আজকের ভোলা রিপোর্ট ॥
ভোলায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য অধিকার ভিত্তিক সুরক্ষা নীতিমালা ও স্থানীয় ব্যবস্থাপনার দাবিতে নাগরিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ হল রুমে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী জনাব মোঃ তৌহিদুল ইসলাম।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের ফোকাল পার্সন এম.এ. হাসানের সঞ্চলনায় এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান, কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক রাশিদা বেগম।
এসময় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মোকাম্মেল হক মিলন, হারুন-অর-রশীদ শিমুল, মোঃ মইনুল এহসান, কোষ্ট ফাউন্ডোশন সিজেআরএফ প্রকল্পের আতিকুর রহমান সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত জলবায়ু বাস্তুচ্যুত বেক্তিবর্গ।

সেমিনারে বক্তারা জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের কাছে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন। বক্তরা বলেন, স্থানীয় বাস্তুচ্যুতির প্রকৃত ঝুঁকি নিরূপণ করে এবং অঞ্চলভিত্তিক গবেষণা’র ভিত্তিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী অভিযোজন কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকৃত বাস্তুচ্যুতদের চিহ্নিত করে ডাটাবেইজ তৈরি করা ও তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই পুনর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণ করে এবং জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় টেকসই উপকূলীয় সুরক্ষা অবকাঠামো (বেড়িবাধ) নির্মান করার দাবি জানান।
সেমিনারে বক্তারা আরো বলেন, নদী ভাঙনের কারণে ভোলায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আশংকা জনকভাবে বেড়েই চলছে, এখন থেকে যথেষ্ট প্রস্তুতি না নিলে সামনে তা ভয়াবহ রুপ ধারন করবে।
গত ৫৩ বছরে ভোলার আয়তন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৯৬০ সালে ৬ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভোলা ক্রমাগত নদী ভাঙ্গনের ফলে এর আয়তন বর্তমানে মাত্র ৩ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। গত ১০ বছরে ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গেছে প্রায় ৮-১০কি:মি: এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং উদ্বাস্তÍ হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। নিরুপায় হয়ে তারা শহরমূখী হচ্ছে এবং বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছে, সরকার কিছু কিছু আশ্রায়ন প্রকল্প করলেও জীবনধারনের তাগিদ তাদের শহরমূখী হতে বাধ্য করছে, তাই স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করার প্রতি তারা গুরুত্বারোপ করেন।
তারা আরও বলেন জলবায়ু বাস্তÍচ্যুতদের সঠিকভাবে চিহ্নিতকরার আলাদা কোন ডাটা বেইজ বা পরিসংখ্যান নেই এটা দু:খজনক, এ ব্যপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি/প্রতিষ্ঠান যেমন:  ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতির উপরে মাঠ পর্যায়ের উপাত্ত সংগ্রহ এবং হালনাগাদ করা যেতে পারে, আশ্রায়ন প্রকল্প সমূহ এমন জায়গায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিশেষ করে চরাঞ্চলে, সেখানে বাস্তÍুচ্যুত মানুষেরা বহু রকমের মানবাধিকার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা বিবেচনা করে টেকসই পূণর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যেহেতু ভোলা নদী ভাঙ্গনের প্রবন এলাকা তাই বাস্তুচ্যুতির মাত্রাও অনেক বেশি, এখনো অনেক মানুষ বেড়ির পাড়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বাস করছে। বেড়ির বাহিরে যেসকল মানুষগুলো রয়েছ তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূণর্বাসন করা আমাদের জন্য জরুরী। তিনি আরো বলেন অভ্যন্তরীন খালের মধ্যে কোন প্রকার বাধ দেয়া যাবেনা এতে পানির প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে, জলবাদ্ধতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, কৃষকের ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির এই সমস্যা মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
এসময় সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০:৪৩:৪৬   ৩৫৭ বার পঠিত