‘টাকা পেলেই ভাতা করার দায়িত্ব নেন দফাদার’

প্রচ্ছদ » অপরাধ » ‘টাকা পেলেই ভাতা করার দায়িত্ব নেন দফাদার’
সোমবার, ৬ মে ২০২৪



---

লালমোহন প্রতিনিধি ॥

বর্তমান সরকারের আমলে সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে দেশের অসহায় মানুষদের নানা ধরনের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। তবে সরকারের সেই বিনামূল্যের ভাতা টাকার বিনিময়ে করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভোলার লালমোহন উপজেলার আবুল কাশেম (কুট্টি) নামে এক দফাদারের বিরুদ্ধে।

তিনি উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের দফাদারের দায়িত্বে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মানুষকে ভাতা দেওয়ার কথা বলে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। টাকা পেলেই দফাদার আবুল কাশেম (কুট্টি) যেকোনো ধরনের ভাতা করে দেওয়ার দায়িত্ব নেন। এজন্য তিনি দুই কিস্তিতে টাকা নেন। প্রথমে আবেদন করার সময় দুই হাজার থেকে তিন হাজার এবং পরে ভাতা চালু হলে পুনরায় এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা নেন তিনি।

অভিযোগ করে উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউপির ৪নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোরশেদ বলেন, ১২ বছরের একজন মেয়ে রয়েছে। সে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। শুনেছি স্থানীয় দফাদার আবুল কাশেম (কুট্টি) এসব নামের তালিকা নিয়ে অফিসে জমা দেন। যার জন্য মেয়ের নামে প্রতিবন্ধী ভাতা চালু করতে তার কাছে যাই। তার কাছে যাওয়ার পর তিনি দুই হাজার টাকা দাবি করেন। এছাড়া বলেছেন ভাতা চালু হলে আরো দুই হাজার টাকা তাকে দিতে হবে।

একই এলাকার মো. রুহুল আমিন জানান, আমার মেয়ে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তাই মেয়ের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা করতে স্থানীয় দফাদারের কাছে যাই। কারণ আমরা গ্রাম-গঞ্জে থাকি, অফিস তেমন ভালো করে চিনি না। এছাড়া ঐ দফাদার আশেপাশের আরো কয়েকজনকে ভাতা করে দিয়েছেন। যার জন্যই মূলত তার কাছে গেছি। যাওয়ার পর ভাতা করে দিতে দফাদার আবুল কাশেম (কুট্টি) দুই হাজার টাকা দাবি করেন। তার দাবি অনুযায়ী ঐ টাকা তাকে দিয়েছি। তবে তিনি বলেছেন পরে আবারো দুই হাজার করে টাকা দিতে হবে।

অন্যদিকে দফাদার আবুল কাশেম (কুট্টির) বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের চেরাগআলী বাড়ির জাহানারা নামে এক নারীর থেকে বিধবা ভাতা করে দেওয়ার কথা বলে তিন বছর আগে তিন হাজার টাকা নেন। অথচ জাহানারার স্বামী জামাল জীবিত। তিন বছর আগে টাকা নিলেও এখন পর্যন্ত ভাতা পাননি জাহানারা। যার জন্য টাকা ফেরত চাইলে দেই-দিচ্ছি বলে দিন পার করতে থাকেন দফাদার আবুল কাশেম (কুট্টি)।

এছাড়াও দফাদার হওয়ার সুবাধে ধলীগৌরনগর ইউপির বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রকার ভাতা করে দেওয়ার কথা বলে বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আবুল কাশেম (কুট্টি)।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের দফাদার আবুল কাশেম (কুট্টি) বলেন, এত মানুষের কাছ থেকে টাকা নেইনি। তবে ৭ থেকে ৮ জনের থেকে পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়েছি। যা ডাক্তারি সনদ ও অন্যান্য বিষয়ে খরচ করা হয়েছে।

লালমোহন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম দুলাল জানান, আবুল কাশেম (কুট্টি) প্রথমে চৌকিদার ছিলেন। বর্তমানে তিনি দফাদার হয়েছেন। এই পদের অপব্যবহার করে বিভিন্ন লোকজনের কাছে নানা সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সমাজের রক্ষক হয়ে তার এমন কর্মকা- খুবই ন্যক্কারজনক। দফাদার আবুল কাশেম (কুট্টির) এসব কর্মকা-ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদন্ত করা প্রয়োজন।

লালমোহন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুদ বলেন, অফিসের কথা বলে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে তাহলে এটি ঐ ব্যক্তির প্রতারণা। আমাদের দফতরের আওতাধীন কোনো ভাতা পেতে টাকা লাগে না। আমরা ভাতা প্রত্যাশীদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ঐ দফাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০:৪৭:১১   ৫৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অপরাধ’র আরও খবর


পশ্চিম ইলিশায় ৩ ঘরে দূদর্শ চুরি
ভোলায় মেঘনা নদী থেকে পাঙ্গাস মাছের অবৈধ পোনা শিকারের ৫টি চাই ধ্বংস
ভোলায় দুই মাদক কারবারীকে সাজা
তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩শ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক
ওমরাহ পাঠানোর নামে হাজী কামালের প্রতারণা
চরফ্যাশনে ভূমিদস্যু মুছার নেতৃত্বে নারী ও শিশুর ওপর সন্ত্রাসী হামলা
লালমোহনে জমি দখলের জন্য মালিকের উপর হামলার অভিযোগ
দালালদের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব জীবন ॥ চরফ্যাশন উপজেলার পাচঁ প্রবাসীর আর্তনাদ!
সৎ মায়ের বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
চরফ্যাশনে ব্যবসায়ীকে হাত পা বেধেঁ মারধরের অভিযোগ



আর্কাইভ