আদিল হোসেন তপু ॥
ভোলায় দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতা ও সরকারি তহবলিরে অভাবসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান করা যায়নি। ফলে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতকি মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেলেও এর ইতিহাস ও গুরুত্বরে ধারণা সর্ম্পকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস ও তাৎপর্য ধরে রাখতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সহধর্মিনী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ভোলা সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ। ভোলার প্রাণ কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত এই নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ দশকেও গড়ে উঠেনি ভাষা শহীদদের স্মরণে কোন স্মৃতিস্তম্ভ। একই চিত্র ভোলার সরকারি-বেসরকারি প্রায় দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভরসা পাশের কোন শহীদ মিনারে। যেগুলো বেশিরভাগই পরে থাকে অবহেলা অযতেœ। ফলে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। শুধু আলোচনা সভা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
কলেজের শিক্ষার্থী শ্রবন্তী, ইথি, কাব্যসহ আরো অনেক শিক্ষার্থী জানান, প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। অথচ আমাদের কলেজটি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সহধর্মিনী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মা’ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মজিবের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। এতে করে মেয়েদের নানা ধরণের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই দ্রুত শহীদ মিনার নির্মানের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
কলেজের আরো শিক্ষার্থী, শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিনটি পালন করতে পারি না। দুঃখের বিষয় আমাদের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শহীদ মিনার শ্রদ্ধা জানাতে হয়। নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার থাকলে তারা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালনের সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হতে পারবে।
শিক্ষার্থীরা আরো জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় অস্থায়ী শহীদ মিনার অথবা ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডের নিচে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ পায় না। বাধ্য হয়ে দূরের শহীদ মিনারে যেতে হয়। তাই শহীদ মিনার নির্মানের দাবি শিক্ষার্থীরা।
যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ যেমন তৈরি হবে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতি গভীর টান অনুভব হবে। তাই তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার স্থাপনের জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীও অভিভাবকেরা।
জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
একুশের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ হাজার ৬১৭টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ১৭৫টিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৯:৪৬ ২০২ বার পঠিত