নাব্যতা সংকটে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ- রুটের ফেরী ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » নাব্যতা সংকটে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ- রুটের ফেরী ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত
সোমবার, ৩ জুন ২০১৯



---

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে ব্যাহত হচ্ছে লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা ও বরিশাল নৌ-রুটের যানচলাচল। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা মেঘনা নদীর ডুবোচরে আটকা পড়ে থাকতে হয় ফেরী ও লঞ্চসহ যাত্রীদের। ফলে এ নৌ-রুটে চলাচলকারী যানবাহন ও ঈদে ঘর মুখো যাত্রীরা পড়ে চরম দূর্ভোগে। সামান্য লোক দেখানো ড্রেজিং করা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, চালক ও যাত্রীরা। তবে বিষয়টি স্বীকার করে বিআইডাব্লিওটিসির কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর হয়েছে।এ দিকে পুলিশ বলছে, নির্ভিগ্নে নিরাপদে ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বজনদের কাছে যেতে পারেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ রয়েছে,লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুীরহাট ডুবোচর খননের কাজ একমাস ধরে চল্লেও খনন কাজে ড্রেজার মেশিনটি দিয়ে একস্থানের মাটি দ্রুরুত্বে সড়িয়ে না ফেলে একই স্থানে খননের মাটি ফেলায় আরো অতিরিক্ত ডুবোচর দেখা দিয়েছে। এতে করে নতুন করে আরো কিছু স্থানে নাব্য সংকটসহ ডুবোচর জেগে উঠেছে। এসব জায়গায় ভাটার সময় থাকে কোমর পরিমান পানি থাকে। ওই পানি দিয়ে ফেরি ও লঞ্জ এমনকি সি ট্রাক চলাচলে আট থাকতে হয় জোয়ারের অপেক্ষায়। জোয়ার আসলেই নদীতে কিছুটা পানি বাড়ে। এরপর ফেরী ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থার কারণে লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুীরহাট ঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দুড়ে নোঙ্কর করে থাকছে যাত্রীবাহি লঞ্চ ও সি ট্রাকসহ চলাচলরত ফেরি। প্রতিদিন জীবনের যুকি নিয়ে মজুচৌধুীরহাট ঘাট থেকে যাত্রীরা নৌকা ভাড়া করে যাত্রীবাহি লঞ্চ ও সি ট্রাকসহ ফেরি উঠছেন। তবে সঠিক সময়ে দ্রুত ড্রেজিং করে ফেরী ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক করবেন এমনটাই প্রত্যাশা এ নৌ-রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও সাধারন মানুষ। জানাগেছে, ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটটি চালু করে কামেনী,কিশানী ও কস্তুরীনামের তিনটি ফেরী নিয়ে দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াতের জন্য চালু করে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম, ভোলা ও ইলিশাসহ দেশের দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের চলাচল নৌ-রুটে এটি। পর্যাপ্ত ফেরী, সী-ট্রাক ও লঞ্চ না থাকায় ঘাটে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। মজুচৌধুীরহাট লঞ্চঘাটের এক কিলোমিটার দুরে রহমতখালী চ্যানেল হয়ে এ নৌ-রুটে বর্তমানে চলাচল করছে কনক চাপা, কিষানী ও কলমীলতা নামে তিনটি ফেরী। এরপর রয়েছে নাব্যতা সংকটসহ বিশাল এক ডুবোচর। যা দিয়ে কোন রকম চলছে চারটি লঞ্চ ও দুইটি সী-ট্রাক হয়ে লক্ষ্মীপুর-ভোলা এ নৌ-রুটের যাত্রীরা। এ ছাড়া এ অবস্থায় প্রতিদিন ২-৬ ঘন্টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পন্যবাহীসহ যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে ফেরী ও লঞ্চ ডুবোচরে আটকে থাকতে হয়। জোয়ার আসলেই নদীতে কিছুটা পানি বাড়ে। এরপর ফেরী ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। বিশেষ করে গত তিন মাস ধরে এ সমস্যা সুষ্টি হয়।

স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ রুটে মেঘনার মজুচৌধুীরহাট লঞ্চঘাটের এক কিলোমিটার দুরে রহমতখালী চ্যানেল ড্রেজিং কাজ চলছে দীর গতিতে। দিনে সারাদিন মেশিন বন্ধ রেখে বিকাল সময়ে ড্রেজিং কাজ করছেন তারা। দ্রুত ড্রেজিং কাজ শেষ করার দাবী জানিয়েছেন তারা। অপরদিকে ড্রেজিং এর কাজ শেষ না হওয়ায় এখন ভাটায় ডুবোচরে আটকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তখন চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষের। এ ছাড়া এ রুট হয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদন কারী শ্রমিক, কৃষক, পরিবহন মালিক শ্রমিক, যাত্রী সহ লাখ লাখ মানুষ। কথা হয় ঈদে ঘরমুখো ভোলা যাত্রী সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, কয়েক বছর যাবত তিনি চট্রগ্রামে চাকুরী করে আসছেন। তিনি ছুটিতে তার সাঙ্গে তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভোলা তমিজ উদ্দিনের বাড়ী যাচ্ছেন। গাড়ী যোগে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীঘাটে এসেছেন সকাল সাড়ে ১০ দিকে। দেখেন ঘাটে নৌকা ছাড়া লঞ্জ নাই। তাকে ভোলা যেতে হলে আরো দেড় কিলোমিটার নদী পথে নৌকা হয়ে ভোলার লঞ্জে উঠতে হবে। তিনি বাধ্য হয়েই আড়াইশত টাকা জনপ্রতি টিকেট এ লঞ্জে উঠেছেন। প্রশাসন দেখেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন ট্রাক চালক তাজল ইসলাম। তিনি আরো জানান,ফেরি নদীর মাঝ পথে নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে গিয়ে পারাপারে সময় বেশি লাগায় পরিবহরেন ট্রিপ কমে যাওয়ায় বিপাকে পরতে হচ্ছে তাদের। তার মতে এ সমস্যা সমাধানে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। ফেরি মাষ্টার আশ্রাফুল ইসলাম জানান, যাত্রীসহ গাড়ী নিয়ে ডুবোচরে ১২ ঘন্টার অধিক সময় লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ রুটে আটকে থাকতে হয়। তিনি আরো জানান,ডুবো চরের কারণে ঠিকমত ফেরী বা লঞ্চ না পাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় নৌ-রুটে চলাচলকারী ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের।ডুবোচরগুলো সঠিক ড্রেজিং হলে দ্রুত যাতায়েতসহ নিদিষ্ট সময়ে ফেরি গন্তবে পৌছনো সম্বব হতো। ফেরি কনক চাপার মাষ্টার এনায়েত হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ রুটে ডুবোচরগুলো ড্রেজিং দ্রুত না হওয়া ও ড্রেজিং একইস্থানে মাটি কেটে মাটি ফেলায় নতুন করে আবার নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে নদীতে ফেরি আটকে পন্যবাহী গাড়িসহ যাত্রীদের নিয়ে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকতে হচেছ ঘন্টার পর ঘন্টা। তবে কাজটি সঠিক ভাবে দ্রুত করার অনুরোধ জানান তিনি। বি আই ডব্লিউ টিসির লক্ষ্মীপুরে দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক মো. কাউছার হোসেন জানান,নাব্যতা সংকটের কারণে ঠিকমত ফেরী ও লঞ্চ চলাচল করা যাচ্ছেনা।ফেরী ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ঠিকমত লোড-অনলোড করা যাচ্ছেনা। অনেক সময় নদীর ডুবোচরে আটকা পড়ে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর হয়েছে। তারপরও দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশাবাদ করেন তিনি। চাদঁপুর ও লক্ষ্মীপুরের দায়িত্বরত বন্দর ও পরিবহন (বিআইডাব্লিউটিএ) উপ-পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আব্দুলরাজ্জাক জানান, লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট থেকে ভোলা ইলিশা ঘাট পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে ৬ টি ডুবোচর রয়েছে। ফেরী ও লঞ্চ চলাচলে ড্রেজিংএর কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হলে ফেরী ,লঞ্চসহ সি ট্রাক চলাচলে অসুবিধা থাকবেনা। তবে একেই স্থানে মাটি তুলে আবার ফেলা হচ্ছে সে বিষয়টি গুরুত্বদিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার আসম মাহাতাব উদ্দিন জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নিভিগ্নে নিরাপদে ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বজনদের কাছে যেতে পারেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঘাটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া যেন ছোট ছোট নৌ-যানগুলো না চলতে পারে, সে দিকেও পুলিশের নজর রয়েছে। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৪:৫৯   ১৩৬৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


বোরহানউদ্দিনে ৪৮ জেলের মধ্যে বকনা বাছুর বিতরণ
মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ভোলায় লাজফার্মা মডেল ফার্মেসির উদ্বোধন
ভোলা মহাজনপট্টিতে স্বপ্ন আউটলেটের শাখা উদ্বোধন
লালমোহনে ১২৬ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
ভোলার গ্যাস উৎপাদন: কূপ খননে আরও চড়া দাম চায় গাজপ্রম
ভোলায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই
নদীতে মিলছে না কাংখিত ইলিশ, হতাশ জেলেরা
কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের শ্রমিকরা
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা



আর্কাইভ