মাস্ক পড়–ন, মাস্ক পড়–ন, মোবাইল কোর্ট আসছে

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » মাস্ক পড়–ন, মাস্ক পড়–ন, মোবাইল কোর্ট আসছে
মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১



বাসা থেকে বিকেল বেলা পত্রিকা অফিসের দিকে হেঁটে যাচ্ছি। ভোলা কালীবাড়ির মোড়ে গিয়ে দেখি একজন লোক চিৎকার করতে করতে কিছু একটা বলছে আর দৌঁড়চ্ছে, কান পেতে শুনলাম ‘মাস্ক পড়ূন, মাস্ক পড়–ন, মোবাইল কোর্ট আসছে’। আর সঙ্গে সঙ্গেই দোকানদার  পথচারী লোকজন সবাই ব্যস্ত সমস্ত হয়ে যার যার পকেট থেকে, ব্যাগ থেকে কিংবা থুতনিতে ঝুলানো মাস্কগুলো মুখে পরিধান করছে। সে এক দেখার মত দৃশ্য! লোকজনের হুড়োহুড়ি ও ব্যস্ততা দেখে প্রথম আমি কিছুটা হতচকিত হয়ে ছিলাম। তখনও বুঝতে পারিনি ঘটনা কি? তার পরে জানলাম সদর রোড অথবা নতুন বাজারে মাস্ক পড়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা মোবাইল কোর্ট নেমেছে । ৩০০/- ও ৫০০/- টাকা করে যারা মাস্ক পড়ে নি অথবা ভুলভাল করেছে তাদেরকে জরিমানা করছে। আর সে কারণেই চারদিকে হুলুস্থুল পড়ে গেছে।
সবকিছু দেখে অবাক লাগল, খারাপও লাগছিল। গত দেড় বছর যাবত বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে করোনা মহামারী প্রতিরোধের লক্ষ্যে কতভাবে মাস্ক পরিধান করার জন্য প্রচারণা চলেছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, প্রতিনিয়ত রেডিও-টেলিভিশন সকল যোগাযোগ মাধ্যম, পত্র-পত্রিকা সর্বত্র মাস্ক পড়ার জন্য বলে আসছে।
তারপরেও যদি আমাদের জনগণের অবস্থা এই হয়, তাহলে এই দুঃখও লজ্জার কথা কাকে জানাবো? শহরের অবস্থানই এই পর্যায়ে, তাহলে গ্রামের অবস্থা বলাই বাহুল্য। কারণ এখনো গ্রামের ৯০ ভাগ মানুষ বিশ্বে করণা মহামারীর অস্তিত্ব-ই বিশ্বাস করে না। সে দেশে এই বৈশ্বিক মহামারী কে কিভাবে প্রতিরোধ করা হবে? কিভাবে রক্ষা করা হবে সাধারণ মানুষকে এর প্রাণঘাতী আক্রমণ থেকে?? আমরা জানি বাংলাদেশে করোনার বিস্তারের পরে কিছুটা কমে আবার চলতি বছর মার্চ মাস থেকে ব্যাপকতা লাভ করেছে। প্রতিদিন সরকারী হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় অর্ধশত করোনা রোগীর প্রাণ হারাচ্ছে। বেসরকারি হিসাব এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে তারও প্রায় পাঁচ গুণ মারা যাচ্ছে। সীমান্তের জেলাগুলোতে ভয়াবহ অবস্থা। ইতোমধ্যেই দিনাজপুর রাজশাহী-খুলনা হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় ধাপের বিস্তার ব্যাপকতা লাভ করেছে। বরিশাল-ভোলা অঞ্চলে কিছুটা কম থাকলেও অচিরেই তা মহামারী আকারে বিস্তৃত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এমনি একটি অবস্থায় যখন প্রত্যেকটি মানুষের করোনার ব্যাপারে সচেতন হয়ে মাস্ক পরিধান করা উচিত। শুধু থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখা নয়, বরং নাক ও মুখ মাস্কের আড়ালে ঢেকে রাখা একান্ত প্রয়োজন। তখনো রাস্তাঘাটে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে সর্বত্র, তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম করছে, একে অপরের গা ঘেঁষে চলাচল করছে।
করোনা একটি বৈশ্বিক মহামারী। যে ভাইরাস বাতাসে উড়ে বেড়ায় এবং মানুষের নাক মুখ চোখ ইত্যাদি দিয়ে মানব দেহকে আক্রান্ত করে। অনেকে বলে বেড়াচ্ছে যে ,আমরা তো হেঁটে বেড়াচ্ছি কিছু হচ্ছে না। এটা ঠিক আপনার হয়তোবা করোনা প্রতিরোধ শক্তি ইউমিনিটি প্রচুর রয়েছে তাই করোনা আপনাকে আক্রমণ করলেও দুচারবার কাশি দিয়ে অথবা একটু গলা ব্যথা অথবা শরীর ব্যথা ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি সেরে উঠেছেন। কিন্তু আপনি এই ভয়াবহ ভাইরাস বহন করে আপনার বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা আত্মীয়স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। তাদের যদি শরীরের কোন ভাইটাল অংশ তথা হার্ট, কিডনি ফুসফুস, লিভার ইত্যাদিতে সমস্যা থাকে তাহলে অচিরেই সে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? একটু ভেবে দেখুন। কেউ কেউ হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, কারো কারো তার আগেই জীবন শেষ হয়ে যায়। আর হাসপাতালে গেলেও শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া লোকদের কম সংখ্যকই ফিরে আসে। তাহলে আপনার পিতা মাতা ঘনিষ্ঠজনের হত্যার কারণ কিন্তু আপনিই হবেন।
তাই সকলের কাছে বিনীত আবেদন জানাই, আপনারা করোনাকালীন সময়ে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরিধান করে বের হোন। নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচান। করোনার ব্যাপারে আরও সচেতন হোন। আর প্রশাসনের কাছে একটি বিশেষ আবেদন, যেহেতু আপনারা মোবাইল কোর্টে বের হলে মানুষ ভয়ে হলেও মাস্ক পরিবার পরিধান করে। তাই প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত শহরে গ্রামের বিভিন্ন বাজারে মোবাইল কোর্ট চালু রাখুন। যাতে অন্ততপক্ষে ডরে ভয় হলেও জনগণের মধ্যে মাস্ক সঠিকভাবে পড়ার অভ্যাস এবং ইচ্ছে সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৯:১৮   ৩৩৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ