করোনার ভয়াবহ বিস্তৃতি: শাটডাউনের মধ্যে চলছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » করোনার ভয়াবহ বিস্তৃতি: শাটডাউনের মধ্যে চলছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা
শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১



গতকাল প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের দুটি শিরোনাম। একটিতে বলা হয়েছে, “অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আইজিপির আহ্বান” অন্য শিরোনামটি হচ্ছে, “অক্সিজেনের অভাবে পিতার মৃত্যু, পুত্র কারাগারে”। প্রথম সংবাদটিতে বলা হয়েছে আমাদের পুলিশ বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা আইজিপি মহোদয় করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আগে যদিও বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে এজাতীয় আহ্বান জানানোর কাজটি সাধারণত রাজনীতিবিদগণ বেশিরভাগ করতেন, এখন অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা আমলারাও সে দায়িত্বটি পালন করছেন। সেটা ভালো কথা। কিন্তু একই পত্রিকার পরবর্তী শিরোনামটি হচ্ছে সাতক্ষীরার একজন বাবা শ্বাসকষ্টে যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন তখন তার পুত্র বের হয়েছিল পিতার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে। পথিমধ্যে শাটডাউন সাকসেস করার দায়িত্ব নিয়োজিত আমাদের দায়িত্ববান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করেছে। আর অক্সিজেনের অভাবে তার পিতা প্রাণ হারিয়েছে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারছে না, পিতার হাতে করোনায় শ্বাসকষ্টে শিশুপুত্রের ভয়াবহ মৃত্যুর ছবির ভাইরাল হওয়া ভিডিও, লাশ নিয়ে স্বজনদের ৮ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে এ জাতীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অমানবিক কর্মকা-ের সংবাদ ইদানিং আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি।
আইজিপি মহোদয় এর অন্যদের প্রতি আহবানের আগে তার পুলিশ বাহিনীকে মানবিক হওয়ার জন্য বেশি বলা উচিত এবং ইদানিং পুলিশের মধ্যে আরো এসব অপরাধ প্রবণতা তথা হত্যা, ইয়াবা পাচারসহ আরও যেসব অপরাধ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সেসব বর্জন করা এবং সকল রকম মানবতাবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
আমরা দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিশেষ করে করণা পরিস্থিতিতে মারাত্মক উদ্বেগ বোধ করছি। কারণ বৈশ্বিক মহামারী করোনায় এখন সারাবিশ্ব আক্রান্ত। সবাই কমবেশি করোনার আঘাতে জর্জরিত। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী এখন করোনাকে সাথে নিয়ে চলার জন্যই সবাই চেস্টা চালাচ্ছে। সকল নাগরিকদেরকে টিকার আওতাভুক্ত আনা এবং প্রত্যেকের মাস্ক বাধ্যতামূলক করে স্যানিটাইজার ব্যবহার ও অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে লকডাউন এর মাধ্যমে সমাজ এবং মানুষের জীবনকে ২/১ সপ্তাহের জন্য প্যারালাইজড করার ব্যবস্থা সব দেশেই কমবেশি আছে। তবে সে সময়ে সাধারণ নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য ও জীবনরক্ষার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা ও দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে। কিন্তু গোটা দেশকে দীর্ঘদিনের জন্য প্যারালাইজড করে সাধারণ মানুষকে খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করছি কিনা সেটাও ভেবে দেখা উচিত।  সব দেশেই এখন টিকার ব্যাপক প্রয়োগ গণসচেতনতা, মাস্ক ব্যবহার সহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর জোর দিয়ে জীবনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে।
আমাদের দেশেও আমরা তেমনটাই আশা করেছিলাম। শুরু হয়েছিল অনেকটা সেভাবেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের টাকা দিয়ে কেনা টিকা আমরা পাইনি, বরং তার পরিবর্তে আমরা পেয়েছি ‘ডেল্টা’!! যা এখন গোটা জাতিকে কঠিন সংকটাপন্ন করে তুলেছে। অনেক ছোটখাটো দেশও নিজেরা টিকা উৎপাদন করে দেশবাসীকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। অথচ আমরা সেটাও পারিনি। যারা টাকা নিয়ে আমাদের টিকা দেয়নি, তাদের কাছে জোরালোভাবে আমরা আমাদের প্রাপ্য টিকা ফেরত চাইতেও ব্যর্থ হয়েছি। ব্যর্থ হলে বিকল্প কর্মসূচি কি হবে কোথা থেকে আমরা টিকার সংস্থান করে দেশের সকল জনগণকে টিকার আওতাভুক্ত করবো, সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা করতেও আমরা পারিনি। এখান ওখান থেকে কয়েক লক্ষ, আরেক দেশ থেকে কিছু উপহার এভাবে চালিয়ে যাচ্ছি। আর টিকার ব্যবস্থা হচ্ছে হবে বলে সময় খেপন করছি। হয়তোবা সে কারণেই এখন লকডাউন শাটডাউন ইত্যাদি নানা নামে জনগণকে ঘরে রেখে গোটা দেশকে প্যারালাইসড করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তা কতদূর সফল হবে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন।
আমরা মনে করি করণা একটি বৈশ্বিক মহামারী। বিশ্বব্যাপী এর ছোবলে অস্থির। আমরা যখন দেখি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার গাফিলতির কারণে সাধারণ মানুষ কষ্ট পায়, প্রাণ হারায় কিংবা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয় তখন আমাদের অন্তরের অন্তস্থলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমরা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাবো অমানবিকতা আর কঠোরতার নামে সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার চালিয়ে কোন ভাল কাজ কোনদিন সম্ভব হয়নি এবং হবে ও না। তাই এই মহাসংকট মোকাবিলার জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহের সবাই মানবিক আচরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের এবং অসহায় করণা ক্লিষ্ট মানুষের কাছে পাশে দাঁড়াবে এটাই আমাদের কাম্য। আর যারা এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে মানুষকে কষ্ট দেবে, অযথা মানুষকে হয়রানি করবে যাদের গাফিলতির জন্য মানুষের প্রাণ বিসর্জন হবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৭:০১   ৩১৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ