আজকের ভোলা রিপোর্ট ॥
নতুন অর্থবছরের বাজেটের নামে ঐতিহাসিক রসিকতার পর এখন নাটক হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস কাবে এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি। মান্না বলেন, এই বাজেটে কল্যাণমুখী বিষয় নেই। এখানে সম্পূর্ণ একটা ঐতিহাসিক রসিকতা করা হয়েছে। সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মিথ্যাচার ও তথ্যের জুয়াচুরি আছে। এমন কিন্তু না, এবারই বাজেট এরকম হয়েছে। এই পর্যন্ত কোনো কালেই কল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি। ‘জনগণের কাক্সিক্ষত’ সরকার গঠিত না হলে কল্যাণমুখী বাজেট আশা করা ‘মুশকিল’ বলেও মন্তব্য করেন এক সপ্তাহ আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী নাগরিক ঐক্যর প্রধান। বাজেট নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জবাবকে ‘নাটক’ আখ্যায়িত করেন মান্না। এক্সসাইজ কমাতে সংসদে দাবি জানানো হচ্ছে, মুহিত সাব বলছেন, না আমি এক্সসাইজ কমাতে পারব না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক্সাইজ একটু কমানোর দরকার, এটা চিন্তা করছি। আর ওনি (অর্থমন্ত্রী) বলছেন, না। এগুলো নাটক। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বলেন, আমি সব সময় বলি, ওই দল দুটোতে দলের নেত্রীর কথার বাইরে গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ে না, বলেন এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা মান্না। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত হয়ত নাটক হবে, প্রধানমন্ত্রী দয়াশীল, ওনি ডেকে নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বলবেন, এই এই কমিয়ে দেন। সৈয়দ আবু নাসের বলেন, দেশে ধনীরা আরো ধনী, গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, এতে ধনীদের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো অন্যায় হয়েছে। কেননা, এর মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্তরা জীবিকা নির্বাহ করেন। ইনকাম ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এতে যারা ট্যাক্স দেয় তাদের ওপরেই চাপ বেশি পড়বে। এ ছাড়া আবগারি শুল্ক লাখে ৮শ’ টাকার কথা বলা হলেও এটা দাঁড়াবে ১ হাজার ৬শ’ টাকায়। আবার বাজট বাস্তবায়নে কোনো কমিটির কথাও বলা হয়নি, যে কমিটি জনগণের কাছে তা তুলে ধরবে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্কেন্ডিনেভিয়ান দেশগুলোকে বলা হয় কল্যাণ রাষ্ট্র। তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বাজেট করা যেত। কিন্তু তা করা হয় না। এটা কোনো সরকারের আমলেই করা হয় না। এজন্য অর্থমন্ত্রীদেরও দোষ দেওয়া যায় না। কেননা, বাজেট নির্ধারণ করে রাজনীতি। তাই প্রধানমন্ত্রীই এর দায় বহন করেন। তিনি বলেন, লাখ লাখ কোটি টাকা আমাদেন পাচার হয়ে গেছে। কাজেই যদি দুর্নীতি রোধ করা যায়, আমরা বেকার ভাতাও দিতে পারবো। বক্তারা আরও বলেন, বাজেটে শিক্ষার ওপর বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অথচ শিক্ষাই জাতিকে এগিয়ে নেবে। স্বাস্থ্যখাতকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাজেটে গরিব মেহনতি মানুষের জন্য কিছু নেই। তাই এ বাজেট হয়েছে ধনীদের স্বার্থ রক্ষায়। অনুষ্ঠানে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, বাজেট তৈরিতে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়ার দরকার ছিল, কিন্তু সেটা করা হয়নি। গত ১০ বছরে দেশ থেকে সাড়ে ছয়শ কোটি টাকা পাচার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা হবে কি না, সেই বিষয়ে বাজেটে কোনো আলোচনা হয়নি। ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার নামে লুটপাট হচ্ছে, আবার সেই জায়গা পূরণ করতে হয় জনগণের অর্থ থেকে। এই বাজেট সম্পর্কে অধিকাংশ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা জানেন না বলে দাবি করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বাজেট আমলাতান্ত্রিক ও অগতান্ত্রিক। প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে এনবিআর ও একটি গোষ্ঠীকেন্দ্রিক এই বাজেট। সেমিনারে নাগরিক ঐক্যর সদস্য জায়েদুর রহমান ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৩:৪৭ ৩২৭ বার পঠিত