দৌলতখানে ইউপি নির্বাচন ॥ কাগজে কলমে ইউনিয়ন তবুও নির্বাচন ১৫ জুন ॥ ভোটগ্রহণ পৌরসভায়

প্রচ্ছদ » জেলা » দৌলতখানে ইউপি নির্বাচন ॥ কাগজে কলমে ইউনিয়ন তবুও নির্বাচন ১৫ জুন ॥ ভোটগ্রহণ পৌরসভায়
সোমবার, ১৩ জুন ২০২২



আদিল হোসেন তপু/ ইমতিয়াজুর রহমান ॥
ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে কাগজে কলমে ভোটার থাকলেও নেই ইউনিয়নের অস্তিত্ব। তবুও সেই ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলেও কাগজে কলমে চলছে ইউনিয়নের কার্যক্রম। ইউনিয়নটিতে কোনো স্থলভাগ না থাকায় আগামী ১৫ জুন পৌরসভার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে একত্রে ৯ ওয়ার্ডের ভোট গ্রহনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রচারনা।

---

সদরজমিনে সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় নদীর মাঝে জনমানবহীন রয়েছে ইউনিয়ন, নেই তেমন কোন ঘরবাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠান। গত বছরের মেঘনার ভাঙ্গনে বিলিন হয়েছে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ নানা স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, ভালোর দৌলতখান উপজেলার মূল ভূ-খ- থেকে বিচ্ছিন্ন প্রচীনতম ইউনিয়ন হাজিপুর। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভাঙনে ইউনিয়নটি বিলীন হয়ে যায়। এখন প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নিচে অবস্থান করছে ইউনিয়নটি। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ইউনিয়নটির মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৪০ জন। তবে ইউনিয়নটির কোন অস্তিত্ব না থাকলেও দু-তিনটি চরের রয়েছে গরু-মহিষের ঘর ও মাছের আড়ত। ভাঙনে বাড়িহারা মানুষগুলো জেলার
বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন সেখান থেকেই। কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকলেও সেখানে বসতি নেই কারো। তার পরেও আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে হাজীপুর ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড পোস্টারে ছেয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পাশ্ববর্তী ভবানীপুর, চর খলিফা ও সৈয়দপুর ইউনিয়নেও পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা এসব ইউনিয়নে পোস্টারিং করেছে। প্রার্থীরা ছুটছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
জানা যায়, জাতীর সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের জন্ম এই হাজীপুর ইউনিয়নে।দুঃখ জনক হলেও সত্য অযতœ অবহেলায় জাতীর এই সূর্য সন্তানের জন্মভূমিটুকু রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
এই ইউনিয়নের বাসিন্দা আলম সিকদার, সফিজল ও হারুন মাল সহ একাধিক ভোটার বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে ইউনিয়টি বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানকার বাসিন্দারা এখন বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করে অন্য ইউনিয়নের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। আর এই ইউনিয়নের সরকারি বরাদ্ধ তারা কিছুই পাচ্ছেনা। নির্বাচন আসলে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রত্যাশা করেন প্রার্থীরা ভোট শেষ হলে তাদের আর খোঁজ খবর থাকে না। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ না থাকায় পরিষদ থেকে দাফতরিক কাগজ পত্রের জন্য তাদের বাড়িতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়।
আর ওই ইউনিয়ন নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হামিদুর রহমান টিপু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবী আবদুল্লাহ কিরন পাঠওয়ারী জানান, নির্বাচন শেষে হাজীপুর ইউনিয়েনে বসবাসের উপযোগী জন্য আশ্রয় প্রকল্প নির্মানের পাশাপাশি নানা নাগরিক সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।
এদিকে দৌলতখান উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবদুস সালাম জানান, হাজীপুর ইউনিয়নটি নদীর মাঝখানে হওয়ায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই। পাশাপাশি বর্ষার সময় নদী উত্তাল থাকায় দৌলতখান পৌরসভায় ভোট গ্রহনের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি স¤পন্ন করেছি। ইউনিয়নটি নদীগর্ভে বিলীন তার পরেও নির্বাচন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, উর্ধতন কর্মকর্তারা এসব ঠিক করেছেন। আমাদের কাজ হলো নির্বাচন পরিচালনা করা। আমরা তাই করছি। সুষ্ঠ নির্বাচনেরজন্য যা করার প্রয়োজন আমরা তাই করবো।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারেক হাওলাদার জানান, নদী ভাঙ্গনের কারণে ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়েছে কিনা বিষয়টি দেখবে নির্বাচন কমিশন। পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য ছাড়া কোন ইউনিয়নকে বিলুপ্ত বলা যায়না।
তিনি আরও জানান, ২০১১ সালের আদমশুমারী বিবেচনায় নিয়ে জনসংখ্যা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন বিলুপ্ত বা নেই এর কোন অফিসিয়াল অর্ডার নেই। বিবিএস পরিশংখান পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের একটি সংস্থা। তারা ঘোষনা না দেয়া পর্যন্ত আমরা বিলুপ্ত বলতে পারি না। বিলুপ্ত হয়েছে এমন কোন পত্র নেই। ভোটের বিষয় নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতেন। জেলা, সদর ও দৌলতখান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সরেজমিন দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা পুরোপুরী তাদের বিষয়। আমরা প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবো অন্য কিছু নয়।
আর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ শফিকুল হক জানান, চরাঞ্চলে যেহেতু বর্ষার সময় কোন মানুষ থাকে না। সবাই উপজেলার উপস্থলে বিভন্ন এলাকায় থাকে। এছাড়া চরে ২/১টি মহিষের টিলা, মাছের আড়ত আছে তাই সেখানে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী কিংবা নির্বাচনের সাথে দ্বায়িত্ব প্রাপ্তরা স্পটে গিয়ে থাকতে পারবে না তাই আমরা এসব দেখে কমিশনের কাছে মেইনল্যান্ডে নির্বাচন করার অনুমতি চেয়েছি এবং কমিশন অনুমতি দিয়েছে। তাই পৌরসভার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহন করা হবে।
দুটি মহিষের ঘর আর মাছের আড়ত নিয়ে একটি ইউনিয়ন কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করেছে, তার প্রতিনিধি হিসেবে আমরা নির্বাচন পরিশালনা করবো। তারা বন্ধ করে দিলে করবো না বলেমন্তব্য করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, অষ্টম ধাপে হাজীপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২জন মেম্বার পদে ২৩জন এবং সংরক্ষিত আসনে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩০:২৯   ৩৯৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোলায় সমাবেশ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে
ভোলায় ৬ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের স্মারকলিপি
ভোলায় তীব্র তাপদাহে অস্থির জনজীবন
ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে অনিশ্চয়তা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোলায় তিন উপজেলার ৩৮ প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ
ভোলায় কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না ভোলার বিএমইটি অফিসে॥ প্রতিদিন ঘুষের আয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা!!
আপনাদের আমানত ভাল পাত্রে জমা রাখবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ মিয়া
ভোলায় ফিল্মি স্টাইলা অপহরণ ॥ কতিপর উদ্ধার



আর্কাইভ