চরফ্যাশনে আশ্রিত জীবনে ফুটছে আলো

প্রচ্ছদ » চরফ্যাশন » চরফ্যাশনে আশ্রিত জীবনে ফুটছে আলো
মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪



বিশেষ প্রতিনিধি ॥

ভোলার চরফ্যাসনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরগুলো পুনর্নির্মাণ শুরু হওয়ায় আশ্রিত হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। চরফ্যাসনের ইউএনও নওরীন হক জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে পুনর্নির্মাণ করা ৩৭০টি ঘর শিগগির আশ্রিত পরিবারগুলোকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বাকি ১ হাজার ২০টি ঘরও পুনর্নির্মাণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।

গত বছরের জুলাই মাসে ইউএনও নওরীন হক ২০০৩-০৪ ও ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ঘুরে দেখেন। এ সময় আশ্রিতদের দুর্দশা এবং ঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা দেখেন তিনি। এরপর মুজিববর্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিহীনদের দেওয়া সরকারি ঘরের আদলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোও পুনর্নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান। সে সময় প্রাথমিক অনুসন্ধান করে এমন জরাজীর্ণ ১ হাজার ৩৯০টি ঘরে আশ্রিতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী গত নভেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে ৩৭০টি ঘর পুননির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মধ্যেও ঘর পুননির্মাণ কাজ চলেছে দ্রুত গতিতে।

উপজেলার হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রিত ৭০ বছরের বৃদ্ধ জোবেদা খানম ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করেন। তিনি জানান, ৩০ বছর আগে তাঁর দিনমজুর স্বামী মোস্তফা মারা যান। নিঃসন্তান জোবেদার আপনজন আর কেউ ছিল না। ছিল না মাথা গোঁজার ঠিকানাও। নৌবাহিনী সদস্যদের তৎপরতায় ২০ বছর আগে হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পান জোবেদা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ঘরটি জীর্ণ হয়ে যায়। মেরামত করার সামর্থ্য ছিল না জোবেদার। এখন সরকারি উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন জোবেদার ঘরটি পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ফলে জীবনসায়াহ্নে এসে সেমিপাকা একটি নতুন ঘর দেখে জোবেদার মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি।

প্রকল্পের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফাতেমার গল্পটাও জোবেদার মতোই। ১৭ বছর আগে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রেখে মারা যান তাঁর স্বামী। এর পর স্বজনরা স্বামীর ভিটা থেকে সন্তানসহ ফাতেমাকে উচ্ছেদ করে দেয়। ঠিকানাহীন ফাতেমা সন্তানদের নিয়ে ওই অবস্থায় ৯ বছর আগে ঝিনুক আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত একটি ঘরে আশ্রয় নেন। পরিবারে উপার্যনক্ষম কেউ না থাকায় ঘরটি আর সংস্কার করা হয়নি। এখন উপজেলা প্রশাসন ঘরটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি এই বিধবা।

ইউএনও নওরীন হক জানান, প্রকল্পের অনেক ঘর কালক্রমে এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, সংস্কারের উপযোগীও নেই। সে জন্য আশ্রিত পরিবারগুলোর দুর্দশা লাঘবে ঘরগুলো মুজিববর্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি সরকারি ঘরের আদলে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৩৭০টি ঘর পুনর্নির্মাণ চলছে। একটি ঘর পুনর্নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। সেমিপাকা এসব ঘরে থাকছে রঙিন টিনের ছাউনি, বারান্দাসহ দুটি কক্ষ, রান্নাঘর এবং শৌচাগার। আছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং পাকা ঘাটলাসহ পুকুর।

ঘর পুনর্নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর উপসচিব আরিফুল ইসলাম সরদার জানান, প্রথম পর্যায়ে আশ্রিতদের জন্য ঘরগুলো পুনর্নির্মাণ করে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। পরে এসব ঘরের বাসিন্দাদের সরকারি নানা সুবিধার আওয়াতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১:০৮:৩০   ১১০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

চরফ্যাশন’র আরও খবর


চরফ্যাশনে অটোরিকশার চাপায় নিথর পথচারী
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
চরফ্যাশনে ভূমিদস্যু মুছার নেতৃত্বে নারী ও শিশুর ওপর সন্ত্রাসী হামলা
দালালদের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব জীবন ॥ চরফ্যাশন উপজেলার পাচঁ প্রবাসীর আর্তনাদ!
চরফ্যাশনে চুরি ও ডাকাতি থেকে মুক্তি ও অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে জেলেদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
চরফ্যাশনে ব্যবসায়ীকে হাত পা বেধেঁ মারধরের অভিযোগ
চরফ্যাশনে পলিথিন পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে জ্বালানি তেল
চরফ্যাশনে অন্যের জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাসেলের বিরুদ্ধে
চরফ্যাসনে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
ইডেন ছাত্রীর বিয়ের দাবীতে মিথ্যা অপপ্রচার থেকে মুক্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন



আর্কাইভ