ভোলার চরাঞ্চলে হাঁস পালনে ভাগ্য বদল

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » ভোলার চরাঞ্চলে হাঁস পালনে ভাগ্য বদল
বুধবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২১



ছোটন সাহা ॥
ভোলার চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাঁস পালন। বাহারি রংয়ের নানা প্রজাতির এ হাঁস পালনে ভাগ্য বদল হয়েছে অনেক খামারির। দুর্গম চরে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বা সুবিধা মত স্থানে খামার তৈরি করে হাঁস পালনে ঝুঁকে পড়েছেন চরের মানুষ। মাঠে ঘাটে দেখা যায় হাঁসের ঝাক।
চরের মাঠ-ঘাটে, খাল-বিল, ডোবা বা ফসলের ক্ষেতে হাঁস চড়ানো হয়। সেখানেই দল বদলে ছুটে চলে শতশত হাঁস। খাবার সংগ্রহ করে আবার দিন শেষে খামারে ফিরে আসে দলবেঁধে। খামারিরা হাঁস পালন করে বেশ খুশি। অল্প পরিশ্রমে বেশী লাভবান হওয়ায় হাঁস পালনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

---

চরের খামারিরা জানালেন, চরে হাঁসের খাবার এবং হাঁস চড়াতে কোন ঝমেলা নেই। তবে রয়েছে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তাই হাঁস পালনে অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন। হাঁসও পালন করে অনেকেই হয়েছেন সামলম্বী। দারিদ্রতা দূর করে অনেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের।
ভোলা সদরের দুর্গম জনপদ চর চটকি মারাসহ বেশ কয়েকটি চরে দেখা যায় হাঁস পালনের ধুম। অধিকাংশ ঘরেই রয়েছে হাঁসের খামার। হাঁস থেকে উৎপাদিত ডিম বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন খামারিরা।
খামারিরা জানান, হাঁস পালন যেমনি সহজ তেমনি রয়েছে ঝুঁকিও। একবার মড়ক দেখা দিলে তা কাটিয়ে উঠা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে যথাযথ পরিচর্যা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খামার এবং হাঁসের প্রতি বাড়তি নজরদারি রাখলে রোগের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। হাঁস পালন করে দু’একজন লোকসান গুনলেও বেশীরভাগ খামারি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। লাভবান হচ্ছেন তারা। এতে আগ্রহ বাড়ছে তাদের। এক জনকে দেখে অন্য জনও ঝুঁকে পড়ছেন হাঁস পালনে।
সারা বছরই হাঁস পাল করা যায় তবে শীতের সময় হাঁস এবং হাসের ডিমের চাহিদা বেশী থাকায় এসময়টাতে হাটবাজারে হাসের  জমজমাট কেনা-বেচা হয়ে থাকে।
ভোলা সদরের চর চটকিমারা সরেজমিন ঘুরে খামারিদের খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরে এখন বেশীরভাগ জমির ধান কাটা শেষ তাই ধানের ক্ষেতে হাঁস পালনে ঝামেলা নেই। এছাড়া খাল- বিল ও ডোবায় সামুক, ঝিনুকসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁস, তাই হাঁসের খাবারের জন্য ধান ছাড়া অন্য কোন বাড়তি জামেলা বা খরচ নেই। চরে হাঁস পালনে নানা সুবিধা থাকায় হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
চর চটকিমারা এলাকার হাঁসের খামারি আ. হাই বলেন, আগে আমি ওকরাইত (অন্যের জমিতে বসবাস) থাকতাম। অন্যদের হাঁস পালন দেখে আমিও হাঁস পালন শুরু করি। এরপর আর আমাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। হাঁস পালন করেই এখন আমি সাবলম্বী। এখন আমার ১৩ শতাংশ জমিতে নিজের ঘর হয়েছে। বাজারে জমি কিনে একটি দোকান দিয়েছি, কিছু টাকা ব্যাংকেও আছে। ৩ ছেলে-মেয়ে এবং পরিবার নিয়ে খুবই ভালো আছি। ১৩ বছর ধরে হাঁস পালন করে আসছি। হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল হয়েছে আমার। খামারে বর্তমানে ৩০০ হাঁস আছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়াবো। আমাকে দেখে অনেকে ঝুঁকে পড়েছেন হাঁস পালনে।
একই এলাকার হাঁসের খামারি মোসলে উদ্দিন জানান, আগে আমার খামারে ২’শ ছিলো, এখন ৪০০ হয়েছে। এরমধ্যে ১০০ হাঁস ডিম দেয়। ওই ডিম বাজারে বিক্রি করি। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা খরচের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য খরচে ব্যায় হচ্ছে।
খামারি ইউসুফ ফরাজি বলেন, খামারে ৪০০ হাঁস আছে। হাঁস পালন করে লাভবান হয়েছেন অনেকেই।
আবুল কালাম ও কামাল হোসোন বলেন, আমাদের চরে ৮টি হাঁসের খামার রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভালো আছেন, ভাগ্য বদল হয়েছে তাদের। অনেকে ঝুঁকে পড়ছেন হাঁস পালনে।
ভোলা জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার ম-ল জানান, ভোলা জেলায় ৩৬২টি হাঁসের খামার রয়েছে। এর বেশীরভাগ খামার চরে। এ বছর হাঁসের কোন মড়ক নেই। তাই খামারিরা বেশ ভালো আছেন। চরের খামারিরা দেশী জাতের হাঁসের পাশাপাশি খাকী ক্যা¤পবেল এবং জিনডিং প্রজাতির হাঁস পালন করে থাকেন। এসব হাঁসের ডিম উৎপাদন বেশী। দিন দিন হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ০:১০:৪৩   ৩৪২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


‘নকশী কাঁথা’ সেলাই করে ঘুরে দাঁড়ালেন ভোলার আমেনা খানম
ভোলায় ওমানিয়ান টুপি সেলাই প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট বিতরন
ভোলায় প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী ও উদ্যোক্তাদের মেলা অনুষ্ঠিত
ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা
চরফ্যাশনে দিনব্যাপী প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী
বোরহানউদ্দিনে ফুটপাতে ঈদের জমজমাট কেনাকাটা
পথে পথে চাঁদাবাজি, ভোলার তরমুজচাষি ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে
ভোলায় ব্যবসায়িক অগ্রগতি পর্যালোচনা সম্মেলনে রূপালী ব্যাংক পিএলসিকে সর্ব শীর্ষে নিয়ে যাবার অঙ্গীকার
ভেজাল মসলা তৈরি: ভোলায় ২ কারখানাকে জরিমানা
ভোলায় বেড়েছে আলু ও কাঁচা মরিচের দাম



আর্কাইভ