চরফ্যাশনে জলাবদ্ধতায় ডুবে গেলো কৃষকদের স্বপ্ন

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » চরফ্যাশনে জলাবদ্ধতায় ডুবে গেলো কৃষকদের স্বপ্ন
শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০



চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥
পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ বা নালা ব্যবস্থার অভাবে তিন দিনের ধ্বারাবাহিক অতি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেলো চরফ্যাশন উপজেলার কৃষকদের স্বপ্ন। গত মঙ্গলবার (২০অক্টোবর) থেকে শুরু করে শনিবার (২৪ অক্টোবর) পর্যন্ত বিরামহীন বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল।

---

উপজেলার প্রায় ১২শ ৯৭ হেক্টর জমিতে শসা, করলা, ঝিঙ্গা, বরবটিসহ বিভিন্ন শাক সবজি আবাদ হলেও জলাবদ্ধতায় হাজার হাজার হেক্টর জমির সবজিসহ আগাম রবি শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে লাখ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন হওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে এসব কৃষকদের।
এছাড়াও ৬৮ হাজার ১শ ৭৫ হেক্টর জমিতে আমন (উফশি) ও আমন (স্থানিয়) বা দেশি ২১শ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। তবে আমনের ক্ষতির সংখ্যাটা অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু কম হলেও এবছর আমন (উফশি) ৩হাজার ৬শ ৮২ হেক্টর ও আমন (স্থানিয়) বা দেশি ৪শ ২২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে পানের বাজার বেশ ভালো চললেও এবছর ২৫৮ হেক্টর জমিতে পান চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৫ হেক্টর জমির পান জলাবদ্ধতায় ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, সম্প্রতি অতি বর্ষা, বাতাস ও জলাবদ্ধতায় ধান, সবজি, পানসহ মৎস্য পুকুর ডুবে গিয়ে প্রায় লাখ, লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে অসহায় কৃষক শ্রেণীর। ফসলের এ ব্যাপক ক্ষতিসাধনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের শত, শত কৃষক।
উপজেলার ফার্মার এসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, উপজেলার মাদ্রাজ, আসলামপুর, হাজারিগঞ্জ, জাহানপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় স্লুইসগেটের সংস্কারের অভাবে এবং বিভিন্ন স্লুইসগেটের ওয়াসার না থাকায় নদী ও সমুদ্রের লবনাক্ত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। যার ফলে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে।
আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ডের একাধিক সবজি চাষি কান্নাভরা কন্ঠে বলেন, আগাম রবি শস্য না উঠতেই কার্তিকের বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় আমাদের শতশত হেক্টর জমির ধান ও সবজি খামার নষ্ট হয়ে গেছে। খাল ও জলাশয় খনন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার করা না হলে এভাবে প্রতিবছর আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়ে যায়।
সুমন ফকির বলেন, আমি প্রায় দুই একর জমিতে শশার আবাদ করেছি। অতি বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে আমার সকল শসা গাছ মরে যাচ্ছে। এওয়াজপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গির হাওলাদার জানান, তিনি দেড় এশর জমিতে শসার আবাদ করেন। কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে শশা ও করলা গাছের গোড়া পঁচে সকল গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে তার প্রায় ৩লাখ টাকা ক্ষতি হবে। এছাড়াও একই এলাকার তোফায়েল ব্যাপারির এক একর জমির শশা বরবটি ও করলা গাছ জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে। ফলে তোফায়েল ব্যাপারীর ২লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান। দুলারহাট চর যমুনা, আসলামপুর, জিন্নাগড় দাসকান্দিসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে পানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
নুরাবাদ ইউনিয়নের পান চাষী নিরোব, আহাম্মদপুর ইউনিয়নের আশরাফুল আলম খোকন আসলামপুর ইউনিয়নের চামেলি রানি, দাসকান্দি এলাকার বিনয় কৃষ্ণ হালদারসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, ভারীবর্ষনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে তাদের প্রায় হাজার,হাজার পানের লতা পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে এসব কৃষকের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের বিষমুক্ত ও নিরাপদ সবজি চাষিরা চরফ্যাশন বাজারে নিরাপদ সবজি ন্যায্য মূল্যে বিক্রির জন্য একটি বিষমুক্ত ও নিরাপদ সবজির হাট বসানোর জন্য দাবি জানান উপজেলা প্রশাসনের কাছে।
তারা জানান, চরফ্যাশন বাজারের সবজির আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটের ফলে তারা অধিক বিনিয়োগে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা।
দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ঝরঝঞ্চার পাশাপাশি, লবনাক্ততার পরিমান ও বজ্রপাতসহ টর্নেডো অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মীরা মনে করছেন।
উপজেলা জলবায়ু ফোরামের সভাপতি এমআবু সিদ্দিক বলেন, গত ৬বছরে নদী ও সমুদ্রের গতিধ্বারা বা স্রোতসহ পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া এবং চরাঞ্চলের খাল ও জলাশয়ে কলকাখারনা ও মানুষের অতিমাত্রায় বর্জ্জ্য ফেলার পরিমান বেড়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন বা এলাকায় পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ খননের অভাবে এবং সময়ের পরিক্রমায় এসব খাল জালাশয়গুলো পলি বা মাটিতে ভরে যাওয়ায় বৃষ্টি ও নদ নদীর পানি না নামার কারণেই সবজি, ধানসহ পান ও মৎস্য পুকুর ডুবে গিয়ে কৃষকের লাখ লাখ টাকার এ ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও পুকুর দিঘি ও জলাশয়গুলোও মাটি দিয়ে ভরে ফেলাও এর জন্য দায়ি বলে মনে করেন উপজেলার পরিবেশবিদরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিরামহীন বৃষ্টিপাতের ফলে আগাম শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক কৃষককেই নতুন করে আবার শীতকালীন সবজি আবাদ করতে হবে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক এসব ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরি করে সরকারের প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ চরফ্যাশন এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার স্লুইসগেটে খালাসিদের কার্যক্রম সরকারিভাবে বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের দায়িত্বে রয়েছে স্লুইসগেটগুলো। তবে স্লুইসগেটে অব্যাবস্থাপনা হলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়াও চরফ্যাশন উপজেলার পাঁচটি খাল খননে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি পাশ হলে খালগুলো খনন করা হবে। এবং পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল খাল ও জলাশয় সংস্কার করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৫:৫৬   ৩৫৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


বোরহানউদ্দিনে ৪৮ জেলের মধ্যে বকনা বাছুর বিতরণ
মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ভোলায় লাজফার্মা মডেল ফার্মেসির উদ্বোধন
ভোলা মহাজনপট্টিতে স্বপ্ন আউটলেটের শাখা উদ্বোধন
লালমোহনে ১২৬ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
ভোলার গ্যাস উৎপাদন: কূপ খননে আরও চড়া দাম চায় গাজপ্রম
ভোলায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই
নদীতে মিলছে না কাংখিত ইলিশ, হতাশ জেলেরা
কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের শ্রমিকরা
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা



আর্কাইভ