥ আচরন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
ঝড়ে পড়ে যাওয়া মাদরাসা ঘর এক মাসেও মেরামত হয়নি
লালমোহনে শিশুকে অপহরণের পর ৫ লাখ টাকা দাবি, অতঃপর…
‘টাকা পেলেই ভাতা করার দায়িত্ব নেন দফাদার’
বিরূপ আবহাওয়া: ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশির হানা
স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি নিয়ে তৃষ্ণার্ত মানুষের পাশে মনিরুজ্জামান মনির



আর্কাইভ