নদীতে হঠাৎ করে পাঙ্গাস মাছ বাড়লো কিভাবে?

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » নদীতে হঠাৎ করে পাঙ্গাস মাছ বাড়লো কিভাবে?
শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০২২



বিশেষ প্রতিনিধি ॥
দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনার বেশ কিছু এলাকার জেলেদের জালে নদীতে বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, গত ছয় দিনে যত পাঙ্গাস ধরা পড়েছে তেমনটি সাধারণত দেখা যায় না।
বরিশালের মাছের আড়তদার মো: জহির সিকদার বলেন, ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু করে তিন দিনে প্রায় সাড়ে ছয় শ’ মণ পাঙ্গাস বরিশালের আড়তগুলোতে এসেছে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত শীতের শুরু আর শেষের দিকে নদীতে পাঙ্গাস ধরা পড়ে। কিন্তু এত পাঙ্গাস এভাবে কখনো আসতে দেখিনি। বিশেষ করে ২৯ তারিখেই প্রায় তিন শ’ মণ পাঙ্গাস এসেছে বরিশালের আড়তে।
সাধারণত নদী, বিল বা বন্যার পানি জমে এমন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা পাঙ্গাস পাওয়া যায়। যদিও বাজারে নদীর পাঙ্গাসের তুলনায় চাষ করা পাঙ্গাসই বেশি ও অনেক সস্তা দামে পাওয়া যায়।

---

একটি ১০/১২ কেজি ওজনের নদীর পাঙ্গাস মাছ যেখানে ৮০০-১০০০ টাকার মত প্রতি কেজিতে বিক্রি হয় সেখানে চাষের মাছের কেজি ওজনভেদে ১৫০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশের নদীতে এক সময় পাঙ্গাস মাছ প্রচুর ধরা পড়লেও একসময় এটি খুবই কমে গিয়েছিল। যদিও সরকারি ও বেসরকারি নানা পদক্ষেপের কারণে গত ছয় থেকে সাত বছর ধরে নদীতে আবার পাঙ্গাসের দেখা মিলছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ডফিশের বিজ্ঞানী ড. হেদায়েত উল্লাহ।
সরকারের হিসেব অনুযায়ী ২০১৫-১৬ সালে নদীর পাঙ্গাস ধরা হয়েছিল ৩৬১ মেট্রিক টন এবং এর পর থেকে ক্রমাগত বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ সালে ৯২৬ মেট্রিক টন পাঙ্গাস পাওয়া গিয়েছিল নদীতে।
সুস্বাদু এই মাছটি বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। দ্রুত বর্ধনশীল ক্যাটফিশ প্রজাতির এ মাছটির একটি সর্বোচ্চ ৬০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
নদীর পাঙ্গাস আসলেই কী প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে?
আড়তদার মো: জহির সিকদার বলেন, শুধু বরিশালের আড়তেই ২৯ অক্টোবর থেকে পরবর্তী তিন দিন সাড়ে ছয় শ’ মণের মত পাঙ্গাস এসেছে নদী থেকে। যা গত বছর এই সময়ে এর অর্ধেকেরও কম ছিল।
সিকদার বলেন, ‘বাজারগুলো দেখেন নদীর পাঙ্গাসে সয়লাব। এত মাছ আমরা আশাও করিনি। অনেক আড়তে ইলিশের চেয়ে পাঙ্গাস বেশি এসেছে।’
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য কেন্দ্রও দেশের অন্যতম বড় মাছের যোগানদাতা। সেখানকার আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জমাদ্দার বলেন বরিশালের মতো না হলেও সেখানে গত কয়েক দিন পাঙ্গাস বেশ ধরা পড়ছে।
তবে বরিশাল মৎস্য অধিদফতরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলছেন, এই মৌসুমে ওই অঞ্চলে কত পাঙ্গাস ধরা পড়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো তাদের হাতে আসেনি।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন আড়ত ও মৎস্য অবতরণগুলো থেকে বলা হচ্ছে যে নদীর পাঙ্গাস এবার অনেক ধরা পড়েছে। তবে সংখ্যা বা পরিমাণ জানতে আমাদের আরো সময় লাগবে। এখনো যা তথ্য আছে তাদের আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ পাঙ্গাস মাছ গত কয়েক দিনে ধরা পড়েছে।’
একই ধরণের কথা বলেছেন ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল্যাহ। তিনি জানান, জেলার মৎস্য কেন্দ্রগুলো থেকে পাঙ্গাস বেশি ধরা পড়ার তথ্য আসলেও পরিমাণ বা বিস্তারিত তথ্য আসতে আরো সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, পাঙ্গাস মাছ স¤পর্কিত তথ্য সরকারের মৎস্য বিভাগ সাধারণত বছরে একবার দিয়ে থাকে। আর দেশের মৎস্য আইন অনুসারে ১২ ইঞ্চির নীচে (৩০ সেন্টিমিটার) পাঙ্গাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
নদীতে কিভাবে বাড়লো পাঙ্গাস?
মৎস্য কর্মকর্তা, আড়তদার ও গবেষকদের মধ্যে চাঁই দিয়ে মাছ ধরা ও বেহুন্দি জাল ব্যবহার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারায় নদীতে পাঙ্গাস মাছের বড় হবার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এবার ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় দু’মাস নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। বছরে দু’বার এভাবে মাছ ধরা এখন বন্ধ থাকে।
ফলে এ সময়ে পাঙ্গাস মাছও অবাধ বিচরণের সুযোগ পায়। আবার প্রজনন মৌসুমের পর ইলিশের পোনায় ভরে যায় বেশ কিছু এলাকা। আর ইলিশের পোনা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে পাঙ্গাস মাছ।
ড. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ইলিশ মাছ প্রজনন মৌসুমে ধরা বন্ধ করায় ইলিশ যেমন বাড়ছে, তেমনি আবার এর কারণে নদীতে পাঙ্গাসও বাড়ছে। এ কারণে এবার বেশ বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস পাচ্ছে জেলেরা।’’
তার মতে ইলিশের জন্য পাঁচটি অভয়ারণ্য আছে ওই অঞ্চলে। আবার ইলিশের যে প্রজনন মৌসুমের পাঙ্গাসও তখন ডিম ছাড়ে কিংবা ছোটো পাঙ্গাসগুলো ইলিশের পোনা খেয়ে থাকে।
ফলে ইলিশের জন্য যে উদ্যোগ সেটি পাঙ্গাসসহ কয়েকটি মাছের জন্য কাজে লেগেছে। এছাড়া দু’মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকার ফলে উৎপাদন বাড়ে। আবার এ সময় পাঙ্গাস নদীতে বিচরণ করতে থাকে।
বিজ্ঞানী ড. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর প্রথম ১০/১৫ দিন এটা বেশি দেখা যায়। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগও আছে পাঙ্গাস নিয়ে। এর ইতিবাচক প্রভাব হিসেবেও নদীতে পাঙ্গাস বাড়ছে।’
এছাড়া বরগুনা কালমেঘা পাথরঘাটার পাঙ্গাশ কনজারভেশন ক্লাব করা হয়েছে শতাধিক জেলেকে নিয়ে এবং তাদের পাঙ্গাস বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছো, যাতে তারা চাই দিয়ে ধরে না ফেলে।
বরিশাল অঞ্চলের তেঁতুলিয়া, বিশখালী, আন্ধারমানিক, মেঘনা ও পদ্মা মেঘনার সংযোগস্থলই মূলত দেশীয় পাঙ্গাসের পোনার অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র।
তবে বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের মাধ্যমে নির্বিচারে পাঙ্গাসের পোনা ধরাসহ বিভিন্ন কারণে নদী থেকে একসময় এ মাছটিই হারিয়ে যাচ্ছিল। কারণ নদীতে জেলেরা বড় বড় চাঁই পেতে একধরনের খাবার দিত যাতে অসংখ্য পাঙ্গাসের পোনা আটকা পড়ত।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলছেন, কয়েক বছরের চেষ্টায় চাঁই আর বেহুন্দি জালের ব্যবহার পটুয়াখালীতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভোলাতেও এগুলো নিয়ে বেশ ভালো কাজ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ফলে ছোটো পাঙ্গাসগুলো নদীতে বড় হবার সুযোগ পাচ্ছে। আবার ইলিশ অভিযানের কারণে প্রচুর ইলিশ পোনা নদীতে বিচরণ করায় পাঙ্গাস পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। নদীতে বড় সাইজের এত পাঙ্গাস পাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলোই প্রধান ভূমিকা রেখেছে।’
সূত্র : বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৯:৪৫   ৩৩৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ভোলায় লাজফার্মা মডেল ফার্মেসির উদ্বোধন
ভোলা মহাজনপট্টিতে স্বপ্ন আউটলেটের শাখা উদ্বোধন
লালমোহনে ১২৬ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
ভোলার গ্যাস উৎপাদন: কূপ খননে আরও চড়া দাম চায় গাজপ্রম
ভোলায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই
নদীতে মিলছে না কাংখিত ইলিশ, হতাশ জেলেরা
কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের শ্রমিকরা
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা
লালমোহনে তীব্র গরমে মুরগির খামারিদের বাড়ছে দুশ্চিন্তা



আর্কাইভ