করোনার ভয়াবহ আক্রমণ ও আমাদের করণীয়

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » করোনার ভয়াবহ আক্রমণ ও আমাদের করণীয়
সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১



কোভিড-১৯ বা বৈশ্বিক মহামারী ‘করোনাভাইরাস’ দ্বিতীয়বারের মতো আক্রমণে বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে করোনা মহামারীতে আক্রান্ত হচ্ছে অজ¯্র মানুষ। দ্বীপজেলা ভোলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ভোলার অবস্থান নাকি ৩ নম্বরে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। সরকারি হিসেবে গত বছর প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা যেখানে পঞ্চাশের কোঠায় ছিল, এবছর আক্রমণের শুরুতেই তা একশত ছাড়িয়ে গেছে। আর বেসরকারি হিসেবে অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিন কতজন মানুষ মারা যাচ্ছে তার ইয়াত্তা নেই। কারণ এখনো বেশিরভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়না। কিংবা তারা করোনা টেস্ট করে না। অর্থাৎ নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। ফলে গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন স্থানে করোনার নির্মম আগ্রাসনে নীরবে-নিভৃতে চলে যায় বহু মানুষের প্রাণ পাখি। সচেতন মানুষ শুধু করোনা টেস্ট করাতে যায়। অনেকেই করোনা সন্দেহ হলে তারা সর্তকতা অবলম্বন করে। সেক্ষেত্রেও অনেকেই করোনার উপসর্গ নিয়ে ঘরে বসেই চিকিৎসা করে। হাসপাতালে যায় না। আর বাস্তবতা ও এই যে হাসপাতালে চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। প্রথমত করোনার কোন প্রতিশোধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। দ্বিতীয়তঃ হাসপাতালে করোনা রোগীদের মধ্যে অবস্থান করে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার ভয়ে হাসপাতাল এড়িয়ে চলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যখন ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয় অথবা স্ট্রোক কিংবা কিডনি আক্রান্ত হয় সেই কঠিন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়। সে ক্ষেত্রে অনেকে হাসপাতালেই পর্যাপ্ত অকসিজেনের ব্যবস্থা নেই। ভোলার মতো বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাসপাতালেই বিল্ডিং এবং সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এখনো সেন্ট্রাল অকসিজেন সিস্টেম চালু হয়নি। হলে এ ধরনের রোগীরা অনেকে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই আবার অনেকে হাসপাতালে গিয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
ভোলা হাসপাতালে কথাই ধরা যাক করো না পরীক্ষা করতে গেলে সেখানে সুস্থ রোগীরাও করো না বা দিয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ঘন্টার পর ঘন্টা বহু রোগী দাঁড়িয়ে থাকতে হয় স্যা¤পল দেয়ার জন্য। এর ফলে যাদের করোনা নেই তারাও ওখানে গেলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হওয়া এখন খুবই প্রয়োজন। উপজেলা পর্যায়ের প্রত্যেকটি হাসপাতলে করোনা ইউনিট চালু করা এবং পর্যাপ্ত অকসিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই।
দিনদিন একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, আমাদেরকে অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষদেরকে হয়তো ভবিষ্যতে করোনার সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। তাই প্রয়োজনীয় সর্তকতা অবলম্বন করা এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা সর্বস্তরে রাখা এখন অপরিহার্য।
সতর্কতাঃ বলতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক ব্যবহার করা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। এসব ব্যাপকভাবে এবং প্রতিটি মানুষের জন্য এখন অপরিহার্য। দিন দিন এটা বোঝা যাচ্ছে যে করোনা নির্মূল হবে না। করোনার সাথে যুদ্ধ করেই আমাদেরকে টিকে থাকতে হবে। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সমাজের সকল মানুষকে সচেতন করা। এর কোন বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সমাজে অনেক শিক্ষিত মানুষও করোনা বিষয়ে সচেতন নন। অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি এখনো বিশ্বাসই করে না যে, করোনা বলতে কিছু আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের পরিবারে আক্রমণ না করে তুক্ষণ পর্যন্ত এই উপলব্ধি অনেকের মধ্যেই আসেনা। অথচ শিক্ষিতদের আজ এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। মাঠে-ঘাটে, হাটে-বাজারে, মসজিদে মন্দিরে সর্বত্র প্রতিটি মানুষকে করোনার ব্যাপারে সতর্ক করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। সম্মিলিতভাবে সবাই সতর্ক থাকতে সচেতন হলেই করোনার প্রতিরোধ কিছুটা হলেও সম্ভব। আর এই সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের সকল শাখাসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক সবাইকেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য আরও সক্রিয় হতে হবে।
সর্বোপরি এই করোনা আমাদের মধ্যে মৃত্যু ভয় সৃষ্টি করেছে। সবাই এখন দেখা হলেই মাফ করে দিতে বলে। এর মাধ্যমে যদি আমাদের মধ্যে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় সেটাও একটি ইতিবাচক দিক। সকল কাজেই আমাদেরকে আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আল্লাহকে ভয় করতে হবে। সর্বোপরি সকল সর্তকতা অবলম্বন করেও একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে রহমত ও হেফাজতের জন্য দোয়া করার কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই। করোনার মহামারী থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৯:১২   ৪০০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ