ভোালায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় বাদী পক্ষের সংবাদ সম্মেলন ॥ ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর অভিযোগ

প্রচ্ছদ » অপরাধ » ভোালায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় বাদী পক্ষের সংবাদ সম্মেলন ॥ ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর অভিযোগ
বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩



---

স্টাফ রিপোর্টার ॥

ভোলার আদালতের গাড়ীচালক মোঃ হারুন আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছে। সাজাপ্রপ্ত হওয়ার পরও হারুনকে জেল হাজতে প্রেরণ কিংবা আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো হারুন চাকরিতে বহাল থেকে মামলার বাদীকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। মামলার বাদী অসহায় শাজাহানের পরিবার হারুনের ভয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামী কি করে চাকরীতে বহাল থাকে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হারুনের ক্ষমতার উৎস কোথায় এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী পরিবারের। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ভোলার একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী মোঃ শাজাহান এসব কথা বলেন। তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামী গাড়ী চালক হারুনসহ অন্যান্য আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ভোলায় বিচারক জেলা ও দায়রা জজ আদালতের গাড়ীচালক মোঃ হারুনসহ তার পরিবারের ৬জন জজ কোর্টে চাকুরী করেন। এই ক্ষমতা দেখিয়ে মোঃ হারুন তার প্রতিবেশীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে জুলুম নির্যাতন, অত্যাচার করে আসছে। আদালতে চাকরি করায় হারুনের ভয়ে এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে থাকে। মামলা রায়, খালাস ও আসামীদের জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতো হারুন। কাজ না হলে টাকা চাইলে তাদেরকে মামলা দিয়ে হয়রানী করারসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতো গাড়ী চালক হারুন। হারুনসহ ৬জন আদালতে চাকরি করে এই ক্ষমতা দেখিয়ে এলাকায় নিজের রাম-রাজত্ব কায়েম করছে। জানা যায়, সে ইতিমধ্যে কোটি টাকা দামের তিনটি বিলাসবহুল মাইক্রোবাস কিনে রিয়া রেন্টেকার নামে ব্যবসা পরিচালনা করেন। যার মালিক তিনি নিজেই। একজন গাড়ি চালকের এতো টাকার উৎস কোথায় তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হারুন স্থানীয় গরীব, অসহায় মানুষের জমিজমা জোরপূর্বক দখল ও তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে। এদেরই একজন ভুক্তভোগী ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মুছাকান্দি এলাকার মৃত আসম আলীর ছেলে মোঃ শাজাহান। হারুনের লোলপদৃষ্টি পড়ে অসহায় শাজাহানের জমির উপর। অসহায় ওই পরিবারের জমি দখলের পায়তারা করে হারুন ও তার লোকজন। গত ৩০/০৯/২০১৭ইং তারিখে গাড়ি চালক মোঃ হারুন ও তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে শাজাহানের জমির সুপারি পাড়তে যায়। এতে বাঁধা দিলে হারুন ও তার বাহিনী শাজাহানসহ তার পরিবারের লোকজনকে এলোপাথাড়ি পিঠিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। শাজাহানের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর চালিয়ে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, দামী মালামাল ও গৃহপালিত ৩টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় শাজাহানের শালিকা নাহার বেগম বাদী হয়ে ভোলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-জি.আর- ৫০০/২০১৭ইং। ওই মামলা দীর্ঘদিন চলার পর মামলায় বিজ্ঞ আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণ শেষে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট-৪ এর সুলতান মাহামুদ মিলন গত ২২-০৮-২০২১ইং তারিখে আসামী হারুনসহ অন্যান্য আসামীকে ১ বছরের কারাদন্ড ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ডের রায় প্রদান করেন। কিন্তু রায় প্রকাশের দিন হারুনসহ অন্যান্য আসামীরা আদালতে হাজির থাকলেও তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়নি। অথচ গণকর্মচারী অধ্যাদেশ ১৯৮৫ আইন অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে রায় বা সাজার আদেশ ঘোষণার তারিখ থেকে তাৎক্ষনিক চাকুরি হইতে বরখাস্তের বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী মোঃ হারুন-কে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান থাকা সত্ব্যেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। গাড়ী চালক মোঃ হারুনের এক বছরের সাজা হওয়ার পরও সে কিভাবে চাকুরি করে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? তাহলে কি আইন শুধু সাধারণ মানুষের জন্য।

---

এদিকে, ভোলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের গাড়ীচালক সাজাপ্রাপ্ত মোঃ হারুনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ আসে। যার স্মারক নং-১০,০০,০০০০, ১২৮,২৯,০০২.১৮.২২৯, তারিখ-১৫/০৬/২০২৩ইং। আইন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ আসার প্রায় ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হারুনসহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। হারুন বহাল তবিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন। কিসের ক্ষমতায় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী চাকরিতে বহাল তবিয়তে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না তা নিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েন মামলার বাদী। মামলায় রায়ে হারুনসহ অন্যান্য আসামীরা সাজাপ্রাপ্ত হলেও তাদেরকে গ্রেফতার কিংবা আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাজাহান ও তার পরিবারে লোকজন।

ভুক্তভোগী অসহায় শাজাহান বলেন, গাড়ী চালক মোঃ হারুন ভোলা জজ আদালতে সরকারী চাকরী করে এই ক্ষমতা দেখিয়ে এলাকার গরীব, অসহায় মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়। মানুষের জমি জোর করে দখল, মামলা খালাস, রায় ও আসামীদের জামিন করিয়ে দিবে বলেও অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে। সে এলাকায় অনেক প্রভাব বিস্তার করে। তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। কেউ কিছু বলতে গেলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে। হারুন আমার জমি জোর করে দখলের চেষ্টা করে। দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ তার বাহিনী নিয়ে আমার বাগান থেকে সুপারী পারতে আসে। আমরা বাঁধা দিলে আমাদেরকে এলোপাথাড়ি মারধর, বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, গবাদী পশু লুটপাট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় আমরা হারুন গংদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করি। ওই মামলা হারুনসহ অনান্য আসামীরা ১ বছর সাজাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু রায়ের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হারুন সাজা ভোগ না করে চাকরি বহাল রয়েছে। হারুনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আদেশ দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমি অসহায় বলে সরকারের বিভিন্ন উর্ধ্বতন মহলে ঘুরেও ন্যায় বিচার পাইনি।

শাজাহান কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, উল্টো হারুন আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলে আমার একই পরিবারে ছয় জন জজ কোর্টে চাকুরি করি। কোন কোর্ট কাচারীতে আমার কোন কিছুই করতে পারবেনা। বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ আমার খুব কাছের লোক। আমার চাকুরিরও কোন ক্ষতি হবে না। আমি যা খুশি তাই করতে পারবো।

আমাদেরকে খুন-ঘুম করে বাড়ি থেকে উৎখাত করবে বলেও হারুন ও তার লোকজন হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়াও হারুন একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানী করছে। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন গাড়ী চালক মোঃ হারুন ও তার বাহিনীর ভয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছি। আমি হারুনের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই। আমি উর্ধ্বতন মহলের কাছে ন্যায় বিচার এবং হারুনসহ অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূল শাস্তি দাবী করছি।

অভিযুক্ত গাড়ী চালক মোঃ হারুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে তার পর তাৎক্ষনিক আমি আদালত থেকে স্থায়ী জামিন নিয়েছি। বর্তমানে আমি জামিনে আছি। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমি আদালতে আপিল করেছি। মামলাটির বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ স্যার তদন্ত দিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে সামাজিকভাবে হয়রানী করার জন্য একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার চাকরি জীবনে আমি কারও সাথে কোন খারাপ আচরণ কিংবা চাকরির কোন প্রভাব দেখাইনি।

বাংলাদেশ সময়: ০:০৭:৩৫   ৪১১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অপরাধ’র আরও খবর


চরফ্যাশনে ব্যবসায়ীকে হাত পা বেধেঁ মারধরের অভিযোগ
লালমোহনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘর উত্তোলনের অভিযোগ
পুত্র মোস্তাফিজুর রহমানের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মায়ের সংবাদ সম্মেলন
এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে প্রার্থীদের হুমকি ধামকি ॥ আচরন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
তজুমদ্দিনের মেঘনায় চিংড়ি মাছের রেনু আহরনের আড়ালে চলছে নানান প্রজাতির মাছের পোনা নিধন
লালমোহনে শিশুকে অপহরণের পর ৫ লাখ টাকা দাবি, অতঃপর…
নেয়ামতপুর চরে ভূমি মালিকদের উপর ভূমিদস্যুদের হামলা ॥ গুরুতর আহত ২৫
চরফ্যাশনে অন্যের জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাসেলের বিরুদ্ধে
বাপ্তায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে এতিম সন্তানের উপর হামলা
‘টাকা পেলেই ভাতা করার দায়িত্ব নেন দফাদার’



আর্কাইভ