বিশেষ প্রতিনিধি ॥
কেঁচো সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন ও গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। খরচ কমে চাষাবাদে। এর ফলে কৃষকদের কাছে এই সারের চাহিদা অনেক। স্থানীয় কৃষকদের চাহিদার কথা ভেবে ২০২০ সালে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন ভোলার লালমোহন উপজেলার যুবক মো. মনজুর হোসেন।
তিনি উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের কলেজপাড়া এলাকার মো. ইয়াছিনের ছেলে। মনজুরের দেখাদেখি এখন ঐ এলাকার অন্তত অর্ধশত পরিবারের নারী-পুরুষ এ সার উৎপাদন করছেন।
মনজুর হোসেন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে ২০২০ সালে মাত্র চারটি রিংয়ে এক হাজার পিস কেঁচো দিয়ে সার উৎপাদন শুরু করি। সময়ের ব্যবধানে কেঁচো সার উৎপাদনের প্রসার ঘটিয়েছি। বর্তমানে চারটি হাউসের শতাধিক রিংয়ে অন্তত দশ লাখ কেঁচো রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে গড়ে চার টন কেঁচো সার ও পঞ্চাশ কেজি কেঁচো উৎপাদন হয়। কেঁচো ও কেঁচো সার আলাদা আলাদা বিক্রি হয়। প্রতি কেজি কেঁচো তিন হাজার টাকা দামে বিক্রি করি। আর প্রতি কেজি কেঁচো সার গড়ে ১৫ টাকা ধরে বিক্রি করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, এই কেঁচো ও সারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লালমোহন উপজেলার কৃষকদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমার থেকে কেঁচো ও কেঁচো সার সংগ্রহ করে। এই সার উৎপাদনে গোবর এবং কচুরিপানাসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করি। এর পেছনে মাসে দশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তবে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকার কেঁচো বিক্রি করতে পারি, আর সার বিক্রি করতে পারি প্রায় চল্লিশ হাজার টাকার। মাস শেষে খরচ বাদে আমার অন্তত অর্ধলক্ষ টাকার মতো লাভ হয়। এই কেঁচো ও সার উৎপাদনের মাধ্যমে আমি এখন স্বাবলম্বী।
মনজুর হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় প্রথমে আমি একাই শুরু করি কেঁচো ও সার উৎপাদন। তবে এখন অন্তত অর্ধশত পরিবারের নারী-পুরুষ আমার দেখাদেখি এ কাজ শুরু করেছেন। তাদেরকে প্রায় সময় আমি সহযোগিতা করি। এমনকি তাদের উৎপাদিত কেঁচো ও কেঁচো সার আমি নিজে বিক্রি করে দেই। এতে করে তারা ঘরে বসেই মোটামুটি ভালো টাকা আয় করছেন।
উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার নতুন কেঁচো সার উৎপাদনকারী শান্তনা রাণী বলেন, মনজুর ভাইয়ের দেখাদেখি আমি এই সার উৎপাদন শুরু করি। এখন ১৪টি রিংয়ের মাধ্যমে কেঁচো ও সার উৎপাদন করছি। প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করতে পারি। এতে করে সংসারে বাড়তি উপার্জন হচ্ছে।
ঐ এলাকার কৃষক মো. নূরনবী ও লিটন সরকার বলেন, কেঁচো সার ফসলের জন্য অনেক উপকারী। এজন্য আমরা ফসল উৎপাদনের জন্য কেঁচো সার ব্যবহার করছি। এতে করে আমাদের খরচ অনেকটা কমেছে। ক্ষেতে কেঁচো সার প্রয়োগের মাধ্যমে ফলনও ভালো হচ্ছে। এর ফলে কম খরচে আমরা অধিক লাভবান হতে পারছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম শাকিল ও ভুট্টু মাল জানান, এলাকায় অনেকেই এখন কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। এতে করে তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, পাশাপাশি এলাকায় কমছে বেকারত্বের সংখ্যা। অনেকে আবার এই কেঁচো সার উৎপাদনের মাধ্যমে বাড়তি উপার্জনও করছেন। আমরা মনে করি; সবাই যদি নিজের কর্মসংস্থান নিজে তৈরি করে তাহলে সমাজ-দেশ থেকে বেকারত্ব অনেকাংশে কমবে।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টুটুল চন্দ্র সাহা বলেন, মনজুর হোসেনকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কেঁচো সার উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তাকে বিনামূল্যে রিং ও কেঁচো দেওয়া হয়। কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ পেয়ে তা কাজে লাগিয়েছেন যুবক মনজুর হোসেন। তিনি এখন সফল কেঁচো ও কেঁচো সার উৎপাদনকারী।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টুটুল চন্দ্র সাহা আরো বলেন, মনজুরের উৎপাদিত কেঁচো সারের স্থানীয় কৃষকদের কাছেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ কৃষকরা এ সার ব্যবহার করে কম খরচে ভালো ফলন পেয়ে অধিক লাভবান হচ্ছেন। যেকোনো প্রয়োজনে মনজুর হোসেনকে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। নতুন করে কেউ আগ্রহী হলে, তাদেরও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫২:৫৯ ৯৫ বার পঠিত