একটু সহযোগিতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে ভোলার মেয়ে রিফাত নুরজাহান মিকি

প্রচ্ছদ » জেলা » একটু সহযোগিতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে ভোলার মেয়ে রিফাত নুরজাহান মিকি
বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১



ইয়াছিনুল ঈমন ॥
স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় রিফাত নুরজাহান মিকি। মিকি “রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা ডিজিজ ও কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস (শ্রবন সমস্যায়)” ভুগছেন। ছোট বেলায় অন্য আর ১০টি ছেলে-মেয়ের মত স্বাভাবিকই ছিল মিকি। অন্তত ১৬-১৭ বছর পর্যন্ত ভালই ছিল। কিন্তু এর পরই ঘটতে থাকে যত বিপত্তি। চোখে কম দেখা ও শ্রবনে সমস্যা বাড়তে থাকে। বরিশালের সরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা স¤পন্ন করার পরই চোখ ও কানের সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারন করে। তার পরেও তিনি সংগ্রাম করে গ্রাজুয়েশন স¤পন্ন করেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। বিএসসি শেষ করেছেন ক¤িপউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। এসব সমস্যা নিয়েই মিকি সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এখন পর্যন্ত। বর্তমানে তিনি হিনমন্নতায় ভুগছেন। তার এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার এবং সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামান করেছেন মিকি ও তার পরিবার। তা হলেই মিকি পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে এমনটাই আশা করা যাচ্ছে।

---

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার পৌরসভাধীন পশ্চিম উকিল পাড়া এলাকার বাসিন্দা নিয়াজ আহমেদ ও লুৎফুন নাহার। ২ ছেলে, ৩ মেয়ে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে জীবন-যাপন করছেন তারা। লুৎফুন নাহার ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৫১নং আলীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। আর নিয়াজ আহমেদ অসুস্থ্য থাকায় বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের সাথেই আছেন। তাদের সন্তানদের মধ্যে রিফাত নুরজাহান (মিকি) ছোট বেলা থেকে পড়ালেখায় ভালই ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল তার জীবন।
ছোট বেলায় অন্য আর ১০টি ছেলে-মেয়ের মত স্বাভাবিকই ছিল মিকি। অন্তত ১৬-১৭ বছর পর্যন্ত ভালই ছিল। এসএসসিও স¤পন্ন করে সুন্দরভাবে। কিন্তু এর পরই ঘটতে থাকে যত বিপত্তি। চোখে কম দেখা ও শ্রবনে সমস্যা বাড়তে থাকে। ডিপ্লোমা করার জন্য ভর্তি হন বরিশালের সরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। সেখান থেকে ডিপ্লোমা স¤পন্ন করার পরই চোখ ও কানের সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারন করে। তার পরেও তিনি সংগ্রাম করে গ্রাজুয়েশন স¤পন্ন করেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। বিএসসি শেষ করেছেন ক¤িপউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ।
এ সমস্যার জন্য তার পরিবার ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছে। “রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা ডিজিজ” এটা খুবই একটা রেয়ার রোগ, এটার চিকিৎসা আমাদের বাংলাদেশে নেই। তারপরেও মিকির পরিবার তাদের সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়েছে। এরপরও তার উন্নতি নেই। ডাক্তাররা জানিয়েছেন ভারতে এ সমস্যার সুন্দর চিকিৎসা রয়েছে। এ চিকিৎসার জন্য যে পরিমান অর্থের প্রয়োজন তা ব্যয় ভার বহন করার মত ক্ষমতা তার পরিবারের নেই।
রিফাত নুরজাহান (মিকি) বলেন, আমার এ সমস্যার কারণে আমি কোন ভাল চাকুরী করতে পারছিনা। আমার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবরা সবাই ভাল চাকুরী করেন, তারা এখন প্রতিষ্ঠিত। আমি চাই চাকুরী করতে, নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু আমার এ সমস্যার কারণে আমি কোন চাকুরী করতে পারছি না। করবোই বা কেমনে? কারণ চাকুরী করতে হলে আগে পরীক্ষার জন্য পিপারেশন নিতে হয়, চাকুরী পরীক্ষায় অবর্তীণ হতে হয়। কিন্তু আমি তা পারছি না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমি চোখেও কম দেখছি। খুব কাছ থেকে আলোর মাধ্যমে লেখা দেখতে হয়। আর আমি যেখানে পরীক্ষা দিব সেখানে তো আমার জন্য এত আলোর যোগান থাকবে না। যার কারণে আমার প্রশ্ন পত্রের লেখাগুলো দেখতে সমস্যা হয়। এ জন্য পরীক্ষাও দিতে পারছি না। আমি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আমাকে এ পরিস্থিতি থেকে একটু মুক্তি দিন, আমাকে সাহায্য করুন। আমি সাহায্য পেলে ইনশাআল্লাহ ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবো। মিকি বলেন, আমার এ চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। যদি সরকারী কিংবা বেসরকারী এবং ব্যক্তি উদ্যোগে সমাজের বিত্তবানরা এ চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে, তা হলে আমি আবার আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো। আমি যেন আগের মত সকলের সাথে হাঁসি-খুশি জীবনে ফিরে যেতে পারি। এ সমস্যার কারণে আমি সব সময় দুঃশ্চিন্তা ও হিনমন্নতায় থাকি। মাঝে মধ্যে নিজের জীবনকে নিয়ে বিষিয়ে উঠি। তখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। এখন আমার বাবা-মা আছে, তারাই আমাকে দেখছে। কিন্তু তারা তো আজীবন থাকবে না। আমার এ সমস্যা যদি চলতে থাকে তা হলে পরবর্তী জীবনে কে আমাকে দেখবে?
রিফাত নুরজাহান বলেন, সরকার তো অনেক মানুষের জন্য অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। আমার জন্য যদি সরকার সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত এবং একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করতো তা হলে আমার জীবনটা আগের মত সুন্দরভাবে কাটত।
রিফাত নুরজাহান এর মাতা লুৎফুন নাহার বলেন, আমার মেয়েকে অনেক আশা নিয়েই পড়ালেখা করিয়েছি। সরকারী পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা করেছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা। তিনি আরো বলেন, সে এসএসপি পাশ করলো, ডিপ্লোমা পাশ করলো। তখন থেকেই তার চোখের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল। কানের শ্রবণ শক্তিটাও কমতে থাকলো আস্তে আস্তে। আমার যতটুকু সম্ভব তারচেয়েও বেশি অর্থ ব্যয় করেছি ওর চিকিৎসার জন্য। এতে তার কোন পরিবর্তণ হচ্ছে না, বরং দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। তারপরও সে থেমে থাকে নি। সে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হবে। সে ক¤িপউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-ও সফলতার সাথে শেষ করেছে। এখন তার চোখের জ্যোতি একদম নেই বললেই চলে। তেমন একটা দেখতে পায় না। কানেও শুনতে পায় না। চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি আমি। কিন্তু এখন দেখা গেল তার চোখের যে সমস্যা, সেই রোগের চিকিৎসা আমাদের বাংলাদেশে নেই। ভারতে এই রোগের ভাল চিকিৎসা রয়েছে, কিন্তু আমার সে পরিমানে সামর্থ নেই যে, তাকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাবো।
কতটুকু পরিমান অর্থ প্রয়োজন এ চিকিৎসার জন্য এমন প্রশ্নের জবাবে নুরজাহানের মা আরো বলেন, এ রোগের জন্য কি পরিমান অর্থের প্রয়োজন তা আমরা এখনও জানি না। ডাক্তাররাও সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। আমার এ মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে আমি অনেক চিন্তিত। সমাজের অনেক বিত্তবান এবং সরকার রয়েছেন যারা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। সকলেই যদি আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেন, তা হলে হয়ত আমাদের জন্য কিছুটালেও সুবিধা হবে এবং ওর সুন্দর চিকিৎসা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি চাই তার অন্যান্য বন্ধুরা যেভাবে স্বাভাবিক জীবনে চলাফেরা করছে, নুরজাহানও সেভাবে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করুক। সে অনেক উদ্যোমি, ও স্বাভলম্বি হতে চায়। কিন্তু কিভাবে সম্ভব। কারণ তার চোখের এবং কানের সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। আমি চাই সরকার ও সমাজের বিত্তশালীরা একটু এগিয়ে আসার মাধ্যমে আমার মেয়ের এ সমস্যা সমাধান করে দিক। এবং একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করুক। যাতে করে সে সমাজে অন্যান্যদের মত স্বাভলম্বি হতে পারে। সর্বোপরি কথা হচ্ছে, করুনা নয়, চাই মন থেকে সযোগিতা। রিফাত নুরজাহান মিকি কে যদি সরকার কিংবা সমাজের বিত্তশালীগণ সযোাগিতা করতে চান তা হলে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করুন।
যোগাযোগ এর মাধ্যম হচ্ছে (০১৭৩৬-২৭৪১৭১) এই ফোন নাম্বারে। এছাড়াও যদি কেউ তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে চান, তা হলে এই নাম্বারে বিকাশের মাধ্যমেও সহযোগিতা করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৬:০২   ২৭৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোলায় সমাবেশ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে
ভোলায় ৬ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের স্মারকলিপি
ভোলায় তীব্র তাপদাহে অস্থির জনজীবন
ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে অনিশ্চয়তা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোলায় তিন উপজেলার ৩৮ প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ
ভোলায় কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না ভোলার বিএমইটি অফিসে॥ প্রতিদিন ঘুষের আয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা!!
আপনাদের আমানত ভাল পাত্রে জমা রাখবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ মিয়া
ভোলায় ফিল্মি স্টাইলা অপহরণ ॥ কতিপর উদ্ধার



আর্কাইভ