অগ্রণী ব্যাংক লালমোহন শাখা; দালাল চক্রের কাছে জিম্মি কৃষি ঋণ, প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত!

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » অগ্রণী ব্যাংক লালমোহন শাখা; দালাল চক্রের কাছে জিম্মি কৃষি ঋণ, প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত!
মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১



বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার লালমোহন উপজেলায় অগ্রণী ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত কৃষকদের মাঝে কৃষি ঋণ বিতরণ না করে নিয়ম বহিভূতভাবে দালালদের মাধ্যমে প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও গার্মেন্টস কর্মীদের মাঝে এ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এমনকি ঋণ নিতে গিয়ে দালালদের মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের নামে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে গ্রহীতাদের। এতে করে প্রকৃত কৃষকরা সরকারের এ সুবিদা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সরকারি নিয়মে কৃষি ঋণ শুধু মাত্র কৃষকের মাঝে বিতরণের কথা থাকলেও অবৈধ সুবিদা নিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের মাঝে এ ঋণ বিতরণ করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
অগ্রণী ব্যাংক লালমোহন শাখা সূত্রে জানা গেছে, এই শাখাটি একটি কৃষি ঋণ বিতরণ শাখা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ শাখায় কেন্দ্রীয় শাখা থেকে কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণের জন্য ৩কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সে আলোকে ইতোমধ্যে ওই উপজেলার ২৩০ জনকে ৫৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে বেশীর ভাগই পুরাতন ঋণ গ্রহীতা। পুরাতন ঋণ আদায় করতে না পেরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পুনরায় ঋণ দিয়ে পূর্বের ঋণকে আদায় দেখিয়েছেন। এছাড়াও এবছর নতুন করে ৩০-৪০ জনকে কৃষি ঋণ দেয়া হয়েছে।
সরে জমিন লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে অগ্রণী ব্যাংক লালমোহন শাখা থেকে ২০জনের অধিক গ্রাহককে কৃষি ঋণ দেয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে বেশীরভাগই অন্য পেশায় কাজ করেন। এমনকি এদের মধ্যে অনেকে জীবনে কৃষি কাজও করেনি।
নতুন কৃষি ঋণ নেয়া গার্মেন্টস কর্মী মো. সোহেল জানান, সে দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। সে জীবনে কৃষি কাজ করেনি। তাঁর বাবা ও ভাই কেউ কৃষির সাথে জড়িত না। তাঁর নামে স্থানীয় তোফায়েল নামের অগ্রণী ব্যাংকের এক দালাল ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ করিয়ে খরচ বাবদ সাড়ে ৬হাজার টাকা রেখে তাকে ১৩হাজার টাকা দিয়েছেন। এই টাকা তাকে ধীরে ধীরে পরিশোধ করতে বলেন ওই দালাল।

---

আরেক ঋণ গ্রহীতা মো. রিয়াজ বলেন, তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন। কিছু দিন আগে স্থানীয় আলমগীর নমের এক দালালের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। আলমগীর তাঁর কাছ থেকে খরচের কথা বলে ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন।ঋণ গ্রহীতা ওমান প্রবাসী মো. মনিরের বাবা আব্দুর রব বলেন, তাঁর ছেলে মনির গত কিছু দিন আগে বিদেশে যাওয়ার সময় টাকার দরকার হলে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। তবে কতো টাকা নিয়েছে সেটা তিনি জানেন না এবং মনির কোনো দিন কৃষি কাজ করেনি। এছাড়াও  দুই-তিন বছর আগ থেকেই তিনিও কোনো চাষাবাদ করেন না।
লালমোহন উপজেলায় এরকম ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩০ জনের অধিক। যারা সবাই ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষক না হয়েও কৃষি ঋণ পেয়েছেন। এমনকি অগ্রণী ব্যাংক লালমোহন শাখা থেকে পাশ্ববর্তী তজুমদ্দিন উপজেলার শাহিদা খানম ঝর্ণা নামের একজনকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জনা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক লালমোহন শাখার কৃষি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এলাকা ভিত্তিক ৫-৭ জনের একটি দালাল চক্র। অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকের ফিল্ড অফিসার মো. জামাল ও ব্যবস্থাপক মো. জামাল উদ্দিনের যোগসাজশে কৃষি ঋণ বিতরণে ঘুষ বাণিজ্য হয়ে থাকে। এমনকি গত ২-৩ মাস পূর্বে ঋণ দিয়ে ঘুষ গ্রহনের সময় স্থানীয় কৃষকদের তোপের মুখে পড়েন। পরে স্থানীয়দের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে এরকম কাজ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পান। বিষয়টি জানার পরও অগ্রণী ব্যাংক ভোলা আঞ্চলিক অফিস লালমোহন শাখার ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সে পুনরায় দালালদের মাধ্যমে এ অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
লালমোহনের স্থানীয় কৃষক আব্দুল মোনাফ, সিরাজল হকসহ ১০-১৫ জন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা প্রকৃত কৃষক হয়েও ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ পায়নি। দালাল ছাড়া ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ পাওয়া যায় না। দালালের মাধ্যমে ঋণ নিতে গেলে দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। এ জন্য তাঁরা সরকারের এ সুবিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংক লালমোহন শাখার ব্যবস্থাপক মো. জামাল উদ্দিন অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, কৃষি ঋণ বিতরণে ফিল্ডে গিয়ে যাচাই বাচাই করে ঋণ দেয়া হয়। তবে অনেক গ্রাহকের মধ্যে দুই-একটি ভুল হতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন।দালালের মাধ্যমে টাকা আদয়ের ব্যাপারে তিনি জানান, আমার কাছে কেউ আসলে মাত্র ১৫০ টাকা খরচ করে কৃষকরা ঋণ পেয়ে থাকে। তবে গ্রাহকরা ব্যাংকের বাহিরে গিয়ে কাউকে পুরো টাকা দিয়ে দিলেও আমাদের কিছু করার নেই।
অগ্রণী ব্যাংক ভোলা জোনের সহকারি মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কৃষি ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি এর আগে কেউ অভিযোগ করেনি। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অগ্রণী ব্যাংক বরিশাল সার্কেলের মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা এ বিষয়ে ভোলা অঞ্চল প্রধানকে ডেকেছি। সে আসলে বিষয়টি সম্পর্কে জেনে তদন্ত কমিটি গঠন করবো। তদন্তে প্রমানিত হলে প্রবেদনটি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০:১৬:০৩   ৩৪৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


নদীতে মিলছে না কাংখিত ইলিশ, হতাশ জেলেরা
কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের শ্রমিকরা
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা
লালমোহনে তীব্র গরমে মুরগির খামারিদের বাড়ছে দুশ্চিন্তা
‘নকশী কাঁথা’ সেলাই করে ঘুরে দাঁড়ালেন ভোলার আমেনা খানম
ভোলায় ওমানিয়ান টুপি সেলাই প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট বিতরন
ভোলায় প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী ও উদ্যোক্তাদের মেলা অনুষ্ঠিত
ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা
চরফ্যাশনে দিনব্যাপী প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী
বোরহানউদ্দিনে ফুটপাতে ঈদের জমজমাট কেনাকাটা



আর্কাইভ