ভোলায় যমজ দুই নাতিকে নিয়ে বিপদে নানি

প্রচ্ছদ » জেলা » ভোলায় যমজ দুই নাতিকে নিয়ে বিপদে নানি
রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১



ইমতিয়াজুর রহমান।। 

ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের রহমান ও নুপুর দম্পতির কোল আলোকিত করে এক মাস ৭ দিন আগে ভূমিষ্ঠ হয় আলিফ ও আরিফ নামের যমজ দুই ভাই। জন্মের পর কিছুদিন ভালো থাকলেও ১৫ দিনের মাথায় দুজনই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। ফলে তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে।

---

একপর্যায়ে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়। অবস্থার অবনতি দেখে ভোলা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

কিন্তু চিকিৎসকের এই পরামর্শে যমজ দুই নাতিকে দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা রুলজান বেগমের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। কারণ, দেশে লকডাউন চলমান, এই মুহূর্তে তিনি যাবেন কোথায়? কীভাবে?

কথা হয় রুলজান বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাইয়াডার ছয় বছর পরে দুইডা পোলা হইছে। বাড়ির হগলে খুশি হইছিল। হঠাৎ ঠান্ডা লাগছে। এখন ডাক্তার কয় বরিশাল নিতে। রাস্তায় গাড়িঘোড়া চলে না, লঞ্চও বন্ধ। পোলার বাহে নাই বাড়িত, মায় অসুস্থ। এহন আমি কী দিয়া কী করমু, বুঝতাছি না।

শুধু আলিফ ও আরিফ নয়, ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য শতাধিক রোগী ভর্তি আছে বর্তমানে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনার মধ্যেই তাল মিলিয়ে ভোলায় শিশুদের বাড়ছে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে ৫৮ জন নিউমোনিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে একটি শিশু। বর্তমানে জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আছে আরও ৮৯ জন। তাদের বেশির ভাগই নিউমোনিয়া আক্রান্ত। হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেশি থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিত খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স।

সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে বেড (শয্যা) রয়েছে ২৫টি এবং কেবিন রয়েছে ৭টি। কিন্তু তার বিপরীতে রোববার (৪ জুলাই) দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী ছিল ৮৯ জন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেড না থাকায় একটি বেড গড়ে ২ থেকে ৩ জন করে শিশু রোগী গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে।

শিশু ওয়ার্ডের তথ্যমতে, হাসপাতালে ২৫ জুন ১১ জন রোগী ভর্তি হলেও মধ্যরাতে ৫ মাস বয়সী খাদিজা নামের এক শিশু মারা যায়। এ ছাড়া ২৬ জুন ৪ জন, ২৭ জুন ৯ জন, ২৮ জুন ৯ জন, ২৯ জুন ৪জন, ৩০ জুন ১২ জন, ১ জুলাই ৭ জন, ২ জুলাই ৬ জন, ৩ জুলাই ৯ জন এবং ৪ জুলাই দুপুর পর্যন্ত ১২ নিউমোনিয়া রোগী চিকিৎসাধী রয়েছে।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রোজিনা ইসলাম জানান, ইদানীং রোগীদের চাপ অনেক বেশি। এক বেডে দুই-তিনজন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কষ্ট হলেও আমরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। রোগীদের স্বজনদের চাপও একটু বেশি। এতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. শাকিল জানান, বছরের এই দিনটায় সিজনালি শিশুদের ঠান্ডা রোগ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি বর্তমানে কোভিডের প্রভাবেও বাড়তে পারে। তিনি আরও জানান, শিশু ওর্য়াডে প্রতিদিন ২৫ জন রোগী ভর্তি হলে তার মধ্যে ২০ জনই নিউমোনিয়া রোগী শনাক্ত হয়। আমরা অক্সিজেন, স্লাইন, ইনজেকশন দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ভোলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন জানান, টানা বর্ষার কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা বা জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের ডাক্তার ও নার্স রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। বেড কম থাকায় তাদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তবে আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। আপাতত শয্যা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৮:৪৫   ৩৭৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


আশরাফ হোসেন লাভু ছিলো আ’লীগের নিবেদিত প্রাণ: তোফায়েল আহমেদ
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ॥ আহত-৩০
আমাকে মটর সাইকেল প্রতীকে আপনাদের মুল্যবান ভোটটি দিবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ ইউনুছ
নদীতে মিলছে না কাংখিত ইলিশ, হতাশ জেলেরা
সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস-পলাশ এর মতবিনিময় সভা
ভোলায় তীব্র তাপদাহের পর একপশলা প্রশান্তির বৃষ্টি
ভোলা জেলা শ্রমিক লীগের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান মে দিবস পালিত
কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের শ্রমিকরা
বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত, তবু লোডশেডিং
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা



আর্কাইভ