মুদ্রাস্ফীতিতে বাংলাদেশ

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » মুদ্রাস্ফীতিতে বাংলাদেশ
মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩



---

: এস,এম রাজীব হোসাইন :

“মুদ্রাস্ফীতি” বাংলাদেশের বতমান প্রেক্ষাপটে এক নিত্য বাক্যের নাম। মুদ্রাস্ফীতি বলতে বোঝায় পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়াকে। যা সাধারণত ঘটে অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহের কারণে। মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির একটি স্বাভাবিক চিত্র হলেও বড় ধরণের মুদ্রাস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য অভিসাপ সরুপ।

পণ্যের তুলনায় মুদ্রার সরবরাহ যদি অনেকাংশে বেড়ে যায় তখন একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মাত্রায় টাকা ছাপায় আর তখনই মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। এর ফলে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে আপনাকে আগের চাইতে বেশি মুদ্রা খরচ করতে হবে। (অর্থাৎ), একদিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, অন্যদিকে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকবে।

ধরুন, গত বছর যেই পন্য কিনতে আপনার খরচ হতো ১০০০ টাকা। কিন্তু চলতি বছর সেই একই পরিমাণ পন্য কিনতে আপনার খরচ পড়ছে ১০৫০ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ৫০ টাকা বা ৫% বেশি টাকা লাগছে। এই ৫% হল মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ। এর মানে টাকার মানও ৫% কমে গিয়েছে। তবে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়লেই সেটাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা যাবে না।

যদি সামগ্রিকভাবে পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়ে তাহলেই বুঝতে হবে মুদ্রাস্ফীতির কারণে এমন হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি যদি কোনো দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম থাকে তাহলে সেটার তেমন নেতিবাচক প্রভাব থাকে না।সাধারণত ২ থেকে ৫ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি থাকলে সেটা সহনীয়। ৭ থেকে ১০ শতাংশ হলে মধ্য ও নিুবিত্ত আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। এবং এর চাইতে বেশি মুদ্রাস্ফীতি পুরো দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি কেন ঘটে?

স্বাভাবিকভাবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের কারণে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় ফলে সংকট দেখা দেয়, তখন দাম বেড়ে যায়। আবার যদি একটি দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে পণ্য ও সেবা সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকলেও দামে এর প্রভাব পড়ে। দেশের অর্থনীতি প্রবলভাবে নির্ভরশীল জ্বালানি তেলের ওপর। কারণ যেকোনো পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় পেট্রোল বা ডিজেলে চালিত যানবাহনের মাধ্যমে। ফলে এই তেলের দামের প্রভাব সব পণ্যের ওপরেই কমবেশি পড়ে। সম্প্রতি ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতির একটা বড় প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেলের ওপর। যা বংলাদেশের অর্থনীতির উপরও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে। অন্যদিকে মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি, উন্নয়নমূলক কাজ, ভর্তুকি ইত্যাদির প্রভাব তো আছেই।

---

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, অগাস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২.৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে- ১২.৮২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়েছে গ্রামীণ এলাকায়। সেখানে এর পরিমাণ ১২.৭১ শতাংশ। গত জুলাইতে এটি ছিল ৯.৮২ শতাংশ।

সবমিলিয়ে ২০২৩ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৪০ শতাংশ। এমন এক সময়ে এই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে যখন আশেপাশের দেশসহ সারা বিশ্বে এটি কমে আসছে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কী? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়ে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ালেও ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখেছে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর পলিসি রেট বৃদ্ধির কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। এখানে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের কিছুটা তফাত রয়েছে। আমাদের দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়লেই যে মূল্যস্ফীতি কমবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমাদের দেশের মূল্যস্ফীতির পেছনে বহির্বিশ্বের কারণগুলোই মূলত দায়ী। তাই আমি মনে করি, বাজারে অতিরিক্ত মুদ্রার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেয় সেই ব্যাংক হার বাড়াতে হবে। এতে অন্য ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়ে দেবে। ফলে নাগরিকদের ঋণ নেয়ার হার কমবে। এতে বাজারে যে অতিরিক্ত টাকা এসেছিল তা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।তবে সেই সাথে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতা অর্জন এবং নিরাপদ খাদ্য মজুদ রাখা সম্ভব হলে মুদ্রাস্ফীতির তীব্র প্রভাব হ্রাস পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: এস,এম রাজীব হোসাইন

এম,এস,এস (মাস্টাস) অর্থনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ২:৩১:১৭   ৫১৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


‘নকশী কাঁথা’ সেলাই করে ঘুরে দাঁড়ালেন ভোলার আমেনা খানম
ভোলায় ওমানিয়ান টুপি সেলাই প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট বিতরন
ভোলায় প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী ও উদ্যোক্তাদের মেলা অনুষ্ঠিত
ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা
চরফ্যাশনে দিনব্যাপী প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী
বোরহানউদ্দিনে ফুটপাতে ঈদের জমজমাট কেনাকাটা
পথে পথে চাঁদাবাজি, ভোলার তরমুজচাষি ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে
ভোলায় ব্যবসায়িক অগ্রগতি পর্যালোচনা সম্মেলনে রূপালী ব্যাংক পিএলসিকে সর্ব শীর্ষে নিয়ে যাবার অঙ্গীকার
ভেজাল মসলা তৈরি: ভোলায় ২ কারখানাকে জরিমানা
ভোলায় বেড়েছে আলু ও কাঁচা মরিচের দাম



আর্কাইভ