চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥
ভোলার চরফ্যাসন সেটেলমেন্ট অফিসের মূল বালাম বই থেকে ভূমি মালিকের নামাঙ্কিত খতিয়ানের পৃষ্ঠা গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে অপর ব্যক্তির নামাঙ্কিত একটি পৃষ্ঠা গাম দিয়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে।
চরফ্যাসন অফিসে কর্মরত উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা বরকত হোসেন খান এবং সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম গোপন লেনদেন ও পার¯পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে এমনটি ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরকত হোসেন খান এখন গাজীপুরে কর্মরত থাকলেও শফিকুল ইসলাম অবসরে আছেন বলে জানা গেছে। বালাম থেকে খতিয়ান গায়েবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক আবদুস সাত্তার হাওলাদারের ছেলে ফরিদুল ইসলাম এমন অভিযোগ করেছেন।
ফরিদুল ইসলামের অভিযোগ, চর আইচা মৌজায় তাঁর বাবা এএফএম আবদুস সাত্তারের ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে এ কা- ঘটিয়েছেন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের আওতায় ২০১৯ সালে শুরু হওয়া জরিপে ৫৩৯২ নম্বর মাঠ পর্চা, দাগের সূচি, দখলস্বত্বের তালিকা এবং ১৩৭৫ নম্বর বিডিএস প্রিন্ট খতিয়ানে ওই জমি তাঁর বাবা সাত্তারের নামেই রয়েছে। কিন্তু অফিসে সংরক্ষিত মূল বালাম থেকে খতিয়ান তুলতে গিয়ে দেখা যায়, মূল বালামে আসল পাতাটি ছিঁড়ে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে খতিয়ান নম্বর, দাগ, জমির পরিমাণসহ সব তথ্য ঠিক রেখে কেবল মালিক এএফএম আবদুস সাত্তারের স্থলে আবদুর রব প্যাদা বসিয়ে বাইরে থেকে প্রিন্ট করা একটি নতুন পাতা গাম দিয়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জমির মালিকানা নিয়ে আবদুস সাত্তার ও রব প্যাদা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, আবদুস সাত্তার ও রব প্যাদার পরিবারের মধ্যে চর আইচা মৌজায় আরও জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বালাম বই থেকে খতিয়ান গায়েবের পেছনে কর্মকর্তারা ছাড়াও সেটেলমেন্ট অফিসের রেকর্ডকিপার মোদাচ্ছের হোসেনের হাত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। চরফ্যাসন সেটেলমেন্ট অফিসের বর্তমানে কর্মরত সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু তাহের জানান, দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কারসাজিতে এমনটা হয়েছে। যাঁরা এমনটা করেছেন, তাঁদের কেউ এখন এখানে কর্মরত নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি লিখিত আবেদন করেছেন। বিষয়টি সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার মধ্যে একজন গাজীপুরে বন বিভাগের ল্যান্ড সার্ভেতে কর্মরত উপসহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা বরকত হোসেন খান জানান, বিডিএস জরিপে এমনটা হওয়ার কথা নয়। তিনি না দেখে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। যদি কোনো ধারায় বিচার চলমান থাকে, তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ওই ধারায় সংশোধনের সুযোগ নিতে পারেন। আরেক অভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। চরফ্যাসন সেটেলমেন্ট অফিসের রেকর্ডকিপার মোদাচ্ছের হোসেন জানান, জরিপ চলাকালে খতিয়ানের বালাম মৌজায় জরিপ কাজে দায়িত্বরত উপসহকারী কর্মকর্তাদের টেবিলে থাকে। সেখানে কী হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:৫০ ২৩০ বার পঠিত