সাহিত্য আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ

প্রচ্ছদ » সাহিত্য ও সংস্কৃতি » সাহিত্য আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ
শুক্রবার, ৯ জুন ২০১৭



---
ড. ফজলুল হক সৈকত

‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার/চরণধুলার তলে।/সকল অহংকার হে আমার/ডুবাও চোখের জলে।/নিজেরে করিতে গৌরব দান/নিজেরে কেবলই করি অপমান,/আপনারে শুধু ঘেরিয়া ঘেরিয়া/ ঘুরে মরি পলে পলে।/… আমারে না যেন করি প্রচার/আমার আপন কাজেÑ/তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ/আমার জীবন মাঝে।’
নোবেল বিজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই ‘গীতাঞ্জলী’তে তাঁর মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রভুর প্রতি প্রবল মিনতি, আর আস্থার সমাবেশ আছে তাঁর ওইসব গীতে। সৃষ্টি-রহস্য-সন্ধান আর ‘সব চাওয়া সব পাওয়ার’ হিসাব মেলাতে গিয়ে তিনি বারবার প্রভুর মৌনতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তিনি নিঃসংশয়চিত্তে আত্মসমর্পণ করেছেন। আর্জেন্টিনার কবি ‘সুর’ পত্রিকার সম্পাদক ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ১৯১৪ সালে দাম্পত্য-অশান্তি আর ব্যক্তিগতভাবে মানসিক জটিলতায় ভুগছিলেন, যখন তিনি প্রায় আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তখন রবিঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলী’র সুর তাঁকে নতুন করে প্রাণ-প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিল। সৃজনশীলতার বিকাশে সুষ্টিকর্তা যে সবচেয়ে বড় ও একমাত্র ভরসা হতে পারেÑ তা সে দিন ভিক্টোরিয়া টের পেয়েছিলেন। তার পরের ইতিহাস তো অনেকেরই জানা। রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ এবং অকৃত্রিম বন্ধুত্ব হয়েছিল প্রায় ৩০ বছরের ভিনদেশী এই কবির। ভিক্টোরিয়া রবির কাছ থেকে মানসিক পরিভ্রমণের, বিশেষ করে ¯্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণের পাঠ গ্রহণ করেছিলেন।
যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা সৃষ্টিকর্তা বিষয়ে মানুষের চিন্তার অস্পষ্টতা ও ভাবনার দূরত্ব বিষয়ে তাঁদের ধারণা প্রকাশ করেছেন। মানবজীবনে সময়ের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে নিজেদের অনুভূতির কথাও ব্যক্ত করেছেন। তবে সবকিছুর ভেতরে যেন এক অবিরাম অগ্রগমন আর আনন্দধারার অনুসন্ধানে নিয়োজিত সাহিত্য-সাধকগণ। কখনো কখনো কারো কারো বাউল মন এক-অভিন্ন ও প্রিয় ¯্রষ্টার প্রতি নিমগ্ন হয়েছে। অদৃশ্য বিধাতার বিচিত্র-দৃশ্য রহস্য কিংবা উপাদানের প্রতিও কারো কারো প্রখর নজর নিবদ্ধ হয়েছে। দৃশ্য- দেবতার বাসনার কথাও আমরা দেখেছি সাহিত্যের নানা স্তরে ও চিন্তায়। জীবনের সমাপ্তি-জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়েও কোনো কোনো সহিত্য-শিল্পী স্পর্শ করতে চেষ্টা করেছেন নীরব অনাদি-অনন্ত সুর। সৃষ্টিকর্তা এবং সৃষ্টির অপার সমাহার যে মানুষের সব প্রেরণা ও শক্তির উৎস এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত ধারণায় পৌঁছতে পেরেছেন। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য ও সহানুভূতি প্রার্থনার প্রকাশ আছে বহু কবিতা- ছোটগল্প-উপন্যাস ও নাটকে। সঙ্গীতে সঙ্গীতে বেজে চলেছে চিন্তার জড়তামুক্তি আর সর্বত্রবিস্তারি ¯্রষ্টার রহমতের বাণী। ‘নীরব নাথ’ ‘নীরব রাতে’ যে ‘বীণাখানি’ বাজিয়ে চলেছেন, তার কতটুকুই বা আমরা চিন্তা করতে পারি!
উধহ গরষষসধহ এর ডধু ড়ভ ঃযব চবধপবভঁষ ডধৎৎরড়ৎ উপন্যাসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এক অ্যাথলেটের জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। লেখক ওই অ্যাথলেটের রোমান্টিক ও ম্যাজিক্যাল জীবন-জার্নিতে আলো ও অন্ধকার, শরীর, মন এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি অপার নিমগ্নতার কথা পাঠককে জানাতে চেষ্টা করেছেন। আমরা জানি, ভবের হাটের ‘সভা’ একদিন ভেঙে যাবে। মিলিয়ে যাবে মানবের কোলাহল। ‘বিশ্বগানের ধারা বেয়ে’ বাজতে থাকবে সৌরজগতের অপার সঙ্গীত। ¯্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেক সংশয়ের কথাও আছে। কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘প্রশ্ন’ কবিতায় লিখেছেন : ‘ভগবান, ভগবান, রিক্ত নাম তুমি কি কেবলই?/নেই তুমি যথার্থ কি নেই?/তুমি কি সত্যিই/আরণ্যিক নির্বোধের ভ্রান্ত দুঃস্বপন?/ তপন্ত তপন/সাহারা- গোবির বক্ষে জ্বলে না কি তোমার আজ্ঞায়?/ চোখের ইঙ্গিতে তব তমি¯্রা করাল/ভারাক্রান্ত গগনেরে করে না কি স্বচ্ছন্দে নিক্ষেপ/উন্মত্ত, উদ্বেল আৎলান্তিকে?/ স্তব্ধ গৌরীশংকরের বুকে/দিগম্বরী ঝঞ্ঝা, সে কি বাজায় না তোমার বিষাণ/তা-বের উন্মথ হিন্দোলে?… আজিকে আর্তের কাছে পারিবে কি করিতে প্রমাণ/ নও তুমি নামমাত্র/তুমি সত্য, তুমি ধ্রুব, ন্যায়নিষ্ঠ তুমি ভগবান?’Ñ সুধীনের ভাবনায় আমরা যেমন সংশয়ের উপস্থিতি দেখি, তেমনি দেখি সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি-বিষয়ে নানা রহস্যের আর উপাদানের ইঙ্গিত। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসে জীবনের ব্যর্থতা আর গ্লানি বহনকারী নারী বসন্তের মুখে আমরা একটি আকুতির কথা শুনতে পাই: ‘এই খেদ মোর মনে/ভালবেসে মিটল না সাধ কুলাল না এ জীবনে।/ হায়! জীবন এত ছোট কেনেÑ ? এ ভুবনে?’
গল্পকার জো লিওনার্দো বলেছেন: ‘ ও’াব শহড়হি এড়ফ’ং ষড়াব ঃযৎড়ঁময রঃং সধহু সধহরভবংঃধঃরড়হং: সু যঁংনধহফ, ঃযব সুৎরধফ ড়ভ ড়ঃযবৎ ঝড়ঁষং যিড় পধসব ধহফ বিহঃ রহ সু ষরভব, বাবহ সু পধঃং. ইঁঃ রঃ ধিং হবাবৎ বহড়ঁময. ও ধিহঃবফ ঃড় শহড়ি এড়ফ, ঁঢ় পষড়ংব ধহফ ঢ়বৎংড়হধষ.’ ¯্রষ্টা-সম্পর্কে লিওনার্দোর ধারণা কী তা জানতে, তাঁর একটি ছোটগল্প থেকে খানিকটা পাঠ নিচ্ছি: ঙহব ভৎধমৎধহঃ ংঢ়ৎরহম সড়ৎহরহম, ধভঃবৎ ধ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎষু ফরংপড়ঁৎংব, বি ফবপরফবফ ঃড় াবহঃঁৎব ঃড় ধ হবধৎনু ঃড়হি ভড়ৎ ষঁহপয. ডব ফৎড়াব ধষড়হম ধ ংঃৎবঃপয ড়ভ পড়ঁহঃৎু ৎড়ধফ নড়ৎফবৎবফ ড়হ বরঃযবৎ ংরফব নু ঃধষষ মৎধংংবং. ঝুঁরব, যবৎ ঢ়ধষব নষঁব বুবং ষধৎমব ধহফ ধিঃবৎু, পধষষবফ ড়ঁঃ ধ ঃড়ৎঃড়রংব যধফ লঁংঃ বসবৎমবফ ভৎড়স ঃযব মৎধংংবং ড়হ ড়ঁৎ ৎরমযঃ ংরফব. ঋড়ষষড়রিহম যবৎ ঢ়ড়রহঃরহম ভরহমবৎ, বি ংঢ়ড়ঃঃবফ রঃ, নড়ননরহম যবধফ ধহফ ধষষ, ংষড়ষিু ড়ধঃং ধিু ধপৎড়ংং ঃযব মৎধাবষষু বফমব ড়ভ ঃযব ৎড়ধফ. ঝুঁরব ধিং পষবধৎষু ফরংঃৎধঁমযঃ. ওঃ’ষষ মবঃ যরঃ নু ধ পধৎ! ডব মড়ঃঃধ ংঃড়ঢ় ধহফ ংড়সবঃযরহম! চষবধংব, ষবঃ’ং ংঃড়ঢ়’
ঙঁৎ ংঢ়রৎরঃঁধষ পড়হাবৎংধঃরড়হং যধফ ঢ়ঁঃ ঁং রহ ধ ষড়ারহম-ধষষ-ষরভব. ঙভ পড়ঁৎংব, বি ড়িঁষফ ংঃড়ঢ় ধহফ যবষঢ় ঃযব ঃড়ৎঃড়রংব. ঐড়ি পড়ঁষফ বি ফড় ড়ঃযবৎরিংব? টহভড়ৎঃঁহধঃবষু, যিরষব ড়ঁৎ ষড়াব ধহফ পড়সঢ়ধংংরড়হ সধু যধাব নববহ ঢ়ষবহঃরভঁষ, ড়ঁৎ ঃধষশ যধফ হড়ঃ ড়হ পৎবধংবফ ড়ঁৎ রিংফড়স নু সঁপয. ঙঁৎ বহপড়ঁহঃবৎ রিঃয ঃযব পৎবধঃঁৎব ড়িঁষফ নৎরহম ধ ংঃধৎষরহম ৎবধষরুধঃরড়হ রহঃড় ংযধৎঢ় ভড়পঁং ড়ঁৎ ষরঃঃষব মৎড়ঁঢ় ড়ভ এড়ফ-ংববশবৎং.
আত্মতত্ত্বজ্ঞান বা আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারে। এটি মানসিক, পারমার্থিক ও আত্মা-সম্পর্কীয় ব্যাপার। আত্মশুদ্ধির এক চিরন্তন ধারা। ‘উমর ফারুক’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন : ‘পয়গম্বর নবী ও রসুলÑ এঁরা ত খোদার দান!/তুমি রাখিয়াছ, হে অতি-মানুষ, মানুষের সম্মান!/ কোরান এনেছে সত্যের বাণী, সত্যে দিয়েছে প্রাণ,/তুমি রূপÑ তব মাঝে সে সত্য হয়েছে অধিষ্ঠান।’ তবে এ কথা ঠিক যে, বিধাতার প্রতি বিশ্বাস হয়তো সবার খুব সহজে ঘটে না। এর জন্য প্রয়োজন অসীম ধৈর্য ও সাধনার। নিরন্তর পাঠ, জ্ঞান-অন্বেষাই পারে ¯্রষ্টার সাথে মানুষের মনের মিলন ঘটাতে। আধ্যাত্মবাদে নিবিষ্ট সাহিত্যিকেরা সে চেষ্টাই করে চলেছেন। এশিয়ার বিখ্যাত দার্শনিক ও ধর্মীয় গুরু নোবেল বিজয়ী তিব্বতি চিন্তাবিদ দালাই লামা তাঁর ‘দ্য আর্ট অব হ্যাপিনেস’ গ্রন্থে ¯্রষ্টার সান্নিধ্যের কথাই বলতে চেষ্টা করেছেন। সংলাপ, কাহিনী এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে তিনি সুখের প্রতি মানুষের পজিটিভ মানসিকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন : ‘ঃযব াবৎু সড়ঃরড়হ ড়ভ ড়ঁৎ ষরভব রং ঃড়ধিৎফ যধঢ়ঢ়রহবংং.’ বার্ট্রান্ড রাসেলও ‘সুখ’ গ্রন্থে আত্মার সুখের সন্ধান করেছেন। সত্যি কথা বলতে কী, পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তাই মানুষের বেস্ট ফ্রেন্ড। তাঁর মতো করে আর কেউ ভালোবাসতে পারে না। তাঁর মতো করে আর কেউ আমাদের কেয়ার নিতে পারে না। সব কিছুই তাঁর নির্দেশে চলেÑ তিনি সব শক্তির উৎস। কবি ঈড়ৎরহধ ঈড়নঁৎহ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে রচিত ও ডরষষ ঝবব ণড়ঁ অমধরহ কবিতায় জানাচ্ছেন ¯্রষ্টা-বিষয়ক অনুভবের কথা : ‘ঞযব ংঁহ ংযধষষ ৎরংব,/ধহফ ংঁৎব ঃড় ংবঃ./ঐবৎ ঃরসব যধং পড়সব,/যধাব হড় ৎবমৎবঃ./ ঐবৎ ষরভব ংযব ষরাবফ,/বি ংঁৎব ধষষ শহড়.ি/অ নবঃঃবৎ ঢ়ষধপব,/ংযব যধং ঃড় মড়./জবলড়রপব ঃড়ফধু/রঃ’ং ধঃ ধহ বহফ./অহফ ংযব রিষষ ংবব ঁং,/ড়হপব ধমধরহ.’
মৃত্যু আমাদের কাছে এক বিরাট বিস্ময়। ‘কী ঘটবে, যখন আমাদের আত্মা শরীর ত্যাগ করবে?’Ñ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা এবং এর জবাব আমাদের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। যখন আমাদের প্রিয়জন মারা যায়, তখন আমরা বলি এবং অনুভব করিÑ ‘ সে এখানে ছিল এবং এখন নেই’, ‘কোথায় চলে গেল সে?’, ‘ কোথায় গেল তার আত্ম?’ মুক্ত আত্মার চিরঞ্জীব সত্তা, তার বিশেষ থেকে নির্বিশেষে যাত্রা, সীমা থেকে অসীমে পরিভ্রমণ, আকারবদ্ধতা থেকে নিরাকারে মিলিয়ে যাওয়াÑ এই মহামুক্তির বারতা পাঠের জন্য আমরা কবি ফররুখ আহমদের ‘ডাহুক’ কবিতা থেকে কিছুটা উদ্ধৃত করে বর্তমান নিবন্ধ শেষ করতে চাই : ‘গাঢ়তর হলো অন্ধকার।/মুখোমুখি ব’সে আছি সব বেদনার/ছায়াচ্ছন্ন গভীর প্রহরে।/রাত্রি ঝ’রে পড়ে/পাতার শিশিরে…/জীবনের তীরে তীরে…/ মরণের তীরে তীরে…/বেদনা নির্বাক। সে নিবিড় আচ্ছন্ন তিমিরে/ বুক চিরে, কোন কান্ত কণ্ঠ ঘিরে দূর বনে ওঠে শুধু তৃষাদীর্ণ ডাহুকের ডাক।’

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৭:০০   ৬১০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য ও সংস্কৃতি’র আরও খবর


ভোলায় দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা
দিলরূবা জ্যাসমিনের উপন্যাস “তবুও ছুঁয়ে যায়”- এর মোড়ক উন্মোচন
আজকের ভোলা প্রতিনিধি কবি নুরুল আমিনের কাব্যগ্রন্থ ‘ধান শালিকের কাব্যমালা’ প্রকাশ
দৌলতখানের কৃতি সন্তান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কবি হায়াত মাহমুদ অসুস্থ ॥ সকলের দোয়া প্রার্থী
ভোলায় বর্নাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল গণজাগরনের সাংস্কৃতিক উৎসব
ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের সাহিত্য
কারার ঐ লৌহকপাট
উপমা না বুঝলে সাহিত্য বোঝা দায়
ভোলার দুই দিনব্যাপী সাহিত্য মেলার শুরু
উপন্যাস : রীতি ও প্রকৃতি



আর্কাইভ