১৭ রমজান: ঐতিহাসিক বদর দিবস

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » ১৭ রমজান: ঐতিহাসিক বদর দিবস
শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১



গতকাল শুক্রবার ছিল ১৭ রমজান ‘ঐতিহাসিক বদর  দিবস’। এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেতৃত্বে মুসলমানরা সর্বপ্রথম অস্ত্র হাতে নিয়ে তাদের তিন গুণের বেশি শক্তিশালী কাফের বাহিনীর সাথে মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়ে বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। হিজরী দ্বিতীয় সালের ১৭ রমজান, ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে ১১ ই মার্চ মদিনা থেকে ৭০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক এলাকায় এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। একদিকে আক্রমণকারী তখনকার সময়ের আধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত বিশাল বাহিনী অন্যদিকে মুষ্টিমেয় কিছু আদর্শবাদী আল্লাহর রাহে নিবেদিত মজলুম মানুষ যারা নিজেদেরকে এবং স্বীয় আদর্শ ও রাষ্ট্র রক্ষার জন্য প্রতিরোধ যুদ্ধে বাধ্য হয়েছিল।
মূলত ইসলাম এবং মুসলমানদের নাম নিশানা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মক্কার কাফেররা নানাভাবে চেষ্টা করছিল। কাফেরদের সরদার আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে বিশাল অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করে নিয়ে আসার পথে নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করে। তার ধারণা ছিল মদিনা থেকে মোহাম্মদ সাঃ এর নেতৃত্বাধীন মুসলমানরা তাকে আক্রমণ করে অস্ত্রশস্ত্র রেখে দেবে। তাই তিনি মক্কায় খবর পাঠিয়ে ছিলেন তাকে সাহায্য করার লক্ষে মক্কা থেকে একটি বাহিনী মদীনার দিকে আসার জন্য। মক্কার কাফেরদের অন্যতম সরদার আবু জেহেলের নেতৃত্বে সহস্রাধিক কাফের মুশরিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মদিনা আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে মদীনার দিকে অগ্রসর হয়।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই হিসসালাম এ খবর শুনে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে মাত্র ৩১৩ জনের একটি বাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হন। তাও বলতে গেলে অস্ত্রশস্ত্র হিম, রোজাদার বাহিনী নিয়ে তিনি কাফেরদেরকে মোকাবিলা করার জন্য এগিয়ে যান। অন্যদিকে কাফের বাহিনীর কাছে শতাধিক ঘোড়া, তিনশতাধিক উঠ ও তৎকালীন সময়ের আধুনিক সব অস্ত্র মজুদ ছিল।
কিন্তু মহান আল্লাহর রহমত এবং সাহায্যে আদর্শের জন্য প্রাণ দিতে উৎস্বর্গ করতে প্রস্তুত মুসলিম বাহিনী সেই বিশাল কাফের বাহিনীর উপরে বিজয়ী হয়ে ইতিহাসে এই দিনটিকে চির-স্মরণীয় করে রেখেছে।
বদরের যুদ্ধে মুসলমানরা সর্বপ্রথম কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল এবং তারা যোগ্যতার সঙ্গে কাফেরদের আক্রমণ প্রতিহত করেছিল। এর আগ পর্যন্ত সত্য দ্বীন গ্রহণ করার কারণে মুসলমানরা শুধু কাফেরদের হাতে নির্যাতিত নিপীড়িত হয়েছে। এমনকি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে তার নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করতে হয়েছিল। সেখানেও কাফের মুশরিকদের আক্রমনকে তিনি প্রতিহত করে বিজয়ী হয়ে প্রমাণ করেছেন সত্য এবং দ্বীনের উপরে থাকলে আল্লাহর সাহায্য তাদের জন্য অবধারিত।
ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ দিবসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দিবসে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মাফিক অল্পসংখ্যক আদর্শবাদী মানুষ তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে বিশাল সংখ্যক প্রতিপক্ষের উপরে বিজয়ী হয়েছিল। ইসলাম পৃথিবীতে থাকবে কি থাকবে না তার ফয়সালা হয়ে যায়।
এই দিনটি বিশ্ব মুসলিমের জন্য একটি উদাহরণ। মুসলমানরা যদি তাদের আদর্শ তথা ইসলামের উপর অবিচল থাকে, তাহলে শত্রু যত শক্তিশালীই হোক ইসলাম বিজয়ী হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকের বিশ্বে চাই দু’শ কোটি মুসলমান থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে অমুসলমানদের দ্বারা মুসলমানরা নির্যাতিত নিপীড়িত হচ্ছে। এর কারণ একটাই তারা তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।
তাই ঐতিহাসিক ১৭ রমজান আমাদেরকে আবারো ডাক দিয়ে যায়, ইসলামের আদর্শকে ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন ও রাজনৈতিক জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে সত্য ও আদর্শের প্রতিষ্ঠা করা। বদরের আদর্শকে অনুসরণ করে আজকের মুসলমানরা যদি ইসলামকে তথা কোরআন সুন্নাহকে সত্যিকার অর্থে ধারণ করতে পারে তাহলে প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৯:৩৬   ৩১৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ