ধুলামুক্ত কংক্রিট সড়কের অপরূপ মনপুরা

প্রচ্ছদ » জেলা » ধুলামুক্ত কংক্রিট সড়কের অপরূপ মনপুরা
শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৮



---
বিশেষ প্রতিনিধি ॥

অনেকে বিদেশের উদাহরণ টেনে বলেন, অমুক দেশে রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে পুলিশ দেখা যায় না। আর বিদেশের উদাহরণ টানতে হবে না। ভোলার মনপুরা দ্বীপেও কয়েক দিন ঘুরেও পুলিশের দেখা মেলেনি। সারারাত রাস্তায় একা একা ঘোরাঘুরি করলেও কেউ আপনাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করবে না। তাই বলে ভাববেন না নিরাপত্তা নেই।
মনপুরা দ্বীপবাসীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন সবাই। ছোট দ্বীপের সবাই একে অপরের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আত্মীয়তার বন্ধনেও আবদ্ধ। সবাই মিলেমিশে যেন এক শান্তির জনপদ গড়ে তুলেছে মনপুরা দ্বীপে।
মনপুরা ভোলা জেলার মূল ভূখ- থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরের এক অপরূপ দ্বীপ। এর তিন দিকে উত্তাল মেঘনা অন্যদিকে বঙ্গোপসাগর। মন রাঙানো সাজে সজ্জিত এই লীলাভূমি। অনেকে ঢাকায় অধিক শীতে কাঁপছেন, ভাঙা সড়কের যন্ত্রণা, তীব্র গাড়ির হর্ন সইতে পারছেন না। ধুলাবালি থেকে মুক্তি চান। তাহলে শীতে ঘুরে আসতে পারেন নয়ানাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্যের এক সবুজ বেষ্টনী দ্বীপ মনপুরায়।
যারা ঢাকায় থেকে নাগরিক যন্ত্রণায় অতিষ্ট তাদের জন্য মনপুরা এনে দেবে অনাবিল প্রশান্তি। ঢাকায় তীব্র শীত মানেই মনপুরায় নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। যানজটহীন সাজানো গোছানো এক বাগান যেন। শীত মাত্র তিন মাস তবে তীব্র নয় কখনোই।
মনপুরা দ্বীপের একটি লেক কংক্রিটের মসৃণ সড়কে চারিদিকে সারিবদ্ধ নারিকেল ও সুপারি গাছের সারি। কোথায়ও ধুলাবালি পাওয়া যাবে না। কখনো কখনো মিলবে ঝাউ গাছের সারি। বাতাসে ঝাউয়ের শাখার শন শন মন মাতানো শব্দ। এছাড়া আম, কাঁঠাল ও মেহগনি গাছও মিলবে। কোথায় বিটুমিন (পিচ) সড়ক নেই। ছোট ছোট ব্লক ব্লক করে কংক্রিটের ঢালাই করে দেওয়া। ফলে অতিবৃষ্টিতে সড়কের কোনো সমস্যা হয় না। ছয় মাসই এখানে বৃষ্টি হয়। ফলে সড়কে ধুলাবালি জমতে পারে না। পুরো মনপুরাই ধুলামুক্ত এক সবুজ বেষ্টনী।
অনাকাংখিতভাবে হঠাৎ হঠাৎ কংক্রিটের সড়কে পার হচ্ছে বিদেশি কুকুর। হঠাৎ করে মনে হবে বিদেশে চলে এসেছি। এসব কুকুরের প্রিয় খাদ্য ড্রাইকেক। স্থানীয়রা জানান, ৪০০ বছর আগে পর্তুগিজরা এই দ্বীপে বসবাস করতেন। তারাই এসব কুকুর দ্বীপে নিয়ে আসেন।
বাস ও ট্রাকের মতো বড় বড় যানবাহনের কোনো শব্দ নেই এই দ্বীপে। আর থাকবেই বা কেন কারণ এই দ্বীপের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত খুঁজলেও একটা বাস মিলবে না। এ দ্বীপের প্রধান যানবাহন মোটরসাইকেল। এছাড়া রয়েছে টেম্পু, অটোরিকশা ও বোরাক। সাইকিং করার জন্য এই দ্বীপ খুবই উপযোগী।
ছোট-বড় হাজারো পুকুরের দ্বীপ মনপুরা। মৎস্য আহরণ ও চাষ দ্বীপবাসীর জীবিকার প্রধান উৎস। বলা যায় নদীতে ইলিশ মাছ ধরা মনপুরাবাসীর উপার্জনের প্রধান উপায়। বছরে একবার মাত্র ধানের আবাদ ভালো হয়। এছাড়া স্বল্প পরিসরে মরিচ, বাঁধাকপি, মুগডাল ও মিষ্টি আলুর চাষ হয়।
মনপুরা দ্বীপে সরকারি ভবন ছাড়া সবই টিনের তৈরি। খাবার হোটেলগুলোও টিনের তৈরি। হোটেলে মিলবে হাঁসের মাংস ভূনা। মহিষের দুধের দধি, ইলিশ, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি, শোল, শিং, কই মাছ স্বস্তায় খাওয়া যাবে। এখানকার তাজা ইলিশ ও কোরাল মাছ রান্না খুব জনপ্রিয়। সঙ্গে ফ্রি খাওয়া যাবে আলু ভর্তা ও ডাল। গৌড় রসগোল্লাও বিখ্যাত মনপুরা দ্বীপে। তবে ছোট একটা রসগোল্লা খেতে গুণতে হবে ৩০ টাকা। এখানে হোম মেইড খাবার মানেই সতেজ।
মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন ভ্রমণপিপাসুদের মন রাঙিয়ে দেবে। মনপুরা দ্বীপ থেকে মেঘানার ৫০০ মিটার ভেতরে এটা নির্মিত। পর্যটক ও স্থানীয়দের মিলনস্থলে পরিণত হয় ল্যান্ডিং স্টেশনটি। রাতে এখানে বসলে, মনে হবে মেঘনা নদীর গভীরে ভাসছি। পানির ভয়ংকর শব্দে শুনে মনে হয় এই বুঝি রাক্ষুসি মেঘনা গিলে খাবে!
হাজারো নারিকেল ও সুপারি গাছের সারি চৌধুরী প্রজেক্টে। এই লেকের সৌন্দর্য পর্টকদের মুগ্ধ করবে।
মনপুরা বিছিন্ন দ্বীপ হওয়াতে যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে লঞ্চই একমাত্র ভরসা। তবে যখন তখনই লঞ্চ পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় লঞ্চ। সকাল ৭টা নাগাদ মনপুরা দ্বীপে পৌঁছানো যাবে।  সময় লাগে ১২/১৩ ঘণ্টার মতো। লঞ্চের ডেকের ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা, কেবিন ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। আবার ফেরার পথে মনপুরা রামনেওয়াজ লঞ্চঘাট থেকে দুপুর ২টায় লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৯:০৮   ৭৬৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


তজুমদ্দিনে সীমানা বিরোধের মামলায় ॥ ২১ বছর নির্বাচন বন্ধ মলংচড়া ইউনিয়নে
এবারও নির্বাচিত হলে আগের অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করবো: মোশারেফ হোসেন
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ: মোহাম্মদ ইউনুস
ভোলায় দুর্যোগের সম্মুখিন হওয়া মানুষদের বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়: জেলা প্রশাসক
লালমোহনে ১২৬ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
আনারস ও চশমা প্রতীকের প্রার্থী মোশারেফ- আজিজের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
মটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ মার্কায় ভোট চাইলেন ইউনুছ-পলাশ
ঝড়ে পড়ে যাওয়া মাদরাসা ঘর এক মাসেও মেরামত হয়নি
বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম আর নেই
তজুমদ্দিনের মেঘনায় চিংড়ি মাছের রেনু আহরনের আড়ালে চলছে নানান প্রজাতির মাছের পোনা নিধন



আর্কাইভ