ছোটন সাহা ॥
বঙ্গোপসাগর মোহনায় মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত প্রায় ৩ হাজার ৪০৪ বর্গমিটার আয়তনের দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ দ্বীপজেলা ভোলায়। ধান, সুপারি আর ইলিশের গোলা এই তিনের ভোলা এই শ্লোগানের মধ্যে এখন আর এই জেলার সীমাবদ্ধতা নেই। প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর দেশের সর্বদক্ষিণের এই জেলা এখন বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় জেলায় পরিণত হয়েছে।
দ্বীপজেলা ভোলায় ফের নতুন করে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের ৩টি কূপের (গ্যাসক্ষেত্রের) সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাপেক্স। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড বা বাপেক্সের উপ-ব্যবস্থাপক সৌমিত্র পাল চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপে ভোলায় ইলিশা-১, ভোলা নর্থ-২ এবং টবগি-১ নামের এ ৩টি কূপে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। তবে সেখানে কি পরিমান গ্যাস রয়েছে তা প্রাথমিকভাবে বলা যাচ্ছে না। রাশিয়ান কোম্পানী গ্যাস ফ্রোম নতুন এই ৩টি কূপ খননের কাজ করবে। জেলায় ইতমধ্যে ৬ টি কুপ খনন হয়েছে। খুব শীঘ্রই আরো ৩টি কুপ খনন হবে। এ ৩টি কুপের খনন শুরু হলে জেলায় সর্বমোট কুপের সংখ্যা দাড়াবে ৯ টিতে।

বাপেক্স জানিয়েছে, জেলার বোরহানউদ্দিনের শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৪টি কুপ ছাড়াও শাহবাজপুর ইষ্ট এবং ভোলা নর্থ নামে আরো দুটি গ্যাস ক্ষেত্রের ২টি কুপে মোট গ্যাসের মজুদের পরিমান প্রায় ১.৩ টিসিএস (ট্রিলিয়ন কিউবিট ফিট)। এরমধ্যে নতুন আবিস্কৃত শাহবাজপুর ইষ্ট কুপে মজুদ রয়েছে ৭শ’ বিসিএফ এবং ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রে রয়েছে প্রায় ১ টিসিএফ ঘনফুট গ্যাস। বাকি গ্যাস রয়েছে শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে।
বাপেক্স আরও জানায়, বর্তমানে ভোলাতে যে পরিমান গ্যাস মজুদ রয়েছে তার মধ্যে প্রতিদিন উত্তোলন হচ্ছে ৬৫ বিলিয়ন ঘনফুট। যা ৪ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, একটি কারখানা ও বেশ কিছু গৃহস্থলি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। জেলায় বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক গ্যাসের যে মজুদ রয়েছে। তা ভবিষ্যতে মোট মজুদের প্রায় দ্বিগুন হতে পারে।
সূত্রে জানা গেছে, শাহবাজপুর ইষ্ট নামের একটি কুপ এবং নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রে গ্যাসের মজুদ থাকলেও সেখান থেকে আপাতত কোন গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে না, তবে এসব কুপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। নতুন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র না থাকায় গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছেনা। এ জেলায় আরো বিপুল পরিমান গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে জানাযায়।
এদিকে ভোলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুর মমিন টুলু জানান, ভোলায় নতুন ৩টি গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ায় তিনি আনন্দিত ও উচ্ছসিত। নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের মাধ্যমে ভোলার যে উন্নয়নের সম্ভাবনার তা আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। এই গ্যাসকে কেন্দ্র করে ভোলায় বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। এতে করে ভোলা থেকে ইন্ডাস্ট্রির মালামাল মংলাপোট ও চট্টগ্রামে রপ্তানিতে অনেক খরচ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে ভোলার গ্যাস ব্যাবহারের মধ্যেদিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান হলে আগামী কয়েক বছর পর একটি উন্নয়নশীন জেলায় রুপান্তিত হবে ভোলা এমনটিই প্রত্যাশা ভোলাবাসী। এতে একদিকে যেমন জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাদের দাবী, গৃহস্থালির কাজেও গ্যাস সংযোগ দেয়ার।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার হয়। সেখানে ৪ টি গ্যাস কুপ খনন হয়েছে। বর্তমানে ১, ২ ও ৩ নং কুপ থেকে গ্যাস উত্তেলন হচ্ছে। শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে মজুদ রয়েছে প্রায় ১.৩ টিসিএফ ঘনফুট গ্যাস।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৭:১৩   ৪৩৫ বার পঠিত