উপকূল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » উপকূল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি
সোমবার, ৩১ মে ২০২১



সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশের উপকূলে কঠিন আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সমূহের যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়েছে। নদী সাগর সংলগ্ন জেলা উপজেলা সমূহের মানুষের ঘরবাড়ির ক্ষতি, অর্থনৈতিক ক্ষতি, ফসলের ক্ষতি, গবাদি পশুসহ বিভিন্নভাবে পুরো উপকূলের মানুষ কমবেশি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ভোলার মনপুরাসহ বিভিন্ন দ্বীপচরের মানুষদের ‘ইয়াস’পরবর্তী দুরবস্থা হাহাকার দেখলে যে কোন মানুষের মন ভারাক্রান্ত হয়।
যদিও এবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা প্রচেষ্টাও ছিল। তথাপিয় বিভিন্ন স্থানে বেরিবাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়েছে, বিভিন্ন চরের গরু-মহিষ বানের পানিতে ভেসে গেছে, মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সাজানো বাগান ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বহু মানুষ নিঃস্ব অসহায় হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবারসহ টুকটাক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে, সেটা কোনো অবস্থায়ই পর্যাপ্ত নয় এবং এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য খুবই নগণ্য।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোকে বন্যাও ভাঙ্গন থেকে সংরক্ষণ এবং উপকূলের উন্নয়নের লক্ষ্যে “উপকূল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ” প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে দাবী তোলা হয়েছে।
এই দাবিটি খুবই সঙ্গত এবং সময় উপযোগী। আমরা জানি আজ থেকে চার দশকের বেশি আগে সরকার ‘দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করেছিল, সম্ভবত জিয়াউর রহমান সরকারের সময়ে। এই বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন আমাদের ভোলা-২ এর সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযুদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান (হাইকমান্ড সিদ্দিক)। এ সংস্থার পক্ষ থেকে সেই সময় থেকে পরবর্তী বেশ কিছুটা সময় ধরে ভোলার বিভিন্ন দ্বীপের উন্নয়ন, সবুজ বেষ্টনী তৈরি, সাইক্লোন শেল্টারসহ দ্বীপসমূহের উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা পালন করেছে। ওয়াবদার বেরি বাঁধ নির্মাণেও এই সংস্থার বিশেষ অবদান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের কোন অথরিটি নেই। যে সংস্থা বিশেষভাবে দ্বীপচরের মানুষদের ভোগান্তি থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করবে। চরাঞ্চল সমূহের উন্নয়ন, উপকূলের সংরক্ষণ, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ব্লক ফেলে নদীর ভাঙ্গন রোধ এবং বন্যা প্রতিরোধ উপযোগী ভবন নির্মাণে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ ধরনের একটি সরকারি কর্তৃপক্ষ এখন অপরিহার্য।
আমরা মনে করি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছেন। হাওর-বাওর, সুন্দরবন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে। সেক্ষেত্রে উপকূল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করাটা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। উপকূলের কোটি কোটি মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। বন্যা জলোচ্ছ্বাস নদীর ভাঙ্গন এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূল তথা চরাঞ্চলের মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত ঘটে থাকে। এসবের সাথে সংগ্রাম করেই তারা তাদের জীবন প্রবাহ চালু রাখে। তাই উপকূলকে রক্ষা করা তথা কোটি কোটি  মানুষকে সমূহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আর সেটা করার জন্যই প্রয়োজন উপকূল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠা করা। যে সংস্থার একমাত্র কাজ হবে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ সমূহর সংরক্ষণ করা, ভাঙ্গন প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া, বন্যার জলোচ্ছ্বাস থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা, উপকূলের জনগণের ফসল গবাদিপশু তাদের সামগ্রিক নিরাপত্তার তার জন্য এই সংস্থা কাজ করবে। আমরা আশা করবো দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন এবং অবিলম্বে উপকূল রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘উপকূল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এর প্রতিষ্ঠা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৮:০১   ৩৩৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ