অর্থনীতিতে নার্সারিশিল্প

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » অর্থনীতিতে নার্সারিশিল্প
মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩



---

।। এস এম রাজীব হোসাইন ।।

নার্সারি শিল্প বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত। “নার্সারি” হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল, ফল, সবজি, ভেষজ ও বনজ গাছের চারা ও কলম উৎপাদন করে বিক্রি বা বাজারজাত করার পূর্ব পর্যন্ত পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করা হয়। নার্সারির মূল উদ্দেশ্য হলো বৃক্ষরোপণের জন্য উত্তম মানের চারা সরবরাহ করা।

বর্তমানে নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে পরিবেশ, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, দারিদ্র্য বিমোচনসহ অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত। বর্তমানে সারা দেশে ছোট-বড় মিলে প্রায় ১৮ হাজার নার্সারি রয়েছে। দেশে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে ছোট আকারের একটি নার্সারিতে দৈনিক গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার, মাঝারি নার্সারিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার এবং বড় নার্সারিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার গাছ বিক্রি হচ্ছে।

ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের নার্সারি ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কাশেম। যিনি গত ২০ বছর যাবত এই শিল্পের সাথে জড়িত। তিনি বলেন, বর্ষার শুরুতে লেবু, কামরাঙা, মাল্টা, কতবেল, পেয়ারা, আমলকী, আমড়া, বরই ইত্যাদি ফলের গাছগুলো ভালো বিক্রি হয়। তবে বর্ষার ভরা মৌসুমে ভোলাতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সুপারি ও নারিকেলের চারা। ফলের মধ্যে কাঠাল ও আমের চাহিদা সারা বছরই থাকে। এছাড়া, সব ধরনের সবজি ও ভেষজ উদ্ভিদও এখন তার নার্সারিতে পাওয়া যায়। এরমধ্যে মধ্যে মরিচ, টমেটো, ঢেঁড়স, লাউ, শিম, ইত্যাদির চাহিদা বেশি। এসকল চাড়াগাছ ১০টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়।

বাংলাদেশে যেমন চালের বাজার, গরুর বাজার ইত্যাদি রয়েছে তেমনি নার্সারিতে উৎপাদিত গাছের জন্য কোনো বাজার নেই। একমাত্র মেলা ও মৌসুমে ছাড়া নার্সারি মালিকেরা তাদের পণ্য ক্রেতার সামনে উপস্থাপনের কোনো সুযোগ পায় না। তাই নার্সারি খাতের জন্য সরকারিভাবে একটি নির্দিষ্ট বাজার প্রয়োজন, যেখানে নার্সারি মালিকেরা তাদের উৎপাদিত গাছের চারা বিপণনের সুবিধা পেতে পারে।

একই সাথে, বাংলাদেশে বীজ উৎপাদনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও নার্সারি ব্যবসাকে এখনো শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এর উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য নেওয়া হয়নি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা। অন্যদিকে বাংলাদেশে নার্সারিশিল্পের অনেক সমস্যা রয়েছে। যেমন: গুণগত মানের বীজ, চারা ও মাতৃবৃক্ষের অভাব। পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব। চারা ও কলমের নি¤œমূল্য। উন্নতমানের চারা উৎপাদন, পরিচর্যার ও সংরক্ষণের লাগসই প্রযুক্তির অভাব। চারা গাছের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের প্রযুক্তিগত সমস্যা। সেচ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির স্বল্পতা। বাজারজাতকরণের সমস্যা।

সরকারি সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধানে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে নার্সারি শিল্প সত্যিকারের শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে নার্সারি পণ্য বিদেশে রফতানি হবে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথও সুগম হবে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো দৃঢ় হবে।

লেখকঃ এস, এম, রাজীব হোসাইন

এম,এস,এস (মাষ্টার্স) অর্থনীতি,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৭:০৭   ৫৩৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


ভোলায় ওমানিয়ান টুপি সেলাই প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট বিতরন
ভোলায় প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী ও উদ্যোক্তাদের মেলা অনুষ্ঠিত
ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা
চরফ্যাশনে দিনব্যাপী প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী
বোরহানউদ্দিনে ফুটপাতে ঈদের জমজমাট কেনাকাটা
পথে পথে চাঁদাবাজি, ভোলার তরমুজচাষি ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে
ভোলায় ব্যবসায়িক অগ্রগতি পর্যালোচনা সম্মেলনে রূপালী ব্যাংক পিএলসিকে সর্ব শীর্ষে নিয়ে যাবার অঙ্গীকার
ভেজাল মসলা তৈরি: ভোলায় ২ কারখানাকে জরিমানা
ভোলায় বেড়েছে আলু ও কাঁচা মরিচের দাম
ভোলায় নারী উদ্যোক্তাদের তিনদিনের ঈদমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল



আর্কাইভ