মনপুরার মেঘনায় ইলিশের হাহাকার, ঋণের চাপে দিশেহারা জেলে ও আড়তদাররা

প্রচ্ছদ » জেলা » মনপুরার মেঘনায় ইলিশের হাহাকার, ঋণের চাপে দিশেহারা জেলে ও আড়তদাররা
শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২



আবদুল্লাহ জুয়েল, মনপুরা ॥
ভোলার মনপুরা উপকূলের মেঘনায় ভরা মৌসুমে জেলের জালে মিলছেনা রুপালি ইলিশ। যেন নিখোঁজ রয়েছে ইলিশ। সেই নিখোঁজ রুপালি ইলিশের খোঁজে জেলেরা ঘন্টার পর ঘন্টা মেঘনায় জাল পেতে রাখলেও মিলছেনা কাঙ্খিত ইলিশ। যাও পাচ্ছে ২-৪ টি তারও ওজন ৪শত-৫শত গ্রাম। সেই ইলিশ বিক্রি করে যে পরিমান টাকা পায় তা দিয়ে খরচতো দূরে থাক সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে জেলেদের। এতে করে প্রতিনিয়ত ঋনের বোঝা বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেলেরা।
তবে মেঘনায় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলবে বলে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিউট এর ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান। অপরদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যাক্ত করেন বৃষ্টি বাড়লেই মেঘনায় দেখা মিলবে কাঙ্খিত ইলিশের।

---

মেঘনার ইলিশ জেলে শাহে আলম মাঝি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ৪ হাজার টাকার বাজার-সদাই করে ৭ জেলেকে সাথে নিয়ে মেঘনায় ইলিশ শিকারে যায়। টানা ৬ ঘন্টা জাল পেতে রাখে মেঘনায়। তারপর জাল টানা শুরু করে। জালা টানা শেষে দেখে মেলে ৪ ইলিশের।
তিনি জানান, শুক্রবার সকালে ঘাটে এসে সেই ৪শত-৫শত গ্রামের ৪ টি ইলিশ আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন ১২ শত টাকায়। এতে করে একদিন মেঘনায় মাছ শিকারে যাওয়ায় লোকসান হয় তিন হাজার দুইশত টাকা। সেই লোকসানের টাকা ও সংসার চালাতে ফের আড়তদার থেকে ঋণ নিবেন তিনি। এভাবে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঋণের বোঝা।
এদিকে হাজিরহাট মৎস্য ঘাটের মতিন মাতাব্বরের আড়তের মাঝি কালাম, হারুন, জাকির, ও ইব্রাহীম মাঝি জানান, ইলিশের আশায় প্রতিনিয়ত মেঘনায় যাই। কিন্তু প্রত্যেক দিনই একই অবস্থা। কোনদিন ৪ টি আবার কোনদিন ৬টি ইলিশের বেশি পাওয়া যায়না। এতে করে তেল খরচ ও খাবারে যে টাকা যায় ইলিশ বিক্রি করে সেই টাকা ওঠে না। এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে দেনার দায়ে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
হাজিরহাট মৎস্য ঘাটের মৎস্য আড়তদার মতিন মাতাব্বর, দাসেরহাট ঘাটের গিয়াস উদ্দিন আযম, বাছেদ মেম্বার, টেকের মাথার আড়তদার আবুল কাশেম মেম্বার, পঁচা কোড়ালিয়া ঘাটের আড়তদার লিটন শাহ ও ছাত্তার জানান, ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই। এতে করে প্রতিনিয়ত জেলেদের মাছ শিকারের জন্য টাকা দিতে হয়। আর সেই টাকা তারা ঢাকার আড়তদারদের কাছ থেকে নেয়। এতে প্রতিনিয়ত তাদেরও ঋণের বোঝা বাড়ছে। ইলিশ না পড়লে তাদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল ৯টায় হাজিরহাট মৎস্য ঘাট, দাসেরহাট ঘাট, জনতা ঘাট, টেকের মাথা ঘাট, পঁচা কোড়ালিয়া ঘাট গিয়ে দেখা যায়, মৎস্য আড়তদাররা মাছের গদি খুলে বসে রয়েছে। কিন্তু গদির বাকসে ইলিশ নেই। কিছুক্ষন পর পর ৪-৫ টি করে জেলেরা মাঝারি সাইজের ইলিশ নিয়ে গদি আসছে। পরে সেই ইলিশ গদির বাকসে ওঠানো হয়। পরে পাইকার ডেকে হাঁক-ডাক দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। একই অবস্থা প্রত্যেক আড়তদারদের।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিউট এর ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে মাত্র। ইলিশের ভরা মৌসুম আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। প্রাকৃতি বৃষ্টির কারণে মৌসুম নভেম্বরে যেতে পারে। তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে।
এই ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান, মেঘনায় ডুবো চরের কারনে নদীর নাব্যতা কম থাকায় ইলিশের দেখা মিলছেনা। তবে বৃষ্টি পড়লে মেঘনায় কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৮:১১   ৩১৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোলায় সমাবেশ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে
ভোলায় ৬ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের স্মারকলিপি
ভোলায় তীব্র তাপদাহে অস্থির জনজীবন
ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে অনিশ্চয়তা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোলায় তিন উপজেলার ৩৮ প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ
ভোলায় কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না ভোলার বিএমইটি অফিসে॥ প্রতিদিন ঘুষের আয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা!!
আপনাদের আমানত ভাল পাত্রে জমা রাখবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ মিয়া
ভোলায় ফিল্মি স্টাইলা অপহরণ ॥ কতিপর উদ্ধার



আর্কাইভ