শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় নতুন নীতিমালা!! সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে তো?

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় নতুন নীতিমালা!! সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে তো?
রবিবার, ৩০ মে ২০২১



অবশেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগেই শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে। শিক্ষা বোর্ড তেরোটি বিষয়ের উপরে লক্ষ্য রেখে শর্তসমূহ পালন সাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ক্রয় কৃত জমি, সেই জমির উপরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যার মধ্যে একাডেমিক ভবনসহ লাইব্রেরী এবং ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা অপরিহার্য থাকতে হবে। এই সকল শর্ত পূরণের পরে সেই প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেয়া হবে এবং পরবর্তী কার্যক্রম অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন, বিভিন্ন বিভাগ খোলার অনুমতি সহ যাবতীয় বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ব্যাঙের ছাতার মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার প্রেক্ষিতে এই আইন ও বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এবং কী পরিমান জনসংখ্যা থাকলে সে এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হবে সেই সব কিছুই শর্তের মধ্যে অপরিহার্য করা হয়েছে।
২৫ বছর আগে সম্ভবত শিক্ষাসচিব এরশাদুল হক ও অতিরিক্ত সচিব শহীদুল আলমের সময় এ বিষয়ে একটি বিধিমালা তৈরি করা হয়েছিল। যে বিধিমালা এখন আপডেট করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে অতীতের বিধিমালায়ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দূরত্বের বিধান, জনসংখ্যাসহ সবই ছিল। লাইব্রেরী, ল্যাবরেটরী, খেলাধুলা সবকিছুই স্বীকৃতির জন্য শর্ত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে বিধান কি আদৌ মানা হয়েছে? হয় নি। কারণ আমাদের দেশে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য ও প্রাধান্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে সব বিধি-বিধান সেখানে গৌণ। ঘুষ দিয়ে অসৎ কর্মচারীদেরকে হাতে নিয়ে সব কিছুই এখানে সম্ভব। ফলে ঐ সকল বিধি-বিধান থাকা সত্ত্বেও মানা হয়নি। এবং রাজনৈতিক প্রভাবও এ ক্ষেত্রে একটি বড় কারন। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কার্যকর হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাদের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে এবং রাজনৈতিক চাপের মাধ্যমে এর স্বীকৃতি বেতন সবকিছু করিয়ে নিয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে এখন রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কলেজে ক্লাস হচ্ছে না, নিয়ম মানা হচ্ছে না, তাই সেখানে শিক্ষার্থীও পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান অনলাইন ভর্তির ক্ষেত্রে সেই শুভংকরের ফাঁকি তথা বাস্তব অবস্থা আমাদের সামনে ভেসে উঠেছে। আরেকটু ব্যাপকভাবে এ বিষয়ের উপরে আলোচনা করলে আমরা বলতে পারি, আমাদের গোটা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেই বড় ধরনের গলদ রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদের স্বার্থে তৈরি শিক্ষাব্যবস্থার জঞ্জাল এখন পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে একটি বিশাল ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ৪৭ ব্রিটিশ মুক্তির পরে প্রয়োজন ছিল স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি সুস্থ সময় উপযোগী দেশ উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু তখনও রাজনৈতিক প্রতিরোধেরমুখে পাকিস্তান আমলে কোন  শিক্ষা নীতিই কার্যকর হতে পারেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ও ঠিক একই অবস্থা। সেই কুদরত-ই খুদা শিক্ষা নীতি থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতি পর্যন্ত কোনটাই নিরঙ্কুশভাবে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূলভিত্তি তৈরি হয়নি। শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং শিক্ষার মৌলিক বিষয় গুলি এখানে অনুপস্থিত। ব্রিটিশদের শুরু করা গোলাম তৈরীর শিক্ষা ব্যবস্থাকে জোড়া তালি দিয়ে নতুন নতুন অর্ডিন্যান্স নীতিমালা দিয়ে ভারাক্রান্ত করে আজকের এই বিশাল দুর্নীতি ও অব্যবস্থ্রা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। যে ব্যবস্থায় এখন আর সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন। তাহলে এখনকার মতো শিক্ষিত অমানুষ বের হওয়ার পথ বন্ধ হবে এবং আধুনিক নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন নাগরিক তৈরি হবে।
যাইহোক অনেক বিলম্বে হলেও এবারের নীতিমালা আগের চেয়ে বেশি উপযোগী। কিন্তু সমস্যা হলো যত্রতত্র যে ব্যাঙের ছাতার মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং দুর্নীতিবাজ ও রাজনীতিবিদদের সুপারিশে সেগুলো সরকারি ভাবে লালিত পালিত হচ্ছে, সেগুলো কি হবে? আরেকটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে, এই নীতিমালার পরে কি রাজনৈতিক চাপ ও দুর্নীতিবাজদের প্রাধান্য থাকবে না? যদি থাকে তাহলে এই নতুন নীতিমালা করে জাতির কিংবা শিক্ষাব্যবস্থার কি লাভ হবে? তার পরেও আমরা আশাবাদী।আমরা চাই একটি আদর্শ কর্মমুখী সময় উপযোগী নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা। যে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী কর্ম উপযোগী হয়ে নৈতিক মান সম্পূর্ণভাবে বের হবে এবং সমাজকে তার মেধা ও শ্রম দিয়ে আদর্শ ও সুন্দর করার প্রয়াস চালাবে। সে লক্ষে শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। সরকার যদি সে লক্ষে উদ্যোগ নেয় তাহলে সুদূরপ্রসারী ভাবে  জাতির জন্য কল্যাণ ও মঙ্গল বয়ে আনবে। আমরা আশা করব শিক্ষার মতো বিষয়কে সকল রকম রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। সরকারি আইন ও নীতিমালার ভিত্তিতে শিক্ষা স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোকে পরিচালনার জন্য সরকার বিশেষভাবে মনোযোগী হবে। তঊেন এজাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন সার্থক হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪২:১৩   ৩৬২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ