বিশেষ প্রতনিধি ॥
ভোলা কৃষি, মৎস্য, প্রাণিস¤পদ, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসমৃদ্ধ জেলা। এখানে ৯টি গ্যাসকূপ রয়েছে। গ্যাসকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই ভোলা শহর ব্যস্ত হয়ে উঠছে। এর মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে ৯টি শিল্প-কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভোলার গ্যাস এখন কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) হিসেবে সিলিন্ডারে ভরে জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করা হচ্ছে। ভোলা সাগর-নদীবেষ্টিত দ্বীপ জেলা। তিন দিকে নদী, এক দিকে বঙ্গোপসাগর। কাছেই রয়েছে চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হওয়া পণ্যবাহী লাইটার জাহাজগুলো ভোলার পূর্ব পাশে মেঘনা নদী দিয়ে সর্বত্র যাতায়াত করছে। নদীভাঙন প্রতিরোধ, নাব্যতা হ্রাসসহ সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দেশের প্রথম শ্রেণির উদ্যোক্তারা ভোলায়ই তাঁদের কারখানা গড়ে তুলতে পারেন। এখানে রয়েছে শিল্প-কলকারখানা গড়ে তোলার যাবতীয় সুযোগ।
আবিষ্কৃত হয়েছে ৯টি গ্যাসকূপ ঃ
শিল্প-কারখানার জ্বালানির আধারভোলায় সর্বশেষ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মালের হাটে।
নাম ইলিশা-১। এই কূপে পর পর তিনটি স্তরে মিলেছে গ্যাস। চলতি বছরের ১৫ মে কূপের মুখে আগুন জ্বেলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন ক¤পানি (বাপেক্স) এই কূপের উদ্বোধন করে। কূপের প্রতিটি স্তর থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে নিশ্চিত করেন বাপেকসের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আলমগীর হোসেন।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি একই ইউনিয়নে ভোলা নর্থ-২ নামে আরেকটি গ্যাসকূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়।
ভোলা নর্থ-১সহ ভোলা সদর উপজেলায় মোট তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। আরো দুটি স্থানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদিও এখনো খননের কাজ শুরু হয়নি। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে একাধারে পাঁচটি এবং একই উপজেলার টবগী ইউনিয়নে টবগী-১ নামের গ্যাসক্ষেত্রসহ ভোলায় মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। এসব কূপ থেকে প্রতিদিন ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। কিন্তু ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
বাপেক্সের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ভোলার শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ নামের আলাদা দুটি গ্যাসক্ষেত্রে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়। এসব কূপে মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১.৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গত বছরের ২২ মে ভোলার ইলিশা-১ নামের কূপটিকে দেশের ২৯তম গ্যাসকূপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সংস্থাটির ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভোলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এ পর্যন্ত আলাদা তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিলেছে। কূপ খনন করা হয়েছে ৯টি। শিগগিরই আরো পাঁচটি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে জরিপকাজ চলছে।
ভোলার গ্যাস যাচ্ছে ১০ কারখানায় ঃ
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলার গ্যাস বিতরণ কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন কূপগুলো থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট, বাকিটা রয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ গ্যাসের খুব সামান্যই ব্যবহার করা হচ্ছে। বোরহানউদ্দিনে তিনটি এবং ভোলা সদরে একটিসহ মোট চারটি বিদ্যুকেন্দ্রে ৫৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। তা যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। এ ছাড়া একটি ফিড উৎপাদন কেন্দ্র, একটি সিরামিক কারখানা, দুটি অটো ইটভাটা, একটি বেকারি, একটি মুড়ি ভাজা ক¤পানিসহ ১০টি কোম্পানি গ্যাস ব্যবহার করছে। আরো দুই হাজার ৩৭৩ জন আবাসিক গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করছেন। ভোলার পূর্বে একটি টেক্সটাইল মিল নির্মাণ করা হচ্ছে।
গড়ে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঃ
ভোলায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ফলে এই অঞ্চলে গ্যাসভিত্তিক শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত বছরের গত ৩১ আগস্ট বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিনিয়র সচিব শেখ ইউছুফ হারুন অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন।
ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত ঃ
সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলার গ্যাস এত দিন জাতীয় গ্রিডে নেওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে জেলার বাইরে কাজে লাগাতে সিলিন্ডারে ভরে জেলার বাইরে গ্যাস নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য গত মে মাসে ইন্ট্রাকো নামের একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ১০ বছরের চুক্তি হয়েছে। কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) হিসেবে সিলিন্ডারে ভরে এই গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শিল্প-কারখানায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২১:২৩ ২১৮ বার পঠিত