মোঃ বেল্লাল নাফিজ ॥
ভোলার সদর ও দৌলতখান উপজেলার চরাঞ্চলে গত দু’বছর পূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছিল বারি ক্যাপসিকাম-২। এতে সফলতা পেয়ে বাণিজ্যিভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন বহু কৃষক। ভোলার চরাঞ্চলের মাটি ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ক্যাপসিকাম চাষে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা। তবে অন্যান্য বছর থেকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তান্ডবে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার ভোলার ক্যাপসিকাম চাষিরা।
মাঝের চরের কৃষক আলাউদ্দিন ফরাজী জানান, তিনি গত বছর দুই একর জমিতে পরীক্ষামূলক বারি ক্যাপসিকাম-২ চাষ করেছিলেন। প্রথমবারই তিনি ক্ষেতে ব্যাপক ফলন পেয়েছিলেন। বারি ক্যাপসিকাম-২ সাইজ বড় হওয়ায় বাজারের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় ৮ লক্ষ টাকা লাভ করতে পেরেছেন কিন্তু এবছর একই জমিতে বিচি ফালানোর পরে ১৭ই নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে সকল চাড়া নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে পূর্ণরায় বীজ লাগানোর কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ফলন ভালো হলেও এ বছর লাভ গতবছরের চেয়ে কম হওয়ার শঙ্কা।
তিনি জানান, এ বছর তিনি দুই একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বারি ক্যাপসিকাম-২ চাষ করতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তেমন না হওয়ায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ বার ঢাকার পাইকারি বাজারের বিক্রি করেছেন প্রায় ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে বাজার দাম কিছুটা কম হলেও ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমান বাজারে দাম ১০০ টাকা কেজি নেমে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় চলে এসেছে। বর্তমান বাজার দর চলমান থাকলেও ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ভোলা দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মাঝের চরের ইউনিয়ন মদনপুরের কৃষক আলাউদ্দিন মেম্বার জানান, এ বছর প্রথমবার ১ একর চাষ করেছেন বারি ক্যাপসিকাম-২। তার ১ একর জমিতে মোট এ পযর্ন্ত ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি তোলায় ২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। বাজার দর অব্যাহত থাকলে খরচ পুষিয়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা তার।
তবে মাঝের চরের কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন থাকা কালিন মাঝে মধ্যে কৃষি কর্মকর্তাসহ তিনি যেতেন, তাকে বদলির পর এ পযর্ন্ত কোন কৃষি কর্মকর্তা মাঝের চরে যায়নি এবং কাউকে চিনেনও না, ফলে সঠিক পরামর্শ থেকে বঞ্চিত তারা। এছাড়াও জানা যায়, কৃষি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কয়েক জন কৃষককে ফোন দিয়ে ক্যাপসিকাম ও অন্যান্য ফসলের ছবি পাঠানোর জন্য বলছেন।
এবিষয়ে কাচিয়া মাঝের চরে অতিরিক্ত দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, মাঝের চর হওয়াতে সেখানে কোন কৃষি কর্মকর্তা থাকতে চায়না, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ৬ থেকে ৭ বছর পযর্ন্ত আমিই কাজ করছি। কৃষকদের অভিযোগটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়, আমি মাঝে মধ্যে যাই। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন) নাসির উদ্দীন বলেন, ভোলায় এ বছর মোট ৭৪ হেক্টর ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে। তারমধ্যে ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর ২৫ হেক্টর, বাকী অংশের বেশিরভাগ দৌলতখান উপজেলার মদনপুরে। গত বছর ৭৫ হেক্টর চাষ হলেও এ বছর ৭৪ হেক্টর। পরিবেশবীদদের দাবি, সঠিক পরামর্শে আরো উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব অনুকূলীয় পরিবেশ ভোলায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভোলার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গাজী মাজহারুল ইসলাম জানান, দুবছর পূর্বে একজন কৃষক দিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত বারি ক্যাপসিকাম-২ পরীক্ষামূলক চাষ করিয়ে সফলতা পেয়েছেন। পরে গতবছর তাদের থেকে বীজ নিয়ে দুজন কৃষক এক একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা।
বাংলাদেশ কৃষি গভেষণার আরেক কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান অনিক বলেন, ভোলার চরাঞ্চলে কৃষকরা প্রতি বছরই আস্তা জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করে থাকেন। ওই জাতের ক্যাপসিকামের এক কেজি বীজের দাম ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তবে তাদের উদ্ভাবিত বারি ক্যাপসিকাম-২ জাতের বীজের দাম মাত্র ৩০ হাজার টাকা কেজি। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক কম। এ ছাড়াও বারি ক্যাপসিকাম-২ এর থেকে আবার আগামীতে চাষের জন্য বীজ সংগ্রহ করা যায়। তাই এ জাতের ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকদের পাশে সব সময় তারা রয়েছেন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২:২০:৫৯ ২৩২ বার পঠিত