বদলে যাচ্ছে একশত বছরের পূরনো ঢালচর

প্রচ্ছদ » জেলা » বদলে যাচ্ছে একশত বছরের পূরনো ঢালচর
মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০১৭



---
আদিল হোসেন তপু ॥

চরের দুই দিকে পাহাড়ায় চীনের প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে ঘন সবুজ বন, শত প্রজাতির পাখী মায়াময় হরিন বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বানর, কাঠবিড়ালী শীতে সাইবেরিয়া পাড়ি দিয়ে আসা মৌসুমী অতিথি পাখীর কলতান। মায়াময় অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দ্বীপ কে বদলে দেবার, মানুষের বসবাস আর কর্মসংস্থানের লক্ষ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন এই এলাকার কৃতি সন্তান সরকারের সচিব নাজিমুদ্দিন চৌধুরী ।
বদলে যাচ্ছে একশত বছরের পূরনো চর মনপুরা উপজেলাধীন ঢালচর। দশ কিলোমিটার দীর্ঘ চার কিলোমিটার প্রসস্ত, এই দ্বীপ চরে আশার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। পৈতৃক ভাবে প্রাপ্ত শতশত বিঘা জমি। এক ফসলি এই জমি,আর মহিষের বাতান, এই নিয়ে এই চরের মানুষের জীবন, বাড়তি আয় মেঘনায় মাছ ধরা। ঝড় ঝঞ্জা জলোচ্ছ্বাস, কঠিন জীবন এই অঞ্চলের মানুষের। মনপুরা উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ৩০ মিনিটের দুরত্বের  এই চরে এখনও  মানুষ বাস করে আদিম যুগে বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসা নেই, পানিও জলের ব্যবস্থা নেই, স্কুল নেই, যাতায়াতের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই, ডাক্তার নেই, এক অনিশ্চয়তার জীবন নিয়ে চারটা ডাল ভাত জোগারের  তাগিদে এই এলাকায় বসবাস করে মানুষ। চারদিকে মেঘনা নদী।
নাজিমুদ্দিন চৌধুরী বলেন, মনপুরার মাটি আর মানুষের কাছে আমি এবং আমার পরিবারের ঋন রয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এখানে এসে বসবাস শুরু করে আমার দাদা আবুল ফাতাহ্ চৌধুরী আমার বাবা ও কাকাদের ভোলা এবং বরিশালে পড়ালেখা করান। সেই সূত্রে  আমার বাবা বরিশালে ও ভোলাতে বাড়ী করে আমাদের নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। আমার বড় হওয়া বেড়ে উঠা বরিশালে পড়া লেখা বরিশাল এবং ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে মনপুরায় যেতাম, শীতেও যেতাম পাখী শিকার করতে। মানুষের মমতা ভালবাসা আমাদের পরিবারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আমাকে তাগিদ দেয় এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু করার।
নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বাবা জনাব বরসাত উল্লাহ্ চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্থান আমলে তিনি ছিলেন ওয়াপদার একজন শীর্ষস্থানীয় ঠিকাদার। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি সাতক্ষিরায় একটি কাজের বিল পান, এবং ঐ সমুদয় টাকা এবং তার ব্যবহৃত জীপ নিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গে ডুকে যান।
বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে টাকা প্রধান ঃ-
টাকার পুরোটাই তিনি তৎকালীন ভোলার জাতীয় পরিষদ সদস্য উনসত্তরের গনঅভূথ্যানের মহানায়ক মুজিব বাহিনীর প্রবক্তাদের একজন তোফায়েল আহমেদর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সরকারী তহবিলে দান করেন এবং তার জীপ এবং ড্রাইভার মোনায়েম, মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দদের কাছে ব্যবহার হত। বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের মানুষ ছিলেন তিনি।
নাজিম উদ্দিন চৌধুরী পড়া লেখা শেষে প্রথমে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরিবর্তিকালে অডিট ও একাউন্টনসে জয়েন করেন এবং সর্ব শেষে প্রশাসনে বর্তমানে তিনি জালানী এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে সচিব এবং সুন্দর বন গ্যাস কোম্পানীর চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন।
কি করা যায় এ চরাঞ্চলে ঃ-
কর্ম সূত্রে পৃখিবীর বহু দেশ ঘুরে নানা কিছু দেখার সুযোগ হয় তার। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান চৌধুরী। এখানে তাই তিনি বেশ কয়েক বছর আগ থেকে শুরু করেন একটু একটু করে তার স্বপ্নের বীজ বোনা।
এখন তিনি তার চুড়ান্ত পর্বে হাত দিয়েছেন। তার চাকরির ভবিষৎ তহবিল থেকে লোন নিয়ে তিনি এখানে গড়ে তুলছেন ১০০ একর জায়গায় আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত মৎস চাষ প্রকল্প। ৫টা ভেকু দিয়ে মাটি  কেটে  ইতি মধ্যে তিনি তার প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করেছেন। চলছে সোলার প্যানেল দিয়ে পানি তোলার ব্যবস্থা করা এবং আরও ৩৮ টি সোলার দিয়ে সম্পুর্ণ প্রজেক্টকে আলোকিত করার কাজ। ব্যায়োগ্যাস প্লান্ট বসানোর কাজ আগেই শেষ হয়েছে।
প্রাথমিক পুস্তুতিতে ছিলো ৪টি পুকুর যাতে পূর্ব থেকে মাছ চাষের অভিজ্ঞতা নেয়া যায়। আছে তার ১০০শত মহিষ, ১০০শত গরু, ১০০শত ছাগল, ১০০শত ভেড়া, ১০০ শত হাঁস, ১০০শত মুরগী এই সমস্তই তার পরিকল্পনার পূর্ব প্রস্তুতি। এখন তার স্বপ্ন ছুয়ে দিচ্ছে এলাকার মানুষকেও।
তার আরও পরিকল্পনা ঃ-
অন অগ্রসর এই এলাকায় তিনি এখানকার মানুষদের সম্পৃক্ত করে ঢালচর উন্নয়ন কমিটি গঠন, শিশুদের জন্য প্রাথমিক  বিদ্যালয়, মসজিদ, প্রথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, যাতায়াতের জন্য রাস্তা, এবং নদী পারাপার ও মালামাল পরিবহনের জন্য ইতিমধ্যেই তিনি চট্টগ্রাম থেকে জাহাজের একটি রেসকিউ বোট সংগ্রহ করেছেন ১০০শত বিশ (এইচপি) এই বোটে যে কোন দুর্যোগে মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারবে দ্রুত।
তার কাজের প্রেরনায় আরও ২টি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছেন এই এলাকার চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন। নাজিমউদ্দিন  চৌধুরীর ফুফাত ভাই সেলিম চৌধুরীও শুরু করবেন একটির কাজ। সব মিলিয়ে ঢালচরে এক নতুন স্বপ্নের দীগন্ত উন্মোচিত হবে এমনই ধারনা এই এলাকার মানুষের। চৌধুরীর স্বপ্ন আরও বড়, তিনি বলেন মাটির প্রতি অনুগত হতে না পারলে দেশের প্রতি ভালবাসা জন্মোয় না। আমি জানিনা। আমি কতটা কি করতে পারব, আমার যোগ্যতা আর সামর্থ দিয়ে আমি আমার এলাকার একটি চরকে মডেল হিসাবে দার করাতে চেষ্টা করছি। তা থেকে অনুপ্রেরনা নিয়ে আমার মত কেউ তার এলাকায় এগিয়ে আসলে আমার স্বপ্ন চেষ্টা সার্থক হবে।
ঢালচরের মহিষের এবং গবাদি পশুর দুধ ও মাংস এবং এর  প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য পর্যটকদের আকর্ষনের স্থান হতে পারে। উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে যে মালদ্বীপ তাদের ছোট ছোট দ্বীপ গুলিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটিয়েছে।  যেমন সিঙ্গাপুর তাদের বিকাশ ঘটিয়েছে আমাদের দেশেও আছে অনুরুন্ত সম্ভাবনা শুধু চাই সমস্তীত পরিকল্পনা ও দেশ প্রেম।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪০:৫৩   ৩২৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
বিজয়ী হলে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো: মোশারেফ হোসেন
মটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ প্রার্থীর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
ভোলা পৌরশহর ও বাজারে নেই পাবলিক টয়লেট ॥ জনগনের ভোগান্তি চরমে
মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
শিক্ষা বিমুখ জেলেপল্লীর অধিকাংশ শিশু, জড়াচ্ছে বাপ-দাদার পেশায়
বেসরকারিভাবে শতভাগ পাশের হারের শীর্ষে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
বিভাগীয় পর্যায়ে লোক ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ভোলার মেয়ে অহনার ১ম স্থান অর্জন
আনারস মার্কায় ভোট দিবেন এটাই আপনাদের কাছে আমার চাওয়া: মোশারেফ হোসেন
নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ, সবাই কেন্দ্রে এসে ভোট দিবেন: মোহাম্মদ ইউনুছ



আর্কাইভ