প্রসঙ্গ : শিশু শ্রম– ঘুম থেকে উঠেই টাকা রোজগারের চিন্তা!

প্রচ্ছদ » জেলা » প্রসঙ্গ : শিশু শ্রম– ঘুম থেকে উঠেই টাকা রোজগারের চিন্তা!
মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭



---
ছোটন সাহা ॥

ভোলা শহর এবং আশেপাশের লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, রিকশা ও সাইকেলের গ্যারেজ ও পাবলিক এলাকায় দেখা যায় শিশুদের। অভাবের তাড়নায় টাকা রোজগার করতে শ্রম দিতে হচ্ছে। এরপরেও যেন ন্যায় মজুরি থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাদের। সকালে খুব ভোরে উপার্জনের আশায় শ্রম বিক্রি শুরু হয় এবং তা চলে সন্ধা পর্যন্ত। শহরের শ্রমজীবী ৮/১৪ বছর বসয়ী শিশুদের গল্প ঠিক এমনই। এদের মধ্যে একজন সাহাবুদ্দিন (৯)।
ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় গিয়ে কথা সাহাবুদ্দিনের সাথে। সে জানায় তার জীবনের গল্প। সাহাবুদ্দিন জানায়, পিতা রিক্সা চালক ছিলেন। কিন্তু শারিরিকভাবে তিনি অসুস্থ থাকায় পরিবারের ভরন পোশনের দায়িত্ব পরে তার উপর। আর তাই পড়ালেখার স্বপ্ন থাকলেও বাধ্য হয়ে তাকে চায়ের দোকানে পানি আনার কাজে শ্রম বিক্রি করতে হচ্ছে।
সাহাবুদ্দিন জানায়, ইচ্ছেছিলো উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে ডাক্তার হবো কিন্তু সেই স্বপ্ন  তো পূরন হলো এখন পানি টেনে দিন কেটে যায়। ঘুম থেকে উঠেই দিনভর পরিশ্রম, সন্ধ্যায় টাকা পেলেই মুখে হাসি ফুটে তার।
সাহাবুদ্দিনের মত দারিদ্রতার কারনে শ্রমিক দিচ্ছে অনেক শিশু। তাদের মধ্যে কেউ ঘাটের কুলি, কেউ দোকানের কর্মচারী কেউবা হকারি পেশাসহ নানা ঝূকিপূর্ন কাজে শ্রম বিক্রি করছে। ভোলায় এমন শিশুর দেখা মেলে সর্বত্র।
দারিদ্রতার কারনে ভোলায় ঝূকিপূর্ন কাজে জড়িয়ে পড়ছেন শিশুরা। কিন্তু দিনভর খাটুনি করেই তাদের মেলেনা ন্যায়্য মজুরী। প্রতিবাদ করলেই চলে অত্যাচার। এতে একদিকে যেমন এরা শারিরিক ও মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা থেকেও। শিশু শ্রম বন্ধ কিংবা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে উদাসীন। যে কারনে দিন দিন শিশু শ্রম বেড়েই চলছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছেন, শিশু শ্রম বন্ধে তাদের কার্যক্রম চলছে।
ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক শিশু যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমান। এদের মধ্যে কেউ লঞ্চে পানি বিক্র করছে কেউ খাবার ফেরী করছে কেউ বা কুলির কাজ করছে। কোন যানবাহন এলেই দৌড়ে চুটে যায় তারা। ব্যাগসহ অন্য মালামাল কাধে নিয়ে লঞ্জে তুলে দেয়। এভাবে  কিছু টাকা রোজগার তারা। তবে মাঝ মধ্যেই তাদের মারধরের শিকার হতে হয়।
যে বয়সে তাদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কিন্তু পারিবারিক অস্বচ্ছলতা, দারিদ্রতা ও পিতার উদাসীনতা কারনে তারা বাধ্য হচ্ছে শ্রম বিক্রি করতে। যে কারনে পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তারা শিক্ষা গ্রহন করতে পারছেনা।
ঘাটের শিশু শ্রমিক লোকমান, আরিফ ও বাবুল। পড়ালেখার উচ্ছ থাকলেও অভাবের কারনে পড়ালেখা হয়নি। তাই কুলিম কাজ করতেছ হচ্ছে। তারা জানায়, অন্যরা যখন স্কুলে যায় আমাদের স্কুলে ঙেতে ইচ্ছে করে কিন্তু কিভাবে যাবো, আমাদের স্বপ্ন পূরন হয়না। মে দিবস কি তাও জানেনা তারা। শুধু টাকার আসায় দিনভর খাটুনি তাদের।
শিশু শ্রমিক আমিন স্থানীয় একটি স্কুলের ৭ম শেন্রীর ছাত্র। স্কুল ছুটি শেষে ঘাটে কুলির কাজ করে সে। আমিন জানায়, তার বারা আ: হক তাকে পড়াতে চায় না, কাজ করে খেতে বলে। কিন্তু মনবল না হারিয়ে এখন আমি পড়া ফাকে শ্রম বিক্রি করছি। এতে উপার্জিত টাকা ব্যায় হচ্ছে পড়ালেখার খরচ।
এদিকে অল্প বয়সে শ্রম বিক্রির কারনে শিশুরা শারিরিক ও মানুষিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান ভোলার সিভিল সার্জন ডাক্তার রথীন্দ্র নাথ মজুমদার। তিনি বলেন, এসব শিশুরা অতিরিক্ত শ্রম বিক্রি করায় বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়ে থাকে, অপুষ্টিতে ভুগে থাকেন।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো: সেলিম উদ্দিন বলেন, শিশু শ্রম বন্ধে নানা পরিকল্পনার হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঝড়ে পড়া শিশুদেরকেও স্কুলমুখীর করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:২২:২৯   ৪৯০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


বিজয়ী হলে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো: মোশারেফ হোসেন
মটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ প্রার্থীর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
ভোলা পৌরশহর ও বাজারে নেই পাবলিক টয়লেট ॥ জনগনের ভোগান্তি চরমে
মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
শিক্ষা বিমুখ জেলেপল্লীর অধিকাংশ শিশু, জড়াচ্ছে বাপ-দাদার পেশায়
বেসরকারিভাবে শতভাগ পাশের হারের শীর্ষে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
বিভাগীয় পর্যায়ে লোক ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ভোলার মেয়ে অহনার ১ম স্থান অর্জন
আনারস মার্কায় ভোট দিবেন এটাই আপনাদের কাছে আমার চাওয়া: মোশারেফ হোসেন
নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ, সবাই কেন্দ্রে এসে ভোট দিবেন: মোহাম্মদ ইউনুছ
দালালদের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব জীবন ॥ চরফ্যাশন উপজেলার পাচঁ প্রবাসীর আর্তনাদ!



আর্কাইভ