আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর ॥ সে কথা মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠে ভোলাবাসী

প্রচ্ছদ » জেলা » আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর ॥ সে কথা মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠে ভোলাবাসী
শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২



মোকাম্মের মিশু ॥
আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এদিনে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলের ৪ লাখেরও বেশি ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩৬ লাখ মানুষ। শুধু ভোলাতেই মারা যায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। ঘটনার ৫২ বছর পরও সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছে না দক্ষিণ জনপদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা।
সত্তর সালের ১২ নভেম্বর রাতে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় গোর্কির ছোবলে লন্ড-ভন্ড হয়ে গিয়েছিলো ভোলার বিস্তীর্ণ জনপদ। জেলার মনপুরা, চর নিজাম, ঢালচর, কুকরি-মুকরিসহ গোটা এলাকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিলো। স্থানীয়দের মতে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলো ভোলায়।

---

সেই দিন ভোলার এমন কোন গ্রাম ছিলোনা, যে গ্রামের কেউ না কেউ মারা যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় গাছে উঠে প্রাণ বাঁচায় অনেকে। ঘর-বাড়ি ফসল আর প্রিয়জন হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন মানুষ। গোর্কির আঘাত এবং জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা এতই নির্মম ছিলো যে সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও আতঙ্ক আর ভয়ে শিহরে ওঠে ভোলাবাসির প্রাণ।
সেই দিনের সেই বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে মো. আনোয়ার মিয়া বলেন, ১৯৭০ সালের ১২ ই নভেম্বর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বয়ে যায়। ১০ তারিখ থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিলো, ১১ তারিখ সারা দিনই বৃষ্টি ছিলো সাথে হালকা বাতাস। ১২ তারিখে রাতে প্রচন্ড ভাবে আঘাত হানে। তখন কোন ধরনের সিগন্যাল বা আবহাওয়ার কোন খবর, কোন কিছুই ছিলো না। সকালে দেখলাম সদর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় এক মাজা পরিমাণ পানি, সবকিছু ডুবে গেছে। সব দিকে ঘুরে দেখলাম, সকল বাড়ি-ঘর,গাছ-পালা একদম ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সর্ব জায়গায় লাশ আর লাশ। মানুষের গবাদিপশুরসহ সকল কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। যারা বেঁচে ছিলো তাদেরও ছিলোনা বেঁচে থাকার মতো কোনো সম্বল। ছিলোনা কোন খাবার বা পরনে কোনো পোশাক। সেই দিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতির কথা মনে পড়লে এখনও প্রাণ আঁতকে ওঠে।
মোঃ আলমগীর গোলদার বলেন, ঝড়ের পরের দিন দেখলাম নৌকা গুলো সব গাছের মাথায় আটকে আছে। গাছে গাছে মানুষের লাশ এবং সাপ একত্রে পেচিয়ে আছে। কত মানুষ যে মারা গেছে সেই হিসেব করার মত কোন অবস্থা ছিলো না। নদীতে কচুরিপানার মত মানুষের লাশ ভাসতে ছিলো। মানুষকে গণকবর দেয়া হয়েছে। এক কবরে কতজন করে দেয়া হয়েছে সেই হিসাব করা সম্ভব হয়নি। সেই কথা মনে উঠলে এখনো গা শিউরে ওঠে। এখনো বাতাস-বৃষ্টি দেখলে বা কোন সিগন্যালের কথা শুনলে ভয় ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে বসে থাকি।
মো. আবু তাহের বলেন, ঝড়ের কয়েকদিন পরে ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষদের সহায়তার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসেন। এরপর আসেন মাওলানা হামিদ খান ভাসানী। তিনি আরো বলেন, সে সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং কোন সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। এখনো ভোলায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র বা সাইক্লোন শেল্টার নেই। তাই আরো বেশি পরিমাণে সাইক্লোন শেল্টার বা আশ্রয় কেন্দ্র, মজিব কিল্লাসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের দাবি করেন।
১৯৭০ সালের বন্যার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের দুর্দশা সচোখে দেখার জন্য ভোলা সদর, মনপুরা ও কুকরি-মুকরিসহ বিভিন্ন এলাকায় আসেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই ভোলার মানুষের জান-মাল এবং গবাদিপশু রক্ষায় বনায়ন ও কিল্লা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে এখনো প্রয়োজন অনুযায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত না হওয়ায় বিভিন্ন চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকার ৬ লক্ষাধিক মানুষের দিন কাটে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির মাঝে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’র উপ-পরিচালক মো:আব্দুর রশীদ জানিয়েছেন, ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা কম ছিলো কিন্তু এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণে তাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। ভোলা জেলায় বিভিন্ন ঝড় মোকাবেলা করার জন্য সিপিপির ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এবং ৭শত ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ভোলা জেলায় আরো কিছু আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ভোলা জেলায় ২২ লক্ষ মানুষের বাস। এসব মানুষের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র মিলিয়ে ৭ শত ৪৬ টি প্রতিষ্ঠান দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০:১৩:৫৪   ৩১৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোলায় সমাবেশ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে
ভোলায় ৬ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের স্মারকলিপি
ভোলায় তীব্র তাপদাহে অস্থির জনজীবন
ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে অনিশ্চয়তা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোলায় তিন উপজেলার ৩৮ প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ
ভোলায় কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না ভোলার বিএমইটি অফিসে॥ প্রতিদিন ঘুষের আয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা!!
আপনাদের আমানত ভাল পাত্রে জমা রাখবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ মিয়া
ভোলায় ফিল্মি স্টাইলা অপহরণ ॥ কতিপর উদ্ধার



আর্কাইভ