ভষ্মিভূত ৫২ জন মানুষের অপমৃত্যুর জন্য দায়ী কে?

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » ভষ্মিভূত ৫২ জন মানুষের অপমৃত্যুর জন্য দায়ী কে?
শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১



নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস এর কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৫২ জন মানুষ পুড়ে ভষ্মিভূত হয়ে গেছে । তাদের মৃতদেহ দেখে পুরুষ না মহিলা তাও শনাক্ত করা যায়নি। দমকল বাহিনীর ১৯ ঘণ্টা লেগেছে ওই ভবনের আগুন আয়ত্তে আনতে। কারখানার শ্রমিকদের চিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রক¤িপত হয়েছে। বিল্ডিং থেকে বের হওয়ার নির্ধারিত গেইটে ছিল তালামারা। ফলে শ্রমিকরা কেউ বের হতে পারেনি। এদের মধ্যে তিনজন ছাদে উঠে লাভ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। জানা গেছে ওই কারখানায় প্রচুর কেমিক্যাল ছিল। সেটাও আগুন বেড়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। কারখানায় নামমাত্র আগুন নির্বাপক থাকলেও তা কোনো কাজে আসেনি। ইতোমধ্যেই সরকার এ ব্যাপারে কারখানার মালিক সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাশিম সহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এভাবে ক’দিন পরপর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গি কিংবা চট্টগ্রামে কর্মরত শ্রমিকরা ভবনের ছাদ ভেঙ্গে অথবা আগুন লেগে মারা যাচ্ছে। যার পেছনে রয়েছে ভবন নির্মাণের গাফিলতি, ত্রুটি অথবা সময় উত্তীর্ণ ভবনকে শিল্প কারখানার জন্য ব্যবহার করা, কিংবা নি¤œমানের বিদ্যুৎ সরঞ্জাম অথবা কারখানা স¤পৃক্ত বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি ও গাফিলতির কারণে এ ধরনের আগুন লাগার ঘটনা ঘটে থাকে। খবর নিলেই উ™ঘাটিত হবে এ ধরনের ঘটনা দুর্ঘটনার পেছনে কারখানার মালিক অথবা ভবনের মালিকদের গাফিলতি অথবা ত্রুটি-বিচ্যুতির মূল কারণ।
শিল্প কারখানার জন্য উপযোগী কোড অনুযায়ী অনেক শিল্প মালিকরা  ভবন তৈরি করেন না। কারখানায় শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার জন্য যেসব ব্যবস্থা রাখা উচিত তাও রাখেন না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধক প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ ও থাকে না। ভবন মালিক অথবা কারখানার মালিকদের অবহেলার কারণে বেশিরভাগ শ্রমিকদের বিভিন্ন ভাবে প্রাণ হারাতে হয়।
৫২ জন মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হয়ে অঙ্গার হয়ে গেছে! এরাও মানুষ! এদের পরিবার আছে, ঘর সংসার আছে, পিতা-মাতা আছে। জানা গেছে এ কারখানায় অনেক শিশু-কিশোরকে দিয়ে স্বল্প বেতনে শ্রমিকের কাজ করানো হতো যা শ্রম আইন এর বিপরীত। এভাবে ক’দিন পরপর এই দেশের শত-সহস্র মানুষ অন্যের গাফিলতির জন্য প্রাণ হারাতে পারে না। এর একটা সুরাহা প্রয়োজন। আমরা মনে করি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। আগুন লাগার কারণ কি? মানুষগুলো কেন বিল্ডিং থেকে বের হতে পারলোনা? এ দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই প্রকৃত অপরাধীদের কে বের করা যাবে। তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত তিনটা হয়েছে। ৩০০ টা হলেও কোনো কাজ হবে না যদি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বের করে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হয়। তাই আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটাই দাবি করবো বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং যাদের গাফিলতিতে অথবা কি কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, সেটা বের করা হোক। আর সেইসব অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক। এটা হলেই তা দেখে অন্যান্য ভবনের মালিকরা এবং শিল্প কারখানার মালিকরা ভবিষ্যতে তাদের নিজ নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সচেতন হবে। আর সেটা হলেই এজাতীয়  দুর্ঘটনার অভিশাপ থেকে জাতি মুক্তি পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৬:৫১   ৩২১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ