ছোটন সাহা ॥
বিশুদ্ধ পানি, বাসস্থান সংকট ও জরাজীর্ন ঘরসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে ভোলা সদরের মাঝের চরের আশ্রায়ন কেন্দ্রের ঘরগুলো। এসব ঘর এখন অনেকটাই বসবাসেরর অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানে গাদাগাদি করে বসবাস করছে একেকটি ঘরে ৪/৫টি পরিবার। এতে গরম ও শীতের দিনে বহু কষ্ট করে মানবেতর দিন কাটাতে হয় আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের।
একের পর এক সমস্যা নিয়ে দিন কাটালেও গত ১০ বছরেও এসব বাসস্থান মেরামত করা হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এ অবস্থায় সেখানে নতুন আরো দুটি আবাসন কেন্দ্র স্থাপনের দাবী তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন ৫’শ পরিবারের জন্য ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার বড়াইপুর ও রামদেবপুর নামে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
সরকারিভাবে সেখানে আশ্রয় পেয়ে ভূমিহীনদের মুখে হাসি ফুটলেও শীতের দিনে বাতাস আর বর্ষায় ঝড় বৃষ্টিতে ভীজে দিন কাটাতে হয় তাদের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনরে পরে তা আর মেরামত করা হয়নি। এতে জরাজীর্ন ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন ৫’শ পরিবর্তে প্রায় দেড় হাজার আশ্রয়ান কেন্দ্রের বাসিন্দারা। পর্যন্ত টিউবওয়েল, টয়লেট ও নাগরিত সুযোগ সুবিধা না থাকায় মানবেতন দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
সম্প্রতি আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে। এদের মধ্যে বড়াইপুর আশ্রায়ন কেন্দ্রের জাহাঙ্গিরের স্ত্রী মিনারা বেগম বলেন, ২০ বছর আড়ে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান হয়েছে কিন্তু তা আর মেরামত হয়নি, আমরা বহু কষ্টে বসবাস করছি, কিন্তু আমাদের কষ্ট কেউ দেখেনা।
মালেকের স্ত্রী নারগিস বেগম বলেন, টিউবওয়েল নেই, টয়লেক নেই একটি পরিবারে /৪টি পরিবার বসাবাস করছি, সরকারি জায়গায় থাকলেও আমাদের কস্টের শেষ নেই।
আরেক বাসিন্দা নার্গিস বলেন, তার ঘরে একটি পরিবার থাকার কথা থাকলেও চারটি পরিবার একসাথে গাদাগাদি করে থাকে। আরো ঘর থাকলেও অনেক ভালো হতো।
ফারুকের স্ত্রী সাহেরা বেগম বলেন, আমরা ভূমিহগীন, সরকার আমাগো থাকতে দিছে, কিন্তু আমরা বছরের পর বছর কষ্ট করে থাকছি, পুকুর থাকলেও নেই ঘাটনা, দু’একটি টিউবওয়েল আছে, তাও নষ্ট।
৫নং ব্র্যাকের ৭নং ঘরের জোসনা বেগম বলেন, টিনের চালা ফুটো, বর্ষায় পানিতে সব ভিজে যায়, গরমে রোদের তাপেও পরিবারের সবাই কষ্ট পাচ্ছি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বড়াইপুর-১ নাম্বার ব্রাকে ৮০, রামদেবপুর-৫,৩ ও ৪ নং ৩০০ এবং রামদেবপুর-২ নং ব্রাকে ১২০সহ মোট ৫০০টি ঘর রয়েছে। এসব ঘরের বেশীরভাগ জরাজীর্ণ।
কোথায় টিনের চালা, কোথায় বেড়া, কোথায় রান্না ও থাকার ঘর কোথাও বা বেড়াবিহীন। ছোট ছোট ঘরে একাধিক পরবিারের বসাবাস। একটি পরিবারে গড়ে ৪/১০ জন সদস্য। থাকা, খাওয়া ও রান্নার জন্য পর্যন্ত জায়গা নেই।
সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর সামান্য কিছু সংস্কার করা হলেও বর্তমানে তার খুবই নাজুক অবস্থায়। এরমধ্যে আবার দুই দফা আগুনেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এসব আশ্রয়ান কেন্দ্র। ১৯৯৮ সালে আ’লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত এ আশ্রয়ান কেন্দ্রের সমস্যার দ্রুত সমাধান চান ভূমিহীন বাসিন্দারা।
এ ব্যপারে কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম নকিব বলেন, আশ্রয়ন কেন্দ্রের ঘরগুলো একাধিকবার সংস্কার ও আরো নতুন দুটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য যোগাযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেখানকার বাসিন্দারা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের জন্য আরো দুটি আশ্রয়ন কেন্দ্র, ১০টি টিউবওয়েল ও ঘাট নির্মান দরকার। তাহলে তাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো: সেলিম উদ্দিন জানান, সম্প্রতি আমরা কাচিয়া মাঝের চরে আশ্রয়ান কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি, সেখানে খুব শীঘ্রই ঘর মেরামত এবং নতুন আরো দুটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থপন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৬:৪৫ ৪৪১ বার পঠিত