বাম-লীগ বুঝি না : নির্যাতন-নিপীড়ন চলবে না

প্রচ্ছদ » নারী ও শিশু » বাম-লীগ বুঝি না : নির্যাতন-নিপীড়ন চলবে না
শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৮



মোমিন মেহেদী
একাত্তরের মত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিত্যদিনই যৌন হয়রানি-ধর্ষণ-নির্যাতন-নিপীড়ন-এর ঘটনা ঘটছে। কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে, কিছু জানাজানি হচ্ছে; আর অধিকাংশই রয়ে যাচ্ছে দীর্ঘশ্বাসে-আশ্বাসে-বিশ্বাসে-শান্তনায় আর রাজনৈতিক কালো অধ্যায়ের আড়ালে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেও হতাশার কালোমেঘে আচ্ছন্ন হয়ে যায় আমাদের মানচিত্র, আমাদের দেশ। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছেই। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, গত এক বছরে প্রায় অর্ধশত যৌন হয়রানির ঘটনার অভিযোগ হানাজানি হয়েছে। যেসব ঘটনা নিয়ে হয়রানির শিকার নারী শিক্ষার্থীরা মুখ খোলেন কেবল সেগুলোই লোক জানাজানি হয়;  প্রতিবাদ হয় এবং সেইসব ক্ষেত্রেই ব্যাবস্থা নেয়া হয় অভিযুক্ত শিক্ষক ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থী অন্যায়ের বিচারের প্রত্যয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, “বিভিন্ন  প্রসঙ্গ টেনে স্যার যে আচরণ করছিলেন তা আমি মানতে পারিনি, আমি চলে এসেছি। চলে আসার সময় তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন, তাহলে পরীক্ষার খাতার কী হবে? আমি বলেছি স্যার আপনার যা ইচ্ছে তাই দিয়েন”।
অন্য এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমি হল থেকে কাসের দিকে আসার সময় একটা ছেলে আমার পিছু নিতো। ক্যাম্পাসে ঘুরতে বের হলেও পিছু নিতো। পরবর্তীতে সে ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে এসে, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতো”।
এই দু’জন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারলেও হয়রানির শিকার অনেক নারী শিক্ষার্থী লোকলজ্জার ভয়ে চুপ থেকে যান ও অভিযোগ করেন না। তাপসী রাবেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেননি। তিনি বলছিলেন, সেই লোক তার আত্মীয় হওয়ায় তিনি কিছু বলতে পারেননি। চরম বাস্তবতা হলো- হয়রানির শিকার এসব শিক্ষার্থীদের সবাই যে অভিযোগ করছেন, এমনটা নয়। অনেকেই এসব ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছেন। সেই হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে  প্রতি বছর কি পরিমাণ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হন তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।
শিক্ষাঙ্গণে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২৮ নভেম্বর ২০১৪ সালে দৈনিক সমকালে শামীমা মিতু লিখেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছেই। এ পর্যন্ত শিক্ষকদের হাতে ছাত্রী নিপীড়নের ২০টির মতো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে; কিন্তু একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্যতামূলক ছুটি কিংবা সাময়িক বহিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে শাস্তি। এর মধ্যে কোনো কোনো শিক্ষককে আবার পদোন্নতি দিয়ে বা চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে ‘পুরস্কৃত’ করেছে প্রশাসন। অধিকাংশ ঘটনায় ‘তদন্ত চলছে’ বলে অভিযোগগুলো ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে বছরের পর বছর। আবার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে বিয়ের  প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির  প্রভাষক মাহমুদুর রহমান বাহালুল বিভাগের দুই ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এতে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগের পরিে প্রক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটির  প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষকের অনৈতিক আচরণের  প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়  প্রশাসনের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে চিঠি দেয় কমিটি; আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। ২০১৩ সালের মে মাস থেকে এক বছরের জন্য বিভাগের সব কর্মকা- থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এক বছর অতিবাহিত হলেও প্রশাসন থেকে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি তিনি বিভাগে যোগদানের জন্য আবেদন করেছেন। শিক্ষকগণ যেখানে নির্যাতনে নির্লজ্জ; যেখানে নির্মমতায় অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছেন; সেখানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য নিরন্তর যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন। যাতে করে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকে কালোহীন আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার কারিগরগণ। আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য নিবেদিত থেকে। তা না হলে অতিতে যেমন নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীকে বাসায় ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রীর সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত  প্রত্যাখ্যান করে ওই শিক্ষকের স্থায়ী চাকরিচ্যুতির দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামেন। এভাবেই আন্দোলনে নামতে হবে আবারো কোন না কোন বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে। আবার আন্দোলনে নামার পর নেমে আসবে ভয়াবহ হামলা-নির্যাতন; যা আমাদের কাম্য নয় বিধায়-ই আমরা চাই আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা।
বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা-১০ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি অবৈধভাবে তার যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা শিশুর শ্লীলতাহানি করে, তবে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা হবে এবং এর জন্য ওই ব্যক্তিকে অপরাধ  প্রমাণ হলে সর্বনিম্ন তিন বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদ-ে দন্ডিত করা হবে। সঙ্গে তাকে অর্থদন্ডেও দন্ডিত করা হবে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন-নারী লিপ্সু শিক্ষকদের যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অপরাধ  প্রমাণ হওয়ার পরও সাময়িক বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক ছুটিতেই শাস্তি শেষ। ছুটিতে থাকাকালীন শিক্ষকরা কাস নেওয়া বা অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নিলেও চাকরির সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বসবাসের সুবিধাসহ বিশ্ববিদ্যালয় কাবে আড্ডা দেওয়া, বেতন-ভাতা, বোনাস, পেনশন সব সুবিধাই ভোগ করেন। অভিযোগ আছে, এসব শিক্ষক ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক ও পেশাগত  প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ দায়েরকারী শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমেও বাধার সৃষ্টি করেন। ব্যবস্থা না নেওয়ায় কয়েকজন ছাত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ও  প্রতিকারের উপায় বের করার জন্য নিরন্তর এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতি-শিক্ষা-সাগিত্য-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গণে নিবেদিত মানুষদেরকে। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় উচ্চশিক্ষার তীর্থস্থান। সেখানে শুধু জ্ঞান বিতরণই করা হয় না, নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টিও করা হয়। যখন এই তীর্থস্থানে জ্ঞান বিতরণের নামে শিক্ষকরা ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেন, তখন শিক্ষক হিসেবে সত্যিই মাথা নিচু হয়ে যায়। যে পিতৃতুল্য শিক্ষকদের কাছ থেকে নীতি-নৈতিকা ও আদর্শ শেখার কথা, তাঁদের কাছ থেকে এ ধরনের জঘন্য আচরণ সত্যিই পীড়াদায়ক। হাইকোর্ট ২০১০ সালে ১৬ ধরনের কর্মকান্ডকে যৌন হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে অশালীন আচরণ, হয়রানি বা নিপীড়নমূলক উক্তি ও মন্তব্য বা ভঙ্গি,  প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা। এ ছাড়া চিঠি, মোবাইল, খুদে বার্তাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যৌন ইঙ্গিতমূলক অপমানজনক কথা লেখা, চরিত্র হননের জন্য স্থির বা ভিডিওচিত্র ধারণ করা, প্রেমের  প্রস্তাব করে  প্রত্যাখ্যাত হয়ে হুমকি দেওয়া  প্রভৃতি। অন্যদিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক আস্থা ও বিশ্বাসের। এই আস্থা ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে যখন কোনো শিক্ষক তাঁরই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেন, তখন তাঁকে আর শিক্ষক বলা যায় না। কিছু বিকৃত রুচির শিক্ষকের জন্য পুরো শিক্ষক সমাজের অর্জন আজ ম্লান হতে চলেছে। এসব বিকৃত রুচির শিক্ষক ছাত্রীদের সঙ্গে নানা কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে টিউটোরিয়াল, ইনকোর্স ও অ্যাসাইনমেন্টের নম্বরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।  প্রথমে প্রেমম এরপর প্রলোভন- প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও স্থাপন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ের নামে নানাভাবে কালক্ষেপণ করেন। উপায়ন্তর না দেখে অসহায় ছাত্রীরা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করেন। কখনো বই দিয়ে সাহায্য করার  প্রতিশ্রুতি, নোট করে দেওয়ার কথা বলেও করা হয় যৌন নিপীড়ন।
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনউইমেনের এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৮ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরো খারাপ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার সবচেয়ে বেশি-৮৯ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ এবং মেডিকেল কলেজে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৪ শতাংশ ছাত্রী। জরিপে আরো দেখা যায়, বিভিন্ন অশালীন মন্তব্যের মাধ্যমেই ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানি করা হয়। এ হার ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া তিন ভাগের এক ভাগ ছাত্রী মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তার মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন, ১৫ শতাংশ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমার মাধ্যমে, শরীর স্পর্শ করে ১২ শতাংশ, প্রেমের  প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে ১১ শতাংশ, নজরদারিতে ৯ শতাংশ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ৬ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ ছাত্রী তাঁদের থাকার জায়গা বা পড়াশোনা করার স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ছাত্রীদের যৌন হয়রানির চিত্র শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, এমনকি কলেজ লেভেলেও শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীর যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। যৌন হয়রানির ফলে ছাত্রীদের জীবনে নানা ধরনের জটিলতা নেমে আসে। বিপর্যস্ত হয় শিক্ষাজীবন। অধিকাংশ ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিছু ছাত্রী অন্যান্যের থেকে আলাদা হয়ে যান, কিছু পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। আবার কিছু ছাত্রী হয়রানির শিকার হয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় লজ্জা, সামাজিক অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে ছাত্রীরা এর  প্রতিবাদ করেন না। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগও অভিনব। ছাত্রীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, কোনো কোনো শিক্ষক তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের বাসার বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে ছাত্রীদের বাসায় ডাকেন। কোনো কোনো শিক্ষক কাসে ছাত্রীদের পাখি বলে সম্বোধন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর কমপক্ষে ৫০ ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। পর্নো ভিডিওসহ আপত্তিকর নানা ছবিসহ অভিনব কায়দায় ছাত্রীদের সঙ্গে  প্রতারণা করার অভিযোগও রয়েছে। সমাধানের জন্য লিখি, সমাধানের জন্য পড়ি এবং শিখি। আর তাই বলতে চাই- যেহেতু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যৌন হয়রানি বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি  প্রতিরোধে  প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট আইন  প্রণয়ন ও সে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়াচ্ছে যৌন হয়রানি। ২০১০ যৌন হয়রানি বন্ধে আদালত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে নির্দেশ দেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়নি। ছাত্রীদের ভেতর যৌন হয়রানি বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডেও একজন সাইকোলজিস্ট রাখা যেতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারলে এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অনেক সময় অভ্যন্তরীণ ছাত্র-রাজনীতি ও শিক্ষক-রাজনীতির কারণে কোনো কোনো শিক্ষক যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের, কোনো নিরপরাধ শিক্ষক যেন রাজনীতিক  প্রতিহিংসার শিকার না হন। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে অর্জন, তা আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য কম নয়। কিন্তু এ ধরনের অবক্ষয়ের জন্য যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ম্লান না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। অনেক সময় ছাত্রীরাও বেশি নম্বরের আশায় শিক্ষকদের সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। রাষ্ট্রের একার পক্ষে এ ধরনের অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়। দরকার আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রীদের সচেতনতা এবং মানসিক পরিবর্তন। একই সাথে তিলকে তাল বানানোর চেষ্টা বা তালকে তিল বানানোর চেষ্টা থেকে সরে এসে গণমাধ্যমকে রাখতে হবে স্বচ্ছ এবং সত্য তুলে ধরার মানষিকতা। এভাবে ভাবলে, এগিয়ে আসলে আর যাই হোক কোন শিক্ষার্থীকেই ভিসি অবরুদ্ধ করার মত গৃণিত কাজে যুক্ত হতে হবে না। আর হলেও তাদের উপর অন্যপক্ষের হামলার ঘটনা-নির্যাতনের ঘটনা নির্মিত হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। অন্তত গত ২৩ জানুয়ারী যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দেখতে হবে না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই সংবাদে বলা হয়েছে- ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’ ব্যানারে উপাচার্যে কার্যালয় ঘেরাও করে একদল শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০-২৫ জনের একটি দল উপাচার্যকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে যান। এ সময় সরকার সমর্থক সংগঠনটির নেতাকর্মীরা এ সময় রড-লাঠি নিয়ে চড়াও হন বিক্ষোভকারীদের ওপর; উপাচার্য ভবন থেকে সরিয়ে দেয়ার পরও বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় হামলা হয়। এমন নির্যাতন-নিপীড়ন নতুনধারার রাজনীতিকগণ চায় না। আর তাই সাহসের সাথে বলে যাই- ‘নতুনধারার অঙ্গীকার-দুর্নীতি থাকবে না আর’ ‘নতুনধারার অঙ্গীকার-নিপীড়ন-নির্যাতন থাকবে না আর…’
আমরা নির্যাতন নিপীড়ন চাই না বিধায়ই ভাবি, লিখি, বলি, সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসি। আর তারা? নির্যাতন করার পক্ষে বলেই একপক্ষ সমাধানে না এসে ৭/৮ জন শিক্ষার্থীকে ভাড়া করে নেমে যায় আন্দোলনে; অন্যপক্ষ ৭০/৮০ জন ক্যাডার ভাড়া করে নেমে যায় প্রতিরোধ করতে। তবে বরাবরের মত অবিরত এগিয়ে যেতে যেতে আমরা-নতুনধারা বলতে চাই- কোথাও কম কোথাও বেশির প্রয়োজন নাই। সবাই ব্যালেন্স করে চলুন নির্যাতন-নিপীড়ন-হামলা-মামলা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এগিয়ে যাই। কেননা, নারী আপনার আমার মা- বোন-প্রিয়জন; দেশ আপনার আমার মা-মাতৃভূমি। অতএব বাঁচানোর দায়িত্ব-রক্ষার দায়িত্ব আমাদের…

মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৮:৪৩   ৬৪৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

নারী ও শিশু’র আরও খবর


মাদ্রাসা ছাত্র ফরহাদ ৫দিন ধরে নিখোঁজ
‘নকশী কাঁথা’ সেলাই করে ঘুরে দাঁড়ালেন ভোলার আমেনা খানম
ইডেনের ছাত্রীর ৫ দিন ধরে অনশন, পালিয়েছে প্রেমিক
অকালেই নিভে গেল শিশু সামিয়ার জীবন প্রদীপ
ভোলায় যৌতুকের মামলা দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিলো স্বামী ॥ শিশু সন্তান নিয়ে দুশ্চিতায় হাফছা
চরফ্যাশনে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বিয়ের দাবিতে চরফ্যাশনে প্রেমিকের বাড়িতে ইডেন কলেজ ছাত্রীর অনশন
চরফ্যাশনে হাসপাতালে গৃহবধূর মৃত্যু সংবাদেই স্বামীসহ সবাই লাপাত্তা
নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে পুকুরে ডুবে দুই খালাতো ভাইয়ের মৃত্যু
ভোলায় নারী উদ্যোক্তাদের তিনদিনের ঈদমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল



আর্কাইভ