চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥
ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৩দিনেও সন্ধান মেলেনি চরফ্যাশন উপজেলার নিখোঁজ ২০ জেলের। উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ইউনিয়ন থেকে ৩১ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরে চট্রগ্রামের এসআরএল-৫ নামের একটি ট্রলিং জাহাজের ধাক্কায় আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের কালাম খন্দকারের মালিকানাধীন “মা-সামসুন্নাহার” নামের মাছ ধরার ট্রলারটি মাঝি-মাল্লা নিয়ে গত রবিবার রাত ১০টায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ জেলেদর সন্ধান না পাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে জেলে পল্লীগুলোতে।
গত সোমবার বেলা ১১টায় মহিপুরের স্থানীয় জেলেরা ট্রলার মালিকের ভাই হাফিজ উদ্দিনকে উদ্ধার করে। জীবিত হোক বা মৃত হোক নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান দিতে সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন নিখোঁজ জেলে পরিবারগুলো। কান্নাভরা কন্ঠে জেলেদের স্বজনরা প্রশাসনের উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, নিখোঁজদের মুখটা একবার হলেও যেন দেখতে পারি।
উদ্ধার তৎপরতায় কোস্টগার্ড এখন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখলেও ট্রলার মালিক কিংবা জেলে সমিতির পক্ষ থেকে কোনো নিখোঁজদের সন্ধান করা হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের উত্তর শিবা গ্রামের নিখোঁজ ফারুক হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, মা-বোনদের কান্নার আহাজারী। যেন তাদের কান্নায় আকাশ ভাড়ী হয়ে যাচ্ছে। ফারুক হাওলাদারের স্ত্রী সেতারা বেগম বিলাপ করতে করতে বারবার মুর্চা যাচ্ছেন। চেতনা ফিরে পাওয়ার পর আবার শুরু করেন গগণ বিদারী আর্তনাদ। মায়ের পাশে বসে বিলাপ করতে থাকে ফারুকের শিশু কন্যা শাকিরা (১০) ও শাবনুর (৮)। মাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় বড় মেয়ে সায়েরাকে। ভাই নিখোঁজের খবরে চেতনা হারিয়ে ওই বাড়ির উঠানে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফারুকের বৃদ্ধা বোন বকুল বেগমকে।
একই গ্রামের নিখোঁজ জেলে মো. জাবেদের সঙ্গে ট্রলার ডুবির কয়েক ঘন্টা আগে শেষ কথা হয় বলে জানান নব বধু রাশিদা বেগম। হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই স্বামী হারানোর আশঙ্কায় নির্বাক স্ত্রী রাশিদা ঘরের দরজায় বসে বসে স্বামীর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। জাবেদের বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেগম বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছেন। বৃদ্ধা ফাতেমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলে জাবেদকে হারানোর আশঙ্কায় তিনিও দিশেহারা। অনিশ্চত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় নতুন পুত্রবধুকে নিয়ে বিলাপ যেন থামছে না ফাতেমা বেগমের।
নিখোঁজ ২০ জনের মধ্যে ৭ জনের বাড়িই আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে। ফারুক হাওলাদার আর জাবেদের পরিবারের মতোই জসিম, খালেক, ইউসুফ, রফিক, মাকসুদের বাড়িতেও চলছে বিলাপ আর্তনাদ।
এঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া ট্রলার মালিকের ভাই হাফিজ উদ্দিন বাদি হয়ে এফবি এসআরএল -৫ জাহাজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত আসামি করে দক্ষিণ আইচা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে বলে ওসি সাখাওয়াত হোসেন জানান।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কমান্ডার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ঘটনার পর পরই কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। চরফ্যাসন থেকে ২টি টিম ও চট্টগ্রাম থেকে একটি কোস্ট গার্ডের একটি ইউনিট অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান জানান, কোস্টগার্ডের একাধিক টিম উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৮:৪৩ ৩১৩ বার পঠিত