চার দিন ছুটি পেয়েও বাড়ি ফেরা হলোনা হাবিবুরের ॥ লাশ হয়ে ফিরছে অবশেষে

প্রচ্ছদ » জেলা » চার দিন ছুটি পেয়েও বাড়ি ফেরা হলোনা হাবিবুরের ॥ লাশ হয়ে ফিরছে অবশেষে
সোমবার, ৬ জুন ২০২২



স্টাফ রিপোর্টার ॥
গতকাল সকালেও ফোনে কথা কইছি হাবিবের সাথে। হাবিব জিগাইছে মাগো কি খাইছো নাস্তা করছো কি করো? আমি কইছি বাবা আমি নাস্তা করছি আর আমার মাইয়ারে পড়াইতে লইছি। তহন হাবিব কইলো ওরে মাইরো না মা ওরে আমি ডাক্তারি পড়ামু। ওর জন্য একটু কষ্ট করো তোমার ওরে নিয়া চিন্তা করা লাগবে না। কাইল দুপুরেও আমার সাথে ঘন্টা খানেক কথা হইছে। তখন কইছে মাগো আমি বাড়িতে আমু। বেতন পাইলে বাড়িত আমু আমারে চার দিনের ছুটি দিছে। দুই দিন আইতে যাইতে যাইবো আর দুই দিন তোমাগো লগে থাকমু। আর তো কিছু কইলো না গো বাবায়। এই ছিলো আমার বাবার সাথে শেষ কথা আর আমার বাবার মুখের কথা শুনতে পারলাম না। এভাবেই অশ্রুচোখে ও বুকফাটা আহাজারির সাথে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকু-ে বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকান্ডে নিহত ক¤িপউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান (২৫) মা হোসনে আরা বেগম।

---

নিহত হাবিবুর রহমান ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিন দিঘলদী ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ বালিয়া বটতলা গ্রামের হরাজি বাড়ির মোঃ সিদ্দিক বেপারির মেয়ের ঘরের নাতি। হাবিবুরের বাবা শাহাবুদ্দিন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ছিলেন। ছোট বেলায় বাবা শাহাবুদ্দিনের মৃত্যু পর মায়ের সাথে থাকতেন ভোলার দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের নানার বাড়িতে। মামা আলমগীরের সাথে দীর্ঘ ৭ বছর আগে জীবিকা সন্ধানে পাড়ি জমান চট্টগ্রামে। চাকরিপ মিলে সীতাকু-ের বিএম কন্টেইনার ডিপোর কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতেও ডিপোতে নাইট ডিউটি পালন করছিলেন হাবিবুর রহমান।
ওই রাতেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্য সকলের সাথে প্রাণ যায় হাবিবুর রহমান। হাবিবুর ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এ মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের পরিবারের আয়ের চাকা।
হাবিবুরের মা হোসনে আরা বেগম আরও বলেন, আমার বাবায় ডেলি দুই তিনবার ঘন্টার পড় ঘন্টা কথা কইতো। বাবায় এক সপ্তাহ দিনে ডিউটি করতো এক সপ্তাহ রাইতে ডিউটি করতো। সাঁত মাস আগে আমার বনাই (বোনের জামাই) মারা যাওয়ার সময় হাবিবুর বাড়িতে আইছিলো। এই ঈদে বাড়ি আশার কথা ছিলো ছুটি পায় নাই তাঔ আসতে পারে নাই। হাবিবুরই আমাদের এক মাত্র উপার্জনের উৎস ছিলো আল্লাহ ওরে কাইরা নিয়া গেলো এখন আমাদের কি হবে?
একই রকম অশ্রুচোখে হাবিবুরে নানা মোঃ সিদ্দিক বেপারি বলেন, হাবিব ছোট থাকতেই তার বাবা মারা গেছে। আমরা ছোটবেলা থেকে লালন পালন করে এই সাঁত বছর হইছে সীতাকু-ে বিএম ডিপোতে কাজ করছে। গতকাল মাগরিবের সময় হাবিবুরের সাথে কথা হইছে। তখন সে বললো নানা আমার রাত ৮ থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি এই সময় ফোন দিয়েন না। কথা বলার পরে আর আমরা কিছু জানিনা। আজ সকালে এই খবর পেয়ে আমার ছেলেরে ফোন দিলে সে জানায় গতকাল রাতে ডিপুতে কেমিক্যাল বিস্ফোরণ হয়েছে তাতে অনেক মানুষ মারা গেছে। তখন হাবিবুরের কথা জিজ্ঞেস করলে বলেন, হাবিবুরও মারা গেছে আমরা হাবিবুরের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। এই হাবিবুর আমার স্বামী মরা মেয়ে ও বাপ মরা নাতিনের মুখে খাবার যোগাতো। এখন আমার মেয়ে ও নাতিনেরে কে দেখবো..?
হাবিবুরের মামা মো. আলমগীরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দুপুর ৩টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল এর মর্গ থেকে হাবিবুরের ময়না তদন্ত শেষে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমি ও হাবিবুরের বন্ধুরাসহ লাশ নিয়ে ভোলার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছি। রাতের মধ্যে ভোলায় পৌঁছাতে পারবো। হাবিবুরের লাশ অগ্নিকান্ডে দগ্ধ থাকায় বাড়িতে কবর করার কথা বলা হয়েছি। জানাজা নামাজের সময় নির্ধারন করা হয়নি। যত দ্রুত হাবিবুরের লাশ নিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো ততো দ্রুত তাকে দাফন করা হবে।
এদিকে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইফতারুল হাসান (স্বপন) জানান, চট্টগ্রামের সীতাকু-ে বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকান্ডে নিহত হাবিবুরের পরিবারের সমবেদনা জানান। এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে হাবিবুরের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আস্বস্ত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১:০৩:০২   ৪৯০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোলায় সমাবেশ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে
ভোলায় ৬ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের স্মারকলিপি
ভোলায় তীব্র তাপদাহে অস্থির জনজীবন
ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে অনিশ্চয়তা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোলায় তিন উপজেলার ৩৮ প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ
ভোলায় কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না ভোলার বিএমইটি অফিসে॥ প্রতিদিন ঘুষের আয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা!!
আপনাদের আমানত ভাল পাত্রে জমা রাখবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ মিয়া
ভোলায় ফিল্মি স্টাইলা অপহরণ ॥ কতিপর উদ্ধার



আর্কাইভ