মুক্ত গণমাধ্যমের সূচকে আরো একধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ। দেশের অবস্থান হলো ১৫২তম। গত বছর ছিল ১৫১তম অবস্থানে। আরএসএফ নামের আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা বিশ্বব্যাপী বাক স্বাধীনতা তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকের উপরে ২০০২ সাল থেকে জরিপ চালিয়ে প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করে। এ বছরে এই জরিফে মোট ১৮০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এ অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ ১৫০তম অবস্থানে রয়েছে। উপমহাদেশের ভুটানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক উপরে। তাদের অবস্থান ৬৫ নম্বরে রয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা এমনকি মিয়ানমারের চেয়েও বেশি নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান।
এই সূচক এর মাধ্যমে একটি বিষয় আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাংলাদেশে গণমাধ্যম মুক্ত নয়, বিশ্বের অনেক কঠিন স্বৈরশাসকদের দেশের ন্যায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিভিন্ন ধরনের আইন কানুন অর্ডিন্যান্স এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া কোনো না কোনোভাবে সরকারের রাজনৈতিক সহযোগীর মত ভূমিকা পালন করে। এরপরেও বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের উপরে নানা ধরনের নির্যাতন নিপীড়নের কথা আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। মাত্র কয়েকদিন আগেও আমরা দেখেছি একজন সাংবাদিককে কিভাবে বিজিবি হাত বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।অথচ আমাদের সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে বাক স্বাধীনতাকে ঘোষণা দিয়েছে। কথা বলার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই সূচক প্রকাশের মাধ্যমে আমাদের দেশের বাকস্বাধীনতার বাস্তব অবস্থাটা আবারও আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে। পাকিস্তান আমলে আমাদের বাকস্বাধীনতা ছিল না। পাকিস্তানি সরকার বিভিন্নভাবে বাঙ্গালীদের বাকস্বাধীনতার উপরে বারবার হস্তক্ষেপ করেছে। সংবাদপত্রের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে আর সেই বন্দিত্ব থেকে মুক্তির লক্ষে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। আমাদের মৌলিক অধিকারসমূহের স্বাধীনতা। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরেও বারবার আমাদের বাক স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ এসেছে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেশের সকল পত্রিকাসমূহ বন্ধ করে দিয়েছিল চারটি মাত্র পত্রিকা সরকারিভাবে রেখে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সামরিক শাসনের সময়ে আমাদের বাক স্বাধীনতায় বারবার হস্তক্ষেপ হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের পিছু ছাড়ছে না। আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে দেশে গণমাধ্যম এর সূচক আমাদের সামনে অপ্রত্যাশিত কঠিন বাস্তবতা প্রকাশ করছে। তাই আমাদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার এবং প্রত্যেকটি সচেতন মানুষের, সুস্থ বিবেকবান মানুষের দেশে সাংবিধানিক শাসন, ন্যায় বিচার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে সচেতনতা আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৩:২৮ ৩৫০ বার পঠিত