সবই তো খুলে দেয়া হলো, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রাখা হল কার স্বার্থে?

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » সবই তো খুলে দেয়া হলো, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রাখা হল কার স্বার্থে?
রবিবার, ৮ আগস্ট ২০২১



অবশেষে সরকার লকডাউন প্রত্যাহার করে ১১ আগস্ট থেকে দেশের সব কিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি গণপরিবহনে এদ্দিন যেভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার সিস্টেম ছিল তা উঠিয়ে নিয়ে পূর্বের ন্যায় সব শীত পূর্ণ  করে যেতে পারবে।
অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের উপর সরকার এখনও অটল রয়েছে। যেখানে বছরের-পর-বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স¤পূর্ণভাবে বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত রেখে গোটা জাতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বন্যপ্রাণী তে পরিণত করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হচ্ছে। এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমাদের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ কেন বেখেয়াল হয়ে আছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। যেখানে পৃথিবীর সকল দেশে কোনো না কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের কে একাডেমিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার প্রতি আমাদের এই অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া কষ্টকর।
শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাসে উপস্থিত হলে করণায় আক্রান্ত হবে, সে আশঙ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ রেখে শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থী কিম্বা শিক্ষক কেউ কি আদৌ  ঘরের চার দেয়ালে আটকে থাকে? কক্ষনো নয়। বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে শিক্ষার্থীরা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দিনভর আড্ডা মারে, ঘুরতে যায়, দল বেঁধে রাস্তাঘাটে বাজারে ভিড় করে, লকডাউনের মধ্যেও দলবেঁধে রাস্তায় চলাচল করেছে। এমনকি অনেকেই মাস্ক পরার প্রয়োজনও বোধ করেন।এদের একটি বড় অংশ বিভিন্নভাবে অপরাধপ্রবণতার সাথে জড়িত হয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। কাজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশাল অংশ নেশার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করছে। আবার অভাবের তাড়নায় অনেকে ছাত্র জীবনের ইতি ঘটে বিভিন্ন কাজে কর্মে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরেপড়ার সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। যা আমাদের জাতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গল জনক নয়।
আমরা আশা করেছিলাম লকডাউন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে শর্তসাপেক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া হবে। প্রথমত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের কে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং তাদের জন্য মাস্ক অপরিহার্য করে প্রতি বেঞ্চে দুজন বা তিনজন করে বসিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একাডেমিক ক্লাস চালু করার ব্যবস্থা করবে। এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ এ সব নিয়মনীতি যাতে যথাযথভাবে মেনে চলে সে জন্য প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ইত্যাদি দিয়ে তাদের উপর নজর রাখা এবং শক্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখবে। আরেকটি বিষয় আমাদের কাছে অবাক লাগে যে, দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ এবং বিশেষ করে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা এ বিষয়টির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার  দাবি না ওঠা খুবই রহস্যজনক এবং বেদনাদায়ক। আমরা আশা করবো দেশের শিক্ষাবিদ, সুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবী, বিশেষ করে শিক্ষক সংগঠনসমূহ অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার  দাবিতে সোচ্চার হবে।
সবকিছু খুলে দিয়ে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ রাখায় আমরা হতাশ হয়েছি। এর দ্বারা প্রমাণিত হলো, আমাদের কাছে সবকিছুর গুরুত্ব আছে, শুধু শিক্ষার গুরুত্ব নেই। এর পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা হয়তো বা এখন আমরা কল্পনা করতে পারছিনা।তাই আমরা সরকারের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাবো- অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নীতিমালা ঘোষণা করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, টিকা প্রদানের শর্তে, মাস্ক বাধ্যতামূলক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৯:৪০   ৪৩২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ