মোঃ বেল্লাল নাফিজ ॥
ভোলা বিএমইটির সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অনিয়ম দুর্নীতির ও ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ থাকলেও ক্রমে বেপরোয়া হয়ে ঘুষ প্রকাশ্যে গ্রহণ করছেন তিনি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। সফটওয়্যার সমস্যা বলে চার পাঁচদিন ঘুরিয়ে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পযর্ন্ত ঘুষ নিয়ে ফিঙ্গার রাখেন এই কর্মকর্তা। এমন অভিযোগে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে দৈনিক আজকের ভোলা’র অনুসন্ধানে।
সোমবার (২২শে এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২ পযর্ন্ত বিএমইটি (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ভোলা অফিসে সোর্স ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, প্রতিদিনের মত ফিঙ্গার দিতে আসা সবার কাছ থেকে অবৈধভাবে সর্বনি¤œ ৩০০ টাকা থেকে ২৫শ টাকা আদায় করে ফিঙ্গার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা। অনুসন্ধানী টিম ওয়েটিং রুমে অবস্থানরত সবার সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহের একপর্যায়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ফিঙ্গার দিতে আসা মোহাম্মদ রুবেল জানান, ভিসার ফটো কপি না থাকায় অতিরিক্ত ১২শ টাকা দাবি করেন। কিন্তু ভিসার নাম্বার ও আবেদন কপি থাকলে কাজ করা যায় বলে জানান অন্য এক কর্মকর্তা। তার কাছে ১২শ টাকা না থাকায় তিনি চলে যাবেন এমন সময় অনুসন্ধানী টিমের এক সদস্য তাকে ১২শ টাকা দিয়ে টাকার নাম্বার ছবি তুলে গোপন ক্যামেরা নিয়ে ফিঙ্গার দিতে ওই কর্মকর্তার অফিস কক্ষে যান। তার সঙ্গে থাকা অনুসন্ধানী টিমের সদস্যকে সন্দেহ হলে কাজ না করার কিছুটা অপারগতা প্রকাশ করে।
কিন্তু অনুসন্ধানী টিমের সদস্য রুবেলের বড় ভাই ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষক পরিচয় দিলে পূর্ণরায় পূর্বের রুপ ফিরে আসে সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের। তখন এই কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় ও অধিদপ্তরের অডিট টিম ভোলায় আসলে বিশাল অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। মূলত সেই জন্য তিনি এই ঘুষ গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়াও জানা যায়, ফিঙ্গারের জন্য বাহির থেকে ঠিকঠাক আবেদন করে আসলেও তাকে পোহাতে হয় আরো বেশি হয়রানী। সফটওয়্যারে তার দেশ (যে দেশে যাবেন) শো করেনা বলে দীর্ঘদিন ঘুরিয়ে বেশি টাকা আদায় করেন কৌশলে। অফিসের সোর্স দিয়ে ৩শ টাকার আবেদন খরচে রাখেন ৮৫০ টাকা। পরে সেখান থেকেও ৮০ শতাংশ টাকা আনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
একসময় অনুসন্ধানী টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে সকল ঘুষের টাকা ব্যাগে করে তার অফিস সহকারীর মাধ্যমে পাঠানোর সময় হাতে নাতে ঐ ব্যাগে অনুসন্ধানী টিমের নাম্বার ফালানো টাকাসহ ভুক্তভোগীদের সহযোগে ধরে ফেলে। পরে এই বিষয়ে ১০/১২ জন ভুক্তভোগীসহ অভিযুক্ত এই কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি তার সৎত্তর দিতে পারেনি। পরে একপর্যায়ে অনুসন্ধানী টিমকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার ব্যর্থ চেষ্টায় অফিস-রুম তালা মেরে পালিয়ে জান।
অভিযোগে জানা যায়, প্রবাসে যাওয়ার জন্য সমগ্র ভোলা থেকে গড়ে দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ জন প্রবাসী ফিঙ্গার দিতে আসেন বিএমইটি ভোলা অফিসে। তার অফিসে বৈধ কোনো টাকার লেনদেন না থাকলেও ফিঙ্গার দিতে আসা সকলের কাছ থেকে ৩শ থেকে ২৫শ’ টাকা পযর্ন্ত আদায় করেন।
গড়ে ৫০০ টাকা করে নিলেও (৮০ থেকে ৫০০) ৪০ হাজার টাকা অবৈধ ঘুষ গ্রহণ করেন। অর্থাৎ প্রতি মাসে তিনি ভোলার মানুষের কাছ থেকে স¤পূর্ণ অবৈধ উপায়ে প্রায় (৪০,০০০+৩০)= ১২ লাখ টাকা ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন। তবে এতো বড় ঘুষ বানিজ্যের মধ্যে তার একটি মানবিক দিকও চোখে পড়লো।
ঘুষ পাওয়ার পর ২০ থেকে ৩০ টাকা দামের একটি সৌদি প্রবাসীদের ভাষা শিক্ষার বই উপহার দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি দেখতে পেরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছি। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ শুনার পর পার্সোনালী তাকে ডেকে সতর্ক করে দিয়েছি। তবে বর্তমান ঘটনাটি তার বক্তব্য অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার সাথে যায়না। এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করার কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪০:২৩ ৬৫৮ বার পঠিত