সাংবাদিকতা, সমাজসেবা ও সংগঠন প্রসঙ্গে (পর্ব-১৪)

প্রচ্ছদ » জেলা » সাংবাদিকতা, সমাজসেবা ও সংগঠন প্রসঙ্গে (পর্ব-১৪)
বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই ২০২০



---

॥ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন ॥

অতীতকাল থেকে দেখে এসেছি একজন সমাজসেবীকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু সহযোগী- সহকর্মী সমন্বয়ে একটি ছোটখাটো টিম তৈরি হয়ে যায়। যারা একসঙ্গে মিলে সমাজের বিভিন্ন কল্যাণ ও সেবা কার্যক্রম করে থাকে। যুগে যুগে এভাবেই হয়েছে কখনো বা তারা সবাই মিলে একটি সংগঠন করে তার মাধ্যমে কাজ করেছে, আবার কখনোবা একজন ব্যক্তি তার কিছু বন্ধু-বান্ধব মিলে সামাজিক কাজ কর্ম সম্পাদন করেছে। আমার নিজের জীবনেও ঠিক তাই দেখেছি। সেই ছাত্রাবস্থা থেকেই আমি কখনোবা অন্য কোনো বিশেষ সমাজসেবীর টিমে কাজ করেছি অথবা আমি নিজে কাজ করেছি, সেখানে আমার কিছু সহযোগী সহকর্মী বন্ধু পেয়েছি যারা নিজেদের সময় সামর্থ ব্যয় করে এসব সামাজিক কল্যাণ কর্মকা-ে অংশ নিয়েছে। এখনো আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কিংবা নাটাবের মাধ্যমে এ ধরনের ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো টিম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এক একটি কাজে দিনের পর দিন লেগে থেকেছি, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করেছি, প্রয়োজনবোধে অর্থ সমস্যা সমাধানের জন্য বিত্তবানদের দ্বারস্থ হয়ে তাদেরকেও এর সাথে সম্পৃক্ত করে কাজ সম্পাদন করেছি। কিন্তু কখনো এটা চিন্তা করি নাই যে, আমি  এখান থেকে কি পেলাম? এখানে আমার কোন অর্থনৈতিক অথবা অন্য কোন সুবিধা আছে কিনা? এ ধরনের চিন্তা কখনো মনের ধারেকাছেও আমাদের আসেনি। কিন্তু আজকের দিনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাউকে যদি কোন সামাজিক কর্মকা-ে ডাকা হয় সে আগে চিন্তা করে, আমার কি লাভ? দু-একদিন এসে আস্তে কেটে পড়ে। কারণ-যখন দেখে এখান থেকে তার কোনো অর্থনৈতিক কিংবা অন্য কোনো ফায়দা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি একটি দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা।
তারপরেও আমার বিশ্বাস এখনো যদি নতুন প্রজন্মের কাছে সমাজ সেবার গুরুত্ব সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়, যুবসমাজের মধ্যে সঠিক উপলব্ধিটা পৌঁছানো যায়, তাহলে অনেক বর্তমান আতœকেন্দ্রিক প্রজন্মের মধ্য থেকে অন্ততপক্ষে দু-চারজন স্বার্থত্যাগী মানুষ বেরিয়ে আসবে। সেই দু-চারজনকে দিয়েই অনেক মানুষের উপকারে বড় কিছু করা যেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
আমি আগেও বলেছি সমাজ সেবা করতে অনেক টাকা নিয়ে নামার প্রয়োজন নেই। সমাজ সেবা করতে একটি সুন্দর আশাবাদী মন নিয়ে নামতে হয়। আর সেটা যদি থাকে তাহলে টাকা কোন সমস্যা নয়। অবস্থার প্রয়োজনে টাকার সংস্থান এমনিতেই হয়ে যায়। কোন সামাজিক কর্মকান্ড টাকার জন্য সম্পাদন হয়নি, এরকম ঘটনা বিরল। আরেকটি বিষয় আমরা বর্তমানে দেখি সামান্য কিছু সামাজিক কর্মকান্ড করে সেটার নানাভাবে শুধু প্রচার চলতে থাকি। অথবা কৃতিত্ব নেওয়ার একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করি। হাজারো সমস্যায় ঘেরা আমাদের দেশ। এই দেশে একটি সমস্যা সমাধান কোন একক সংগঠন বা একক কোনো ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে সরকার মুখ্য ভূমিকা রাখে, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভূমিকা অপরিসীম, এরপরে সামাজিক নেতৃত্ব, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও সবাই মিলে একটি সমস্যার সমাধান করে। এখন সেই অনেকের সঙ্গে আমি অংশগ্রহণ করে যদি প্রতিদিন শুধু আমার ঢোল পিটাই, তাহলে একসময় অন্যদের সেটা শুনতে খারাপ লাগবে। এটাই স্বাভাবিক। আরেকটি প্রবণতা দেখা যায়, একটি সমাজসেবী সংগঠন করে দু-একটি কাজ করে সামাজিক সকল কাজের সোল এজেন্ট হিসেবে নিজেদেরকে মনে করে অন্য কেউ সামাজিক কর্মকান্ড করলে সেটাকে নানাভাবে তিরস্কার করা অথবা হেয় প্রতিপন্ন করা অথবা তাদেরকে সামাজিকভাবে বিপাকে ফেলার জন্য চেষ্টা করা। এই ধরনের হিংসার মনোবৃত্তি যাদের মধ্যে আছে তাদেরকে আর যাই হোক প্রকৃত সমাজসেবী বলা যাবে না। ইদানিং ঘরে-ঘরে সমাজ সেবা সংগঠন প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে। আমি জানি এদের বেশিরভাগ বিশেষ উদ্দেশ্য ও কারণে সৃষ্টি হচ্ছে। সময়ের আবর্তনে এক সময় এরা ঠিকই বিলীন হয়ে যাবে। আর যদি সত্যিকারের সমাজসেবী তারা হয়ে থাকে, তাহলে তারা টিকে যাবে। এটা আমার কিংবা আপনার কারো আগাম বলার বিষয় নয়। কারণ মেকি সমাজসেবীরা সমাজের চোখে ধুলা দিয়ে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না এক সময় তাদের অবস্থা হয়- “আমাকে থামাও, নইলে নিজে নিজে থেমে যাবো” অবস্থা।
সমাজসেবা বিষয়ক আমার সর্বশেষ কথা হলো, এটি একটি মহৎ কাজ। যিনি এ কাজ করবেন তাকেও মহৎ হতে হবে, অন্তত হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। নবী-রাসূলগণ সমাজ সেবা সমাজ সংস্কার করেছেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ মহামণিষীগণ সমাজ সেবা, সমাজ সংস্কার করেছেন। তাদের পদাঙ্ক অনুসারে তাদের জীবনী কার্যক্রম থেকে নিজের মধ্যেও সেই বৈশিষ্ট্যগুলো আনার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
পরিশেষে ভারতের জাতির পিতা মহাতœা গান্ধীর একটি ঘটনা উপস্থাপন করা প্রয়োজন মনে করছি। তিনি বৃটেন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় কিছুদিন ছিলেন। এই তরুণ ব্যারিস্টার সেখানে বর্ণবাদ এবং মানুষের প্রতি শোষণের বিরুদ্ধে বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন।
সকলের কাছে তিনি শ্রদ্ধেয় এবং বিশ্বব্যাপী তার নামটি ছিল সুপরিচিত। তিনি ভারতে এলেন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দিলেন। সেবার অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছিল কলকাতায়। ব্যারিস্টার মহাতœা গান্ধী সেই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলেন। কিন্তু তার অংশগ্রহণের কথা কাউকে জানালেন না। একজন কর্মী হিসেবে সে প্রতিদিন কাজ করছেন।
একদিন দেখা গেল, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য যেসব টয়লেট তৈরি করা হয়েছে সেখানে একজন লোক নিঃশব্দে ঝাড়– দিচ্ছে। উনি আর কেউ নন উনি মহাতœা গান্ধী। সম্মেলনের কোন একজন তাকে চিনতে পেরে নেতৃবৃন্দের কাছে জানালেন যে, ব্যারিস্টার মহাতœা গান্ধী সম্মেলনে এসেছেন এবং উনি টয়লেট পরিষ্কার করছেন। তখন তারা তাকে সসম্মানে ডেকে নিল। উনি বললেন, আমি একজন কর্মী, আমি তো এখানে প্রশিক্ষণের জন্য এসেছি, মানুষের জন্য কাজ করার জন্য এসেছি। আমার নিজেকে প্রকাশ করার জন্য নয়। এটাই একজন সমাজসেবীর বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
##
লেখকঃ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক আজকের ভোলা
সভাপতি, ভোলা রিপোর্টার্স ইউনিটি

বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৭:৩৪   ৫০৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩শ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক
ভোলায় ইমাম মুয়াজ্জিনদের সাথে মতবিনিময় সভায় দোয়া চেয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারেফ হোসেন
ভোলায় সাংবাদিকদের নিয়ে এলজিইডির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রচারনাকালে প্রার্থীর ওপর হামলা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর, আহত-৪
মানুষের শান্তি নষ্ট করে সন্ত্রাসী ও জলদস্যু দিয়ে ভোট নেয়া যাবেনা: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ
ভোলায় আইডিইবি’র দাবি বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলন
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
বিজয়ী হলে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো: মোশারেফ হোসেন
মটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ প্রার্থীর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
ভোলা পৌরশহর ও বাজারে নেই পাবলিক টয়লেট ॥ জনগনের ভোগান্তি চরমে



আর্কাইভ