অর্থনীতিতে দক্ষতা ও সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে : উল্টোপথে হাঁটছে শেয়ারবাজার

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » অর্থনীতিতে দক্ষতা ও সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে : উল্টোপথে হাঁটছে শেয়ারবাজার
সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২০



বর্তমান সরকারের গত কয়েক বছরে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত রয়েছে। টাকা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ব্যাংক খাত ও শেয়ারবাজার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিলেও বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্নেষণে আমরা দেখতে পাই, ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের অবস্থা আরও দুর্বল হয়েছে। অর্থনীতির আকার বাড়লেও শেয়ারবাজার সে পথে না গিয়ে উল্টো পথে গেছে।
তৃতীয় মেয়াদে আসা সরকার ও অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম মাস শেষ না হতেই দরপতনের ধারায় ফিরে আসে, যা এখনও চলছে। পরিস্থিতি উত্তরণে স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য চমকে দেওয়া প্রণোদনার ঘোষণা দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজেটের পদক্ষেপে শেয়ারবাজারের উন্নতি হয়নি। নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করতে বোনাস লভ্যাংশ এবং পুঞ্জীভূত মুনাফার ওপর কর আরোপ করার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। আইপিও কারসাজি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে আইন সংশোধন হয়েছে। কিন্তু অনিয়ম বন্ধ হয়নি। এ কাজে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতার ঘাটতি রয়েছে বলে আমরাও ইতোপূর্বে বারবার বলেছি।
ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষণা দেন, খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ ছাড়ের পাশাপাশি খেলাপি হওয়ার সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। বিপুল অঙ্কের সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এর পরও খেলাপি ঋণ কমেনি। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়। এর বাইরে অবলোপন করা ঋণ রয়েছে আরও ৪১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এদিকে ঋণের সুদহার কমাতে বছরজুড়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোনো সুফল মেলেনি। ঋণের গড় সুদহার বেড়ে গত নভেম্বরে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে ঠেকেছে। সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা আদায়ের এক পর্যায়ে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি ঘোষণা দেয়, ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হবে। তবে অনেক ব্যাংক এখন শিল্প ঋণেই সুদ নিচ্ছে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত।
একথাও ঠিক ব্যাংক খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি ও আধুনিকায়ন হয়েছে। ইন্টারনেটে মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বেড়েছে। হুন্ডি প্রতিরোধে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উদ্বুদ্ধ করতে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এসব কারণে ২০১৯ সালে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭.৮৯ শতাংশ।
কার্যকর উদ্যোগের অভাবে ফের বড় পতনে পড়েছে পুঁজিবাজার। গত রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৭৬ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। এতে একদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে ৫৯ পয়েন্ট। সূচকটি নেমেছে ৪৪০০ পয়েন্টে, যা গত সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেন পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ও যথাযথ পর্যালোচনা সাপেক্ষে অর্থনীতিতে সুব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩০:২৪   ৩৭৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ