ভোলায় বেকার আড়াই লাখ জেলে ॥ দুই মাস সংসার চলবে কীভাবে?

প্রচ্ছদ » জেলা » ভোলায় বেকার আড়াই লাখ জেলে ॥ দুই মাস সংসার চলবে কীভাবে?
রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪



---

আল আমিন ॥

ভোলার দেড় লাখের বেশি জেলে দুই মাস কীভাবে বেঁচে থাকবেন, তা নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা কি নীতি নির্ধারকদের আছে? ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ-এপ্রিল এখানকার অভয়াশ্রমে সব ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময় মাছ বহন, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয়ও নিষেধ। একদিকে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে শাস্তির ভয়, তাহলে এই দুই মাস তাঁদের সংসার চলবে কীভাবে? ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ভোলায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা দুটি অভয়াশ্রমে গত বৃহস্পতিবার (১লা মার্চ) দিবাগত রাত ১২টা থেকে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। অক্টোবর মাসে মা ইলিশ যে ডিম ছেড়েছিল, তা থেকে যে জাটকা ইলিশ হয়েছে। সেগুলো যাতে নিরাপদে সাগরে ফিরে যেতে পারে, তার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে এই পদক্ষেপের বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে প্রান্তিক ও হতদরিদ্র জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তার বিকল্প কী আছে?

জেলা মৎস্য অফিসের সূত্র অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার এ সময়টাতে জেলে প্রতি ১২০ কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ভোলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৫। তাঁদের মধ্যে চলতি বছর নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে সাড়ে ৮৯ হাজার জেলেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর মানে ৭৯ হাজার নিবন্ধিত জেলে সরকারি সহায়তার চাল পাবেন না। তবে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে ভোলায় জেলের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।

এ তো গেল কাগজ-কলমের পরিসংখ্যানের হিসাব-নিকাশ। প্রকৃত বাস্তবতা আরও রূঢ়। জেলেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের জন্য যে চাল বরাদ্দ হয়, তার একটা অংশ নয়ছয় হয়। কিছু কিছু ইউনিয়নে ইউপি সদস্যরা জেলে ছাড়াও অন্য পেশার দলীয় ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও তাঁদের স্বজনদের চাল দিচ্ছেন। তাঁরা এ অবস্থার অবসান চান। সরকারি সহায়তা না পেয়ে অনেক জেলে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালান। তাঁরা এ সময় ঋণের কিস্তি শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে জেলেদের প্রয়োজন রয়েছে। অভিযানের নির্দিষ্ট সময়ে জেলেদের ঋণের কিস্তি এবং সংসারী সামগ্রীর নিশ্চিত করতে হবে। কোনো জেলের নৌকা জাল আটক করলে তা না পুড়িয়ে সংরক্ষণ করা হোক এবং অভিযানের শেষে সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হোক। জেলেরাও এদেশের নাগরিক, তাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি নিরোধে নিশ্চয়তা দিতে হবে। জেলেদের সন্তান রয়েছে, তাদেরও পড়াশোনা করার অধিকার রয়েছে। জেলেরা পেঠের দায়ে নদীতে নামলেও জাল নিয়ে যায় প্রশাসনের লোকেরা, নিয়ে পুড়িয়ে ফেলে অথবা সিন্ডিকেট গ্রুপ অন্য জেলেদের কাছে বিক্রি করে এরকম অভিযোগও রয়েছে, শুধু তাই নয় মৎস্য অফিসের কোনো কর্মকর্তা সরাসরি অভিযান পরিচালনায় থাকে না। মৎস্য অফিসের একটি কুচক্রী মহল নদীতে অভিযানের নামে প্রশাসনের ভূমিকায়, জেলেদেরকে আটক করে অতঃপর মুক্তি মিলে টাকার বিনিময়ে।

এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে একাধিক ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সফল করার লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, প্রচারপত্র বিতরণসহ মাছঘাটগুলোয় সচেতনতা সভা এ রকম কর্মসূচির কমতি নেই। কিন্তু বিপুলসংখ্যক জেলে কীভাবে দিন পার করবেন, মূল সেই চিন্তাতেই মনোযোগ নেই। জেলেরা অনাহারে-অর্ধাহারে থাকলে ইলিশ উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্পে কতটা সফল হওয়া সম্ভব?

ভোলার জেলেপল্লিগুলোয় যাতে শিক্ষার প্রসার হয়, তাঁরা যেন বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে পারেন, সে জন্য অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রকল্প নিতে হবে। কিন্তু মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়টায় তাঁরা যেন খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারেন, তার উদ্যোগ সবার আগে নেওয়াটা জরুরী। ভোলার সব নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত জেলেকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১২:০১:০১   ১১৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোলায় সমাবেশ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে
ভোলায় ৬ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের স্মারকলিপি
ভোলায় তীব্র তাপদাহে অস্থির জনজীবন
ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে অনিশ্চয়তা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোলায় তিন উপজেলার ৩৮ প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ
ভোলায় কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না ভোলার বিএমইটি অফিসে॥ প্রতিদিন ঘুষের আয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা!!
আপনাদের আমানত ভাল পাত্রে জমা রাখবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ মিয়া
ভোলায় ফিল্মি স্টাইলা অপহরণ ॥ কতিপর উদ্ধার



আর্কাইভ