স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মূল ভুখন্ডের ১ নম্বর মনপুরা ইউনিয়নের চৌমহনী বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙা বেড়িবাধ ও হাজির হাট ইউনিয়নের পুর্ব সোনার চরের ভাঙা বেড়িবাধঁ দিয়ে আমবশ্যার জোতে ফের জোয়ারের পানি ঢুকে ৩০ সহ¯্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার ফের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১ নম্বর মনপুরা ইউনিয়নের কুলাগাজী তালুক, কাউয়ারটেক চৌমহনী, কলাতলীচর, হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচর, চরযতিন, চরজ্ঞান, দাসেরহাট ও উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের চরনিজামসহ ৮ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পাঁচ শতাধিক পুকুরের মাছ জোয়ারের পানির সঙ্গে ভেসে গেছে। এ ছাড়া মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলীচর, ঢালচর, চরনিজাম চারপাশে কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় আমবশ্যার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় এসব চরাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে পানি ওঠানামা করছে। এসব প্লাবিত এলাকার মানুষের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান মিসেস শেলিনা আকতার চৌধুরী সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে নতুন করে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়ে এলাকার মানুষের বসতভিটা পানির নিচে ডুবে গেছে। পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে যাচ্ছে। উঠোনে ময়লা আবর্জনার পানি জমে রয়েছে। মসজিদদে মুসুল্লীরা নামাজ পড়তে পারছেননা। দুর থেকে মহিলারা খাবার পানি সংগ্রহের জন্য রাস্তার পাশে থাকা নলকূপ থেকে জোয়ারের মধ্যে পানি সংগ্রহ করছেন। বসতভিটার উঠোন ডুবে থাকার কারনে মানুষ চলাচল করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বসতঘর ডুবে থাকার কারনে তারা রান্না করতে পারছেননা। আসন্ন রোজার ঈদ আনন্দ এখন যেন ম্লান হতে চলেছে। প্রতিদিন ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ওঠানামা করছে। ঘর থেকে কোথাও বের হতে পারছেননা সাধারণ মানুষ। চারিদিকে জোয়ারের পানি থৈ থৈ করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রযেছেন। গবাদি পশুগুলো রাস্তার ওপর ও উঠোনের উঁচু জায়গায় দাড়িয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় দক্ষিণ চরযতিন জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, জোয়ারে প্রতিদিন আমাদের মসজিদ ডুবে যায়। আমরা খুব কষ্ট করে নামাজ পড়ছি। মুসুল্লীরা জোয়ারের পানি দিয়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভাটা হলে জোয়ারের পানি নেমে যায়।
পুর্ব সোনার চরের আকলিমা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে পুকুর ডুবে যাওয়ায় আমরা নলকূপের পানি দিয়ে রান্না-বান্না করছি। অনেক দুর থেকে অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে জোয়ারের পানির মধ্য দিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। আমরা কষ্টের মধ্যে আছি। ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিনযাপন করছি।
স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় এসব ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্মান না করায় সাধারণ মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। আমরা ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, চরাঞ্চলগুলোতে কোন বেড়িবাঁধ নেই। আমরা এ বিষয়গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোহাগ হাওলাদার বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আমরা পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বেকু মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মিসেস শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এম.পি’র প্রচেষ্টায় ভাঙা বেড়িবাধঁগুলো সংস্কারের জন্য রিং বেড়িবাঁধের কাজ টেন্ডাারের মাধ্যমে দ্রুত শুরু করা হচ্ছে। উপমন্ত্রী প্রতিদিন কাজের খোজখবর রাখেন। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪২:৪৩ ৪৬৩ বার পঠিত